২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ও অর্থনীতি সমৃদ্ধি প্রকল্প

প্রতিদিন গড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয় পরামর্শকেই

কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য ৫১৪ কোটি টাকা; মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মাসে ৮৯ লাখ টাকা; গবেষণায় খরচ মাসে ১৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা
-

বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতি প্রসারের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার প্রকল্পে শুধু পরামর্শকের একটি খাতেই প্রতিদিন খরচ হবে তিন লাখ চার হাজার টাকা। ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ও অর্থনীতি সমৃদ্ধিকরণ শীর্ষক এই প্রকল্পে আরো দুটি খাত মিলে তিনটি খাতে পরামর্শক ব্যয় ৩০২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। তবে প্রকল্পে কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ৫১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে প্রতি মাসে খরচ ৮৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর প্রশিক্ষণ ও গবেষণায় খরচ মাসে ১৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ডিজিটাল গভর্নমেন্ট প্রকল্পে কোভিড খাতে বিরাট অঙ্কের এই অর্থ ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ পরিকল্পনা কমিশনে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের একনেক বিভাগ থেকে জানা গেছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের দেয়া প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতি প্রসারের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার ধারাবাহিকতায় সরকারকে ডিজিটাল অর্থনীতিবান্ধব করার সম্পূরক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এ সব কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে দেশীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিল্পের প্রসার হবে। বিশ্বব্যাংকের ঋণে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ দুই হাজার ৫০৭ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদি এই ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ও অর্থনীতি সমৃদ্ধিকরণ প্রকল্পটির সমাপ্তিকাল ধরা হয়েছে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর। গত ২০২০ সালের ২৩ মে এই ঋণ চুক্তির ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের সাথে অর্থায়ন চুক্তি হয়।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, ডিজিটাল অর্থনীতির পরিবেশ তৈরি এবং বিকাশের জন্য নীতিমালা বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদান। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরি। তাদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। ডিজিটাল অর্থনীতি বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন ও স্টেকহোল্ডার ব্যবস্থাপনা। সরকারের ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধি। ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি স্থাপন। পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এসএমই শিল্পের ডিজিটালাইজেশন, প্রকল্পের মাধ্যমে উদীয়মান প্রযুক্তি বিষয়ে ২০ হাজার যুবক ও যুব মহিলাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা। দেশের ৬৪ জেলার সকল সিটি করপোরেশনে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রস্তাবনার ব্যয়ের হিসাব থেকে জানা গেছে, ব্যক্তি পরামর্শক খাতে প্রতি মাসে প্রায় সোয়া তিন লাখ টাকা হিসাবে দুই হাজার ৩৭৬ জন মাসে মোট ব্যয় ৭৪ হাজার ৪৩ লাখ টাকা। আর অন্যান্য ফার্ম পরামর্শক খাতে প্রতি দিন খরচ হবে তিন লাখ টাকার বেশি। মোট ব্যয় হবে ১১০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ফার্ম সেবা খাতে ব্যয় ১১৭ কোটি ২৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এখানে প্রতি মাসে ব্যয় তিন লাখ টাকার বেশি। ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য প্রশিক্ষণ এবং গবেষণায় ব্যয় ৪২ মাসের জন্য ৬৬৮ কোটি ৫৪ লাখ ২২ হাজার টাকা। এতে মাসে ব্যয় পড়ছে ১৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বরাদ্দ ৫১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
আর ২৫টি আইসিটি যন্ত্রাংশ, সফটওয়্যার, অফিস সরঞ্জমাদি ও যানবাহন মিলে খরচ ধরা হয়েছে ৬৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। বেতন ভাতাদি ও প্রশাসনিক ব্যয় তিনজনের ৩৫ কোটি ৩৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ৫৭ মাসে উৎসব অনুষ্ঠান, সম্মানী, সরবরাহ ও ভ্রমণ, যানবাহন ভাড়া ব্যয় ১১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ৫৭ মাসে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ খরচ ৫৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। প্রতি মাসে এই খাতে খরচ ৯৫ লাখ টাকার বেশি। ৫৭ মাসে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে ব্যয় ৫১ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে খরচ ৮৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ বলছে, বিভিন্ন খাতের মধ্যে যে দ্বৈধতা ছিল তা পরিহার করে প্রয়োজনের নিরিখে অঙ্গ ও ব্যয় নির্ধারণ করার পরই এই ব্যয় প্রাক্কলন। পিইসি সভা থেকে দ্বৈধতা পরিহার করতে বলা হয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন অঙ্গের থোক বরাদ্দগুলোকে যথাসম্ভব পরিহার করার জন্য পিইসি থেকে বলা হয়। পাশাপাশি পরামর্শক খাতে খরচ যৌক্তিকপর্যায়ে রাখার জন্য একটি ব্যয় কমিটি থেকে সুপারিশ করা হয়। বলা হচ্ছে সেই ব্যয়ের আলোকেই খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement