২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঢেলে সাজাচ্ছে ঢাবি

-

আবাসন, গ্রন্থাগারে সিট, শ্রেণিকক্ষ, বিশ্বমানের গবেষণাগার সঙ্কটসহ নানা সমস্যা নিয়ে শতবর্ষে দাঁড়িয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শতবর্ষে এসে এসব সঙ্কট কাটাতে নতুন এক মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মহাপরিকল্পনায় গবেষণা ও শিক্ষার গুণগত মানের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার নতুন যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় তা এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদনের অপেক্ষায়। জাগো নিউজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে গত বছর এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তিনটি ধাপে মোট ১৫ বছরে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। যেখানে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তিন ধাপে মোট ৯৭টি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব আনা হয়েছে। এতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনের সংখ্যা ১৭টি। আবাসনের ক্ষেত্রে ছাত্রীদের জন্য ৮টি, ছাত্রদের ১৬টি, হাউজ টিউটরদের ২২টি, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ১২টি ও কর্মচারীদের জন্য ৯টি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে আরো ১৩টি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব। এর মধ্যে প্রথম ধাপে তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মহাপরিকল্পনার প্রথম ধাপেই শিক্ষার্থীদের পড়ার জন্য ১২ তলাবিশিষ্ট একটি সুউচ্চ ভবন নির্মাণের প্রস্তাব আনা হয়েছে, যাতে রক্ষা করা হবে গ্রন্থাগার সেবার মান এবং বিদ্যমান কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ঐতিহ্য। এ ছাড়া প্রস্তাবনায় রয়েছে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ১০ তলাবিশিষ্ট এমবিএ টাওয়ার, আইএসআরটি ও ফার্মেসি বিভাগের জায়গায় একটি ১০তলা ভবন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের জন্য তিনতলা ভবন, চারুকলায় একটি পাঁচতলা ভবন এবং নীলক্ষেতের প্রেস ভবন ও পুলিশ ফাঁড়ি ভেঙে ১১ তলা অ্যাকাডেমিক ভবন ও পাঁচতলা প্রেস ভবন।
শিক্ষার্থীদের আবাসিক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রথম ধাপে রয়েছে নিউ মার্কেট এলাকায় শাহনেওয়াজ হোস্টেল ভেঙে ১৫তলা জয় বাংলা হল ও ১১ তলাবিশিষ্ট হাউজ টিউটর ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা।
একইভাবে শামসুন্নাহার হলে তিনটি সুউচ্চ ভবন, শহীদ অ্যাথলেট সুলতানা কামাল হোস্টেলের এক্সটেনশন হিসেবে তিনটি ভবন ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে দু’টি ভবন নির্মাণের প্রস্তাবনাও রয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ ফুলার রোডে শিক্ষকদের জন্য ১৫ তলাবিশিষ্ট রেসিডেন্সিয়াল টাওয়ার। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে তিনটি ভবন, সূর্যসেন হলের ১১তলাবিশিষ্ট দু’টি ভবন ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে তিনটি ভবন নির্মাণ। সূর্যসেন হল ও মুহসীন হলের প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে দোতলাবিশিষ্ট প্রোভিসি বাংলো নির্মাণ।
দেশের ইতিহাসের সাক্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনটিও বেশ পুরনো। ফলে মহাপরিকল্পনার অধীনে বিদ্যমান ভবন ভেঙে নতুন করে ত্রিকোণাকৃতির প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হবে বর্তমান প্রশাসনিক ভবনটির স্থানে। ত্রিকোণাকৃতির এ ভবনের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকবে ভিসি কার্যালয়, দুই পাশে দুই প্রোভিসির কার্যালয় এবং এক পাশে থাকবে কোষাধ্যক্ষের দফতর। আর ভবনের সামনে থাকবে একটি ফোয়ারা। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) দোতলা ভবন ভেঙে বহুতল ভবন তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে ডাকসু নেতাদের জন্য কক্ষসহ থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরও।
মহাপরিকল্পনার আওতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাইরের অবকাঠামোগুলোতেও রয়েছে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব। রাজধানীর গ্রিন রোডে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৬ দশমিক ১ একর জায়গার একটি অংশে বিপণিবিতান ও অন্য অংশে আইবিএ হোস্টেল রয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় স্থানটিতে বহুতল ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়েছে, যেখানে থাকবে আইবিএ হোস্টেলসহ একটি আধুনিক বিপণিবিতান ও একটি কনভেনশন হল, যা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়া পরিবহন ব্যবস্থায়ও আনা হচ্ছে নতুন পরিকল্পনা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য কার্জন হল থেকে কলাভবন পর্যন্ত আলাদা সাইকেল লেন স্থাপন করা হবে। রয়েছে বহিরাগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণেও বেশ কিছু নির্দেশনা।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রস্তাবিত সময়সীমার চেয়ে মহাপরিকল্পনাটি সমন্বিতভাবে গুণগত মান বজায় রেখে দ্রুত বাস্তবায়ন চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে মহাপরিকল্পনাটি দ্রুতই ঢেলে সাজিয়ে নতুন এক রূপ নেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বমানের গ্রন্থাগার সুবিধা, গাড়ি পার্কিং, যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন, খেলার মাঠ উন্নয়ন, সোলার এনার্জি স্থাপন, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংসহ জলাধার, সৌন্দর্যবর্ধন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, আধুনিক জিমনেশিয়াম ও আধুনিক মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন করাও মহাপরিকল্পনায় রয়েছে।
এ ছাড়া নতুন সুউচ্চ আধুনিক ভবনের পাশাপাশি সংস্কার করা হবে পুরনো বেশ কিছু ভবনও। মহাপরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হলে আমূল পরিবর্তন দেখা যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনাজুড়ে।
মহা এ কর্মযজ্ঞ ও সেটি চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান বলেন, মহাপরিকল্পনাটি একটি ভালো অনুকূল শিক্ষার পরিবেশ এবং আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো, গবেষণা, শিক্ষা পরিবেশের জন্য শক্তিশালী অনুষঙ্গ। শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আবর্তন করেই আমাদের মাস্টারপ্ল্যানটি প্রণীত। ফলে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে একটি অনুকূল বা আধুনিক পরিবেশ প্রাপ্তির লক্ষ্যে এটি কাজ করবে। অন্য দিকে এর একটি প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের জীবনমানেও। এতে শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ ঘটবে। যার মধ্য দিয়ে তাদের গবেষণার দৃষ্টিভঙ্গি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়বে।
তিনি আরো বলেন, মাস্টারপ্ল্যানটির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব প্রথমে প্রধানমন্ত্রীই অনুধাবন করেছেন। কেননা আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরামর্শ দিতেন, যেকোনো ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিকল্পনা, শিক্ষা, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এগুলোর সম্প্রসারণে যেন একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকে। মহাপরিকল্পনাটি এটিরই বহিঃপ্রকাশ। তাই গুণগত ও বৈশ্বিক মান বজায় রেখে মহাপরিকল্পনাটি কত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়টি ভাবতে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। সবাইকে একটি সমন্বিত নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।


আরো সংবাদ



premium cement