২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
১৩ বিচারপতি, ৭৯ বিচারকের করোনা

ভার্চুয়াল আদালতে আগাম জামিন বন্ধ করা যাবে না : সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক

-

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টসহ আদালত অঙ্গনে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে হাইকোর্টের ১৩ জন বিচারপতি ও নিম্ন আদালতের ৭৯ জন বিচারক আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এ ছাড়া অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ (এস কে মোরশেদ) করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া আরো কয়েকজন আইন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ জানিয়েছেন। এ দিকে সুপ্রিম কোর্টের অনেক আইনজীবীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ও জাতীয় আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ মো: খসরুজ্জামান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, সোমবার তিনি করোনা পজেটিভের রেজাল্ট পেয়েছেন। তবে শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ আছেন এবং বাসাতেই আইসোলেশনে আছেন।
এ দিকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার থেকে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে ভার্চুয়ালি বিচারকাজ পরিচালিত হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। গতকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, চার দিকে যেভাবে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে হয়তো আবারো ভার্চুয়ালি যেতে হবে। হাইকোর্ট বিভাগে কয়েকজন এবং নিম্ন আদালতেও কিছু বিচারক আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক স্টাফও আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা হয়তো আবার ভার্চুয়াল কোর্টে ফিরে যাবো। ভার্চুয়াল কোর্টে যে মামলা নিষ্পত্তি কম হয়, তা নয়।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের অনেক আইনজীবী ও বিচারক ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ওমিক্রনের ভয়াবহতা এখনো বোঝা যাচ্ছে না তবে দ্রুত এটার সংক্রমণ ঘটছে আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যে। আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল, সিনিয়র মেম্বার শাহ মো: খসরুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল করোনা আক্রান্ত। আইনজীবীদের মধ্যে কম তবে আইন কর্মকর্তাদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি আগেই বলেছেন, পরিস্থিতি খারাপ হলে তারা হয়তো ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যাবেন। গতকাল বেলা দেড়টায় এ বিষয়ে মতামত নেয়ার জন্য প্রধান বিচারপতি ডেকে ছিলেন। আমি বলেছি, করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এবং বিচারক ও আইনজীবীরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এই অবস্থায় যদি আদালত ভার্চুয়াল করা হয় তা হলে আমি কয়েকটি বিষয় বলেছি, তার একটি হলো, আগাম জামিন কোনোভাবে বন্ধ করা যাবে না। আদালতের পূর্ণ কর্মঘণ্টা ব্যবহার করতে হবে, এফিডেভিটের ক্ষেত্রে অনেকসময় দেরি হয়, যারা এফিডেভিট করেন তাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমি প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তিনি বলেন, ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থার সাথে ইতোমধ্যে আইনজীবীরা মানিয়ে নিয়েছেন। যদি কোনো কারণে আদালতের প্রত্যেকটি বিচারের অধিক্ষেত্র খর্ব না করা হয় এবং যে আদালত যে মামলার বিচার করতেন সেগুলো যদি ভার্চুয়ালি একই রকম থাকে তাহলে আইনজীবীদের খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
এ দিকে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, নিম্ন আদালতের ৭৯ জন বিচারক করোনায় আক্রান্ত। অন্য দিকে হাইকোর্টের কয়জন বিচারপতি করোনায় আক্রান্ত সে বিষয়ে সঠিক সংখ্যা জানেন না বলে তিনি জানান।
অ্যাটর্নি জেনারেল ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আক্রান্ত : সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, রোববার করোনা টেস্ট করলে রেজাল্ট পজিটিভ আসে। এখন বাসাতেই আছি। সবাই দোয়া করবেন। শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন বলে জানান তিনি। অন্য দিকে গতকাল অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ জানান, সোমবার করোনা টেস্টে রেজাল্ট পজিটিভ এসেছে। হাতিরপুলের বাসায় আইসোলেশনে আছি।
করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ১৬ জানুয়ারি থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত ভার্চুয়ালি সপ্তাহে চার দিন চলবে বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহের প্রতি রোববার, সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার আড়াইটায় শুধু তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে আপিল বিভাগের মামলাসংক্রান্ত জরুরি বিষয়াদির শুনানি গ্রহণ করবেন।
করোনা সংক্রমণের সময় ভার্চুয়ালি এবং ক্ষেত্রবিশেষে শারীরিক উপস্থিতিতে আদালতের কার্যক্রম চলে আসছিল। এর মধ্যে গত ২৯ নভেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বলা হয়, প্রধান বিচারপতি জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ১ ডিসেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করে শারীরিক উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এরপর ১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে শারীরিক উপস্থিতিতে কার্যক্রম শুরু হয়।


আরো সংবাদ



premium cement