১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সাধারণ রোহিঙ্গাসহ জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্ন

ভাসানচরের মতো ভবনের জন্যই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বারবার আগুন?

-

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও ভাসানচরের মতো বহুতল ভবন নির্মাণের চাপ সৃষ্টির জন্য আগুন লাগানোর নাশকতা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এমন তথ্য পেলেও স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় কিছুটা আড়াল করার চেষ্টা চলছে। চলতি মাসেই ক্যাম্পে তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করোনার বিশেষায়িত ৭০ শয্যার একটি হাসপাতালসহ পুড়ে গেছে রোহিঙ্গাদের সাড়ে ছয় শ’ ঘর। নাশকতার পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারও আগুন লাগার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবির কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং মেগা ক্যাম্প। এখানকার ২৬টি আশ্রয়শিবিরে নতুন-পুরনো মিলে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। তাদের বসবাসের জন্য রয়েছে দেড় লাখের বেশি ঘর, যেগুলো বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে নির্মিত। কিন্তু কয়দিন যেতে না যেতেই কোনো না কোনো ক্যাম্পে আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। নতুন বছরের শুরুতে ১৫ দিনের ব্যবধানে তিনটি আগুনের ঘটনা ঘটে উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে। সাধারণ রোহিঙ্গারা এসব ঘটনাকে শুধুমাত্র দুর্ঘটনা মনে করছে না। এমন পরিস্থিতিতে নিরীহ রোহিঙ্গারা পড়েছে অস্বস্তিতে।
ক্যাম্প-৫ এর বাসিন্দা আইয়ুব বলেন, রাতের ২টার সময় তো কেউ রান্না করে না। অন্য কেউ দুশমনি করে আগুনটা লাগিয়ে দিয়েছে। রাত ২টায় কেউ কাজকর্মও করে না। কিন্তু কে বা কারা আগুন দিয়েছে এটা জানাতে পারেননি তিনি। বি ব্লক-২ এর বাসিন্দা ইলিয়াছ বলেন, ঘুমের সময় আগুন লাগাটা বুঝতে পারছি না। কেউ রাজনীত করে আগুন লাগাচ্ছে, নাকি কেউ দুশমনি করছে এটা বুঝতে পারছি না। একই ক্যাম্পের সাইফুল বলেন, বারবার আগুন ধরছে এবং সেটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কারণ বাঁশ ও ত্রিপলের সব ঘর, একটার সাথে একটা লাগোয়া। একই ক্যাম্পের বাসিন্দা ছৈয়দ আলম বলেন, রাতে কেউ আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। কারা এসব করেছে তাদের তো কোনো হদিস পাচ্ছি না। আরেক রোহিঙ্গা নুর আহমেদ বলেন, নতুন করে ঘর যদি লোহা দিয়ে বেঁধে দেয় ভালো হবে। ইট দিয়ে যদি গাঁথুনি করে ঘর বাঁধে তাহলে আর এসব ঘরে আগুন ধরবে না।
এ দিকে ক্যাম্পে তিনটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু পুড়ে গেছে সাড়ে ছয় শ’ বসতি। সবশেষ ক্যাম্প ৫-এ মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে আগুন লাগে। তবে সবকিছু মিলিয়ে এসবের পেছনে নাশকতা এবং রহস্য রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিস।
উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পের বসতিগুলো বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি। এখানে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী করার জন্য হয়তো আন্তর্জাতিক কোনো ষড়যন্ত্র চলছে। যাতে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে দেয়া যায়। এখানে একটি বিষয় খুবই রহস্যজনক। কারণ চলতি মাসে তিনটি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এতে সাড়ে ৬শ’ বসতি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিন্তু একজন রোহিঙ্গাও হতাহত হয়নি। তার মানেই আগুন ধরিয়ে দেয়ার আগে হয়তো রোহিঙ্গাদের বলে দেয়া হয়, এখানে আগুন দেয়া হবে। বিষয়টি পরিকল্পিত এবং রহস্যময়। বারবার অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলেও জানান এই জনপ্রতিনিধি।
ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, নোয়াখালীর ভাসানচরে দারুণ স্থাপনা করা হয়েছে। অনেক সুযোগ-সুবিধায় সেখানে বসবাস করছে অনেক রোহিঙ্গা। হয়তো রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফের এসব ক্যাম্পে আধুনিক স্থাপনা করে দেয়ার জন্য বারবার আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে।
আর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন বলছে, অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো দুষ্কৃতকারীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উখিয়াস্থ ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক মো: নাঈমুল হক বলেন, এর পেছনে জড়িত কোনো দুষ্কৃতকারী শনাক্ত হলে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এর আগে গেল বছরের ২২ মার্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে। এই আগুনে পুড়ে যায় ক্যাম্পে ১০ হাজার বসতি আর মারা যায় ১১ জন রোহিঙ্গা।


আরো সংবাদ



premium cement