২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলাদেশের আপত্তি সত্ত্বেও সিন্ডিকেট চায় মালয়েশিয়া

-

বাংলাদেশের জোর আপত্তির পরেও জনশক্তি রফতানিতে ‘সিন্ডিকেশন’ চায় মালয়েশিয়া। গত ১৪ জানুয়ারি এক চিঠিতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান ২৫টি বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদকে লেখা এই চিঠিতে প্রকান্তরে সিন্ডিকেশনের পক্ষে মত দেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী। কিন্তু গত ১৮ জানুয়ারি এম সারাভানানকে লেখা চিঠিতে বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। চিঠিতে তিনি গত ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের কথা উল্লেখ করেন। জনশক্তি রফতানিকারকরা বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতার পরিপন্থী। এর ফলে সিন্ডিকেশনের উদ্ভব হবে যা দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করবে।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান গত ১৪ জানুয়ারি চিঠিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীকে লিখেছেন, এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ, এটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। সমঝোতা স্মারক ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর হয়েছে এবং সে দিন থেকে কর্মী নিয়োগ স্থগিতের বিষয়টিও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
চিঠিতে এম সারাভানান আরো লিখেছেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগের বিষয়টি দ্রুত এবং স্বচ্ছ করা উভয় পক্ষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের আলোচনার সময় আপনি এ ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের প্রধান ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির (বিআরএ) মাধ্যমে ১০টি সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশী কর্মী সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় কাজ করবে। বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ২৫০টি রিক্রুটিং এজেন্সি অংশগ্রহণ করবে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে যাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের চিঠির জবাবে গত ১৮ জানুয়ারি ফিরতি চিঠি পাঠান প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। চিঠিতে বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানান তিনি। চিঠিতে জণশক্তি রফতানি দ্রুত শুরু করার ইচ্ছা ব্যক্ত করায় এম সারাভানানকে ধন্যবাদ জানান ইমরান আহমেদ। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ সব সময় স্বচ্ছ ও নিরাপদ অভিবাসনের পক্ষে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার চার্টার অনুযায়ী ও বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ অনুযায়ী বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য সুযোগ উন্মুক্ত রাখার পক্ষে যেটি দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা চুক্তিতেও উল্লেখ আছে।
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বারবার সতর্কতা সত্ত্বেও কিছু কর্মকর্তা ও কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে। পরিষদের নেতারা বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের একটি স্বার্থান্বেষী দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠী সমানভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বাংলাদেশে সিন্ডিকেশনের পক্ষে। রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্টদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া অন্যান্য দেশগুলো তাদের রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর জন্য ইন্দোনেশিয়ার এক হাজারেরও বেশি রিক্রুটিং এজেন্সি এবং নেপালের ৮৮৪টি রয়েছে। উভয় দেশের জন্য নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর কোনো অগ্রাধিকার তালিকা নেই। বাংলাদেশে অল্প কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার পীড়াপীড়ি রহস্যজনক, যা শুধু মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রভাবশালী অংশকে লাভবান করার জন্য। পুরো প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ইঙ্গিত রয়েছে বলেও আশঙ্কা তাদের। যা অল্প সংখ্যক এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো অভিবাসন খরচ কম রাখার সরকারি প্রচেষ্টা ও উদ্দেশ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। যেহেতু বাংলাদেশের প্রায় দুই হাজার বৈধ জনশক্তি রফতানিকারক রয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র ২৫ জনকে ব্যবসার জন্য অনুমতি দেয়া শুধু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং অভিবাসন-সম্পর্কিত খরচ বাড়াবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, তারা মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা এবং যেকোনো ধরনের সিন্ডিকেশনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
ওয়্যারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক বলেন, সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যর্থ হলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারো হারিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি না হলে অভিবাসন ব্যয় বাড়বে। বায়রার সাবেক সভাপতি বেনজীর আহমেদ বলেন, বায়রার সদস্যদের কর্মী পাঠানোর সুযোগ থাকতে হবে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শ্রমবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। এ বিষয়ে কোনো সিন্ডিকেট গঠন করা উচিত নয়।


আরো সংবাদ



premium cement
কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের ২৫ দিন পর উদ্ধার যুবকের লাশ উদ্ধার ভুয়া সনদ সিন্ডিকেট : কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদ ঢাকার পয়োবর্জ্য-গ্যাস লাইন পরীক্ষায় কমিটি গঠনের নির্দেশ হাইকোর্টের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার : পরিবেশমন্ত্রী সাকিবকে ডিপিএলে চান বিসিবি প্রধান নির্বাচক কাতারের সাথে যৌথ বাণিজ্য কাউন্সিল গঠনে এফবিসিসিআইয়ের চুক্তি টি-২০ খেলতে সিলেটে পৌঁছেছে ভারতীয় নারী ক্রিকেট দল খুলনায় হিটস্ট্রোকে এক ব্যক্তির মৃত্যু ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কী বলল যুক্তরাষ্ট্র? জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য বাংলাদেশের প্রাথমিক দল ঘোষণা বৃষ্টির জন্য রাজশাহীতে ইসতিসকার নামাজ আদায়

সকল