২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে সবজি ও ফল রফতানি

আধুনিকায়ন হচ্ছে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজ যুক্ত হচ্ছে আন্তর্জাতিকমানের ল্যাব

নিজস্ব জনবল কাঠামোতে থাকবে দক্ষ জনবল; ২৫-৩০ শতাংশ রফতানি বাড়বে; ১৫৬ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান
-

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ হতে তাজা ফলমূল ও শাকসবজি রফতানি হয়ে আসছে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাতকৃত খাদ্যের চাহিদাও দিনকে দিন বাড়ছে। পৃথিবীজুড়ে এ বাজারের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সাধারণত আমদানিকারক দেশের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যপণ্য সরবরাহ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে আমদানিকারক দেশগুলো কৃষিপণ্য নিতে গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস-জিএপি (গ্যাপ) অনুসরণের শর্ত দিচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলো ইতোমধ্যে এই শর্ত দিয়েছে। অন্য দেশগুলোও গ্যাপ অনুসরণে গুরুত্ব দিচ্ছে। কন্ট্রাক্ট ফার্ম বা চুক্তিবদ্ধ কৃষকের কাছ থেকে ফল ও সবজি সংগ্রহ করে যথাযথভাবে মোড়কীকরণের পর তা বিদেশে পাঠানোর জন্য দরকার আধুনিক প্যাকিং হাউজ ও ল্যাবরেটরি। কিন্তু বাংলাদেশে এটি এখনো অনুপস্থিত। ২০১৭ সালে শ্যামপুরের সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজ চালু হলেও এখনো এটির কার্যক্রম চলছে সনাতন পদ্ধতিতে। ল্যাবের জন্য আনা তিন বছর ধরে প্রায় ৬০ কোটি টাকার মেশিনারিজ পড়ে থাকলেও প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবলের অভাবে এটি চালু করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় এই ল্যাবের আধুনিকায়নে ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আরেকটি প্রকল্প শুরু করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্যামপুর সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজকে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবে পরিণত করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ পেয়েছেন ড. জগত চাঁদ মালাকার। তবে এখনো এই প্রকল্পের জন্য অর্থছাড় হয়নি বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ইউরোপসহ অনেক দেশেই কৃষিপণ্য রফতানির পর সবজি বা ফলমূলে পোকামাকড় ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়ায় তা ফেরত কিংবা সে দেশেই ডাম্পিং হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাশিয়ায় মানহীন আলু ও ইউরোপে পান রফতানির পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ হয়ে যায়। তা এখনো চালু হয়নি। মানসম্পন্ন ফল ও সবজি রফতানির ক্ষেত্রে সবদেশই গ্যাপ অনুসরণে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই অবস্থায় সরকার শ্যামপুরে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজকে আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। একই সাথে ঢাকা অদূরে পূর্বাচলে আধুনিক প্যাক হাউজ স্থাপনের জন্য দুই একর জমিতে হবে বিশ্বমানের সর্বাধুনিক প্যাক হাউজ এবং অ্যাক্রিডিটেশন ল্যাবরেটরি। কৃষিপণ্যের রফতানি বৃদ্ধিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি নির্মিত হলে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশে বাংলাদেশের ফলমূল ও শাকসবজি রফতানি বহুগুণ বাড়বে এবং কৃষি দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।
তবে, কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পূর্বাচলের জমিতে আধুনিক প্যাক হাউজ স্থাপন প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। যেহেতু শ্যামপুরে প্যাকিং হাউজটির কার্যক্রম চলমান, তাই এটির আধুনিকায়নে ল্যাবটি আরো আধুনিকায়ন করে রফতানি কার্যক্রম গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টিন উইংয়ের আওতায় ২০১৯ সালের জুনে শ্যামপুর সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজে একটি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়। তিন বছর আগে সেখানে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ফাইটোসেনেটারি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় ৪৫ ধরনের ৭০টি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। সেই সাথে বেশ কিছু কর্মকর্তা ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই এখন পদোন্নতি ও বদলিজনিত কারণে বিভিন্ন দফতরে চলে গেছেন। কয়েকজন থাকলেও তারা মেশিন পরিচালনায় অভিজ্ঞ নন। আবার জনবল সঙ্কট থাকায় অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের রফতানি বাড়াতে শ্যামপুরে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ ল্যাবরেটরিকে ‘আন্তর্জাতিক মানে’ উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেই লক্ষ্যে ১৫৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চলতি অর্থবছর থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে হবে। অর্থাৎ সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজে আধুনিক ল্যাব যুক্ত হতে আরো দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে।
শ্যামপুরের সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজের উপপরিচালক (উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র) মো: লুৎফর রহমান সিকদার নয়া দিগন্তকে বলেন, বিভিন্ন রকমের শাকসবজি-ফলমূল দেশের বাইরে যায়। বিভিন্ন ড্রাই ফুড যায়। সেগুলোর টেস্ট করা এবং এগুলোর মধ্যে ক্ষতিকর কোনো উপাদান আছে কি না সেটি টেস্ট করার জন্য ল্যাবটি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ল্যাব চালানোর জন্য যে এক্সপার্ট দরকার, প্রশিক্ষিত জনবল দরকার, রি-এজেন্ট, কেমিক্যাল দরকারÑ এখানে কিছুই নেই। তিনি বলেন, ফল-সবজি রফতানির সবক্ষেত্রে টেস্ট দরকার হয় না। যেগুলোর দরকার হয় এক্সপোর্টাররা বাইরের বেসরকারি ল্যাব থেকে সেগুলোর টেস্ট করে নিয়ে আসেন। সরকার এটি আরো আধুনিকায়নে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। শুনলাম এখন যে ল্যাব আছে, সেটি ভেঙে ঠিকঠাক করা হবেÑ এটা আরো আধুনিক করা হবে। এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে সেটা ঠিক করা হবে। এ বিষয়ে এখনই কথা বলতে চাননি এ সংক্রান্ত প্রকল্প পরিচালক ড. জগত চাঁদ মালাকার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: বেনজীর আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, ফল ও সবজিতে অনেক ধরনের রোগ বালাই থাকে। এখন যেটা আছে সেটা কমপ্লিট হয়নি। কমপ্লিট ল্যাব করতে হলে আরো কিছু লাগবে। আমরা আরো আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ল্যাব স্থাপন করছি। যেখানে এক সাথে পাঁচটি রোগ বালাই-কেমিক্যাল পরীক্ষার সুবিধা থাকবে। পাঁচটি রুমে পাঁচটি ল্যাব করা হবে। তিনি বলেন, বদলি-পদোন্নতির কারণেও দক্ষ জনবলের সঙ্কট হয়। তাই এবার আমরা উদ্যোগ নিয়েছি যে, যারা প্যাকিং হাউজে ল্যাবকেন্দ্রিক থাকবেন তারা সেখানে স্থায়ীভাবেই থাকবেন। এ জন্য আমরা স্থায়ী জনবল কাঠামোতে যাচ্ছি। ল্যাবরেটরি পরিচালনায় যে ধরনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন তাই থাকবে সেখানে। আন্তর্জাতিক ল্যাবে রূপ দিতে এই জনবলকে সেভাবেই প্রশিক্ষিত করা হবে। নিজস্ব জনবল কাঠামো হচ্ছে। যাতে এসব জনবলের কাউকে আর অন্যত্র বদলি হয়ে যেতে না হয়।
জানা যায়, নতুন প্রকল্পের আওতায় উদ্ভিদ সংগনিরোধ কার্যক্রমে পণ্যে বালাই শনাক্ত করতে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি তৈরির কথা বলা হয়েছে। একই প্যাকিং হাউজের ল্যাবরেটরি ভবনের ৩৩১৫ বর্গফুট সম্প্রসারণ ও ভৌত অবকাঠামো মেরামত করা হবে। ল্যাবরেটরিতে আবারো মাইকোলজি, ব্যাকটেরিওলজি, ভাইরোলজি, নেমাটোলজি, মাইক্রোবায়াল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সারা বিশ্বে রফতানি বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক মানের উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরি তৈরি করাই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এই প্রকল্পের আওতায় ১৮০ জন কর্মকর্তাকে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ ও ছয়জন কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, গ্রিস, জার্মানি, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, মালয়েশিয়া, হংকং, শ্রীলঙ্কাসহ প্রায় ৪৩টি দেশে তাজা শাকসবজি ও ফলমূল রফতানি হয়ে থাকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তাজা শাকসবজি ও ফলমূল এ দেশ হতে রফতানি হয়েছে। এ ছাড়া ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের আলু রফতানি হয়েছে। শাকসবজি ও ফলমূল রফতানির এই ধারাকে বেগবান করতে আধুনিক প্যাক হাউজ সুবিধা এবং অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা একান্ত জরুরি।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের বিশাল বাজার আছে। বর্তমানে যে বাজার, তা আরো বাড়াতে হবে। রফতানি বাড়াতে হলে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাব দরকার। সেটাই এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিশ্চিত করার তাগিদ রয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর। এ জন্য দেশে কৃষিজাত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মানের এই ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। এই ল্যাবটি স্থাপিত হলে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে কৃষি পণ্যের রফতানি প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement
বান্দরবানের ৩ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজে মুসুল্লিদের ঢল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০টি সহযোগিতা নথি সই ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’

সকল