জেদ্দায় ওআইসি দফতরে ইরানি কূটনীতিকরা, রিয়াদে দূতাবাস খোলার প্রস্তুতি
- আলজাজিরা ও তাসনীম নিউজ
- ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০১:৪০
ছয় বছর পর সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদর দফতরে ইরানের পক্ষ থেকে তিন কূটনীতিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘ বিরতির পর ওআইসিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবারো ইরানের কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হলো। তেমনি রিয়াদে দূতাবাস ফের চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান গত ২৩ ডিসেম্বর জানিয়েছিলেন, ওআইসিতে নিযুক্ত তিন ইরানি কূটনীতিককে ভিসা দিতে সম্মত হয়েছে সৌদি আরব। ইরাকের মধ্যস্থতায় সৌদি আরবের সাথে ইরানের চার দফা আলোচনা শেষে ওই মতৈক্য অর্জিত হয় বলে আবদুল্লাহিয়ান জানান।
তিনি ওই দিন ইরান সফররত ইরাকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হোসাইনের সাথে তেহরানে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এ ছাড়া ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ওই তিন কূটনীতিক সৌদি আরবের ভিসা গ্রহণ করেছেন। তিনি জেদ্দায় ইরানি কূটনীতিকদের উপস্থিতিকে ‘ভালো ও ইতিবাচক’ ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। কয়েকদিন আগে ওই তিন ইরানি কূটনীতিক ইসলামি সহযোগিতা সংস্থায় যোগ দেয়ার জন্য জেদ্দা পৌঁছেছেন।
কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ছয় বছর পর ইরান ও সৌদি আরব ধীরে ধীরে সমঝোতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আবার দূতাবাস চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইরানের পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি কমিশনের সদস্য জলিল রহিমি জাহানাবাদী সম্প্রতি একটি টুইটে বলেন, দুই দেশ তাদের ভাঙা সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তেহরান ও মাশহাদে সৌদি কূটনৈতিক মিশনে হামলার পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে সৌদি আরবে শিয়া আলেম শেখ বাকির নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে দূরত্ব আরো বৃদ্ধি পায়।
এ অবস্থায় ইরাকি সরকারের মধ্যস্থতায় গত বছরের এপ্রিল থেকে বাগদাদে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে চার দফা আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনায় ভাঙা সম্পর্ক মেরামতের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
ইরানের পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি কমিশনের সদস্য জলিল রহিমি জাহানাবাদী বলেন, দূতাবাস খোলার মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত হতে যাচ্ছে। দুই পক্ষের সম্পর্কোন্নয়ন আঞ্চলিক উত্তেজনা কমাতে এবং মুসলিম বিশ্বের সংহতি বাড়াতে অবদান রাখতে পারে। জাহানাবাদী জানান, দুই পক্ষের এই আলোচনা ইরানের আগের সরকার দ্বারা শুরু হয়েছিল এবং ইব্রাহিম রাইসির নেতৃত্বে নতুন প্রশাসনের অধীনে অব্যাহত ছিল।
এ মাসের শুরুতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছিলেন, ইরানের নির্বাচনের জন্য সৌদি আরবের সাথে যে আলোচনা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল, তেহরান আবার সে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।
গত সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইদ খাতিবজাদেহ বলেছেন, তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে পরবর্তী দফা আলোচনা এজেন্ডায় রয়েছে। লেবানন বা ইয়েমেনের মতো বিষয়গুলো আলোচনার ফলাফলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, সে বিষয়ে এই মুখপাত্র বলেন, ইরান মতপার্থক্য সত্ত্বেও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এর আগে গত বছরের জুনে নির্বাচনে জয়লাভের পর তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট রাইসি বলেছিলেন, সৌদি আরবের সাথে সংলাপ ও দূতাবাস আবার চালু করার ক্ষেত্রে তেহরানের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইরানিরা ওমরাহর জন্য সৌদি আরবে যাবে।