২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আলোচনার প্রস্তাব শাবি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাখ্যান

৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা রাষ্ট্রপতিকে খোলা চিঠি
-

পুলিশি হামলার প্রতিবাদ এবং উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভে গতকাল মঙ্গলবারও উত্তাল ছিল দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। টানা ষষ্ঠ দিনের মতো সকাল ১০টায় বিভিন্ন হল থেকে একের পর এক মিছিল নিয়ে গোলচত্বরে জড়ো হয়। পরে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে মিছিলসহ উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে অবস্থান নেন। এ সময় আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা ‘এক দুই তিন চার ভিসি তুমি গদি ছাড়’, সহ বিভিন্ন সেøাগানের মাধ্যমে তারা ভিসির পদত্যাগ দাবি করেন।
এ দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে দেয়া আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা সমস্যার আশু সমাধান দাবি করে রাষ্ট্রপতিকে খোলা চিঠি দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা : পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে শাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা দুই-তিন শ’ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে এসএমপি জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক মো: আব্দুল হান্নান বাদি হয়ে এই মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: আবু খালেদ মামুন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শাবির ড. ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ২০০-৩০০ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী পুলিশের কর্তব্য-কাজে বাধা দিয়ে সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায়। এতে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখসহ ১০ জন পুলিশ আহত হন বলে উল্লেখ করা হয় মামলায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওইদিন পুলিশ ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ৩২ রাউন্ড শর্ট গানের গুলি ছুড়ে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। তবে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব বলেন, পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করেছে। গুলি ছুড়েছে। আমাদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ দিকে মামলা প্রত্যাহার না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গত রাত সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান : সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আলোচনার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। গতকাল বিকেলে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে উপস্থিত হয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসি কুমার দাশসহ সমিতির অন্যান্য নেতা। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। তারা নানা স্লোগান দিতে দিতে শিক্ষক সমিতি নেতাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
রাষ্ট্রপতির কাছে খোলা চিঠি : বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় পোস্ট অফিসের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর লিখিত খোলা চিঠিটি পোস্ট করেন আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা। চিঠি পাঠানোর ৪৮ ঘণ্টার ভেতরে উপাচার্যের পতন নিশ্চিত না হলে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান। এরপর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রোড পেইন্টিং করেন তারা।
গণস্বাক্ষর সংগ্রহ : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ এবং উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শাবিপ্রবিতে চলছে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি। সকাল থেকে ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখ গোল চত্বরের পাশেই এই গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি চলছে। ইতোমধ্যে দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। এ ছাড়াও সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক হোসেন, সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা। তারা গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে সই দিয়ে আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, এক ব্যক্তির হাতে বিশ্ববিদ্যালয় জিম্মি হতে পারে না। সব দাবি যৌক্তিক, তা পূরণে শিক্ষার্থীদের কিছুটা সময় দেয়ার আহ্বান জানান। একই সাথে আলোচনার মাধ্যমে যাতে সমাধানে পৌঁছা যায় সেই পথ খোলা রাখারও আহ্বান জানান তারা।


আরো সংবাদ



premium cement