২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১৬ হাজার কোটি টাকায় পিপিপিতে ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে

পিপিপিতে মেগা প্রকল্পে বাস্তবায়ন ব্যর্থতার পর
-

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক ব্যর্থতার পরও আবার সেই একই ধারায় আরো একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ হাতে নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটির নাম,‘ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এক্সপ্রেসওয়ে’ প্রকল্প। বেসকারি সহায়তায় এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৩৮৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দাবি করা হয়েছে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত মাসে অনেক দিন আগে হাতে নেয়া পিপিপি আওতায় দুটি প্রকল্প বাতিল করে দেয়া হয়েছিল। কারণ সেখানে বেসরকারি কোনো উদ্যোক্তা পাওয়া যায়নি। বাতিল হওয়া একটি প্রকল্প ছিল চট্টগ্রামের লালদিয়া বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) আওতায় নির্মাণ করার কথা ছিল। ছয় বছরে এই প্রকল্প ব্যয় করা হয়েছিল ১১ কোটি টাকা। কিন্তু গত মাসে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত্র মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়া হয়।
ইস্ট-ওয়েস্ট এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের বিষয়ে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের সর্ববৃহৎ ও ঘনবসতি নগরী রাজধানী ঢাকায় জনসংখ্যা দ্রæত বাড়ছে। এ বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যার চলাচলের জন্য ঢাকা শহরের বিদ্যমান সড়ক নেটওয়ার্ক প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বিশেষত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম-সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করতে হলে ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে হয়। এর ফলে ঢাকা মহানগরীতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালে ‘ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে। প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়েটি ‘রিভাইজড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (আরএসটিপি)’-এ উল্লিখিত আউটার রিং রোডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার বালিয়াপুর থেকে শুরু হয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা, বন্দর উপজেলা হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁও উপজেলার লাঙ্গলবন্ধে শেষ হবে। এ প্রকল্পের আওতায় মোট ৩৯.২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ২৪.৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ র্যাম্প নির্মাণ করা হবে। এটি নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা শহরে প্রবেশ না করে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এবং চট্টগ্রাম-সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলে সরাসরি চলাচল করতে পারবে। ফলে ঢাকা ও এর পার্শ¦বর্তী এলাকার যানজট অনেকাংশে কমবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী চার লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয়ের পরিমাণ ১৬ হাজার ৩৮৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং প্রকল্পটি অর্থনৈতিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সমীক্ষায় অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী নিট প্রেজেন্ট ভ্যালু (এনপিভি) ৯৪৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা, বেনিফিট কস্ট রেসিও (বিসিআর) ১.১৭ এবং ইন্টারনাল রেট অব রিটার্ন (আইআরআর) ১৩.৩ শতাংশ।
সূত্র জানায়,প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা যায় মর্মে পিপিপি কর্তৃপক্ষ মতামত দিয়েছে। প্রকল্পটি ‘প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইন ফর পিপিপি প্রজেক্টস ২০১৮’ এবং ‘পলিসি ফর ইমপ্লিমেন্টিং পিপিপি প্রজেক্ট থ্রো গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট পার্টিসিপেন্ট ২০১৭’ অনুসরণ করে পিপিপি-এর যেকোনো একটি মডেলে অনুমোদনক্রমে (বিওওটি,বিওটি) বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলে সমীক্ষায় বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২টি বিদেশী বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে এই প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব পাওয়া গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩১৬ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। উক্ত জমির দাম, স্থাপনা ও অন্যান্য ক্ষতিপূরণ সরকারি খাত থেকে জোগান দেয়া হবে। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় বিদ্যমান পরিসেবাগুলো স্থানান্তরের ব্যয়ও সরকারি তহবিল থেকে করা হবে। এসব ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে একটি সাপোর্ট টু পিপিপি প্রজেক্ট বা লিক প্রজেক্ট গ্রহণ করা হবে।
সূত্র জানায়, প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইনস ফর পিপিপি প্রজেক্টস ২০১৮-এর নির্দেশনা অনুযায়ী ‘ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবানের অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আগামীকাল বুধবার সভাটি অনুষ্ঠিত হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল