দেশে থাইরয়েড রোগীর সংখ্যা ৫ কোটি

দেশে সম্ভাব্য হরমোনজনিত থাইরয়েড রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। যার মধ্যে প্রায় তিন কোটি রোগীই জানেন না, তারা এ সমস্যায় আক্রান্ত। মাতৃগর্ভ থেকেই শিশুর থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি হয়। যদি মাতৃগর্ভে শিশুর থাইরয়েড গ্রন্থি সঠিকভাবে তৈরি না হয়, তাহলে সে পৃথিবীতে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আসবে। তাই গর্ভধারণের আগেই থাইরয়েড সমস্যা পরীক্ষা করা দরকার। পরিণত বয়সেও এ রোগের প্রকোপ যথেষ্ট আছে। এ বিষয় নিয়ে শুধু আলোচনা করলেই হবে না। এই সমস্যা সমাধানে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন হরমোন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল শুক্রবার শেষ হওয়া দুই দিনব্যাপী চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশে হরমোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রধানতম সংগঠন ‘বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি’ (বিইএস) দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন, বিজ্ঞান মেলা ও সাধারণ সভার আয়োজন করে।
সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক ডা: মো: ফারুক পাঠান থাইরয়েড সমস্যার পাশাপাশি ডায়াবেটিস আক্রান্ত সংখ্যা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ। বিষয়গুলো খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে না, এটা খুব ভয়াবহ। সম্মেলনে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য ও পরিবার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো: আলী নুর সব ধরনের সহযোগিতার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আশ্বাস দেন। একই সময় এই সব হরমোন সমস্যা সমাধানে কাজ করার জন্য চিকিৎসকদের আহ্বান জানান।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে জেনেটিক ইনভেস্টিগেশন প্রয়োজন। এখন প্রায়ই এমন অনেকে আসেন যাদের সন্তানদের বয়স বাড়লেও শারীরিক গঠন বাড়ছে না। এই সমস্যা সমাধানে আরো গবেষণা প্রয়োজন। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এখন এই সমস্যা বেশি লক্ষণীয়। নারীদের থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা পুরুষদের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি।
সম্মেলনে অংশ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা: মো: শারফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি ডা: এম ইকবাল আর্সলান, স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: এএইচএম এনায়েত হোসেন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের (বিইউএইচএস) ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা: হাজেরা মাহতাব, বারডেম হাসপাতালের সাবেক ডিরেক্টর জেনারেল অধ্যাপক ডা: জাফর আহমেদ লতিফ, বিএমএ মহাসচিব ডা: মো এহতেসামুল হক চৌধুরী, স্বাচিপ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা: এম এ আজিজ, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির (বিইএস) সভাপতি অধ্যাপক এসএম আশরাফুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ডা: শাহজাদা সেলিম।
অধ্যাপক ডা: শাহজাদা সেলিম বলেন, টেস্টোস্টেরন ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা থেকে এসেছে। ইস্ট্রোজেন-টেস্টোস্টেরন প্রস্তুতির সাথে সম্পর্কিত সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হলো অ্যালোপেসিয়া, ব্রণ এবং হিরসুটিজম, যদিও এগুলো ডোজ ও সময়কাল নির্ভর এবং সাধারণ নয়। মহিলাদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের ব্যবহার যৌন কর্মহীনতা টেসটোস্টেরন প্রতিস্থাপন সাধারণত লিবিডো, যৌন আনন্দ এবং প্রচণ্ড উত্তেজনা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হয়। ৫০ শতাংশের মতো পোস্টমেনোপজাল মহিলাদের যৌন কর্মহীনতা রয়েছে এবং কম টেস্টোস্টেরন স্তর এই মহিলাদের মধ্যে কোইটাল ফ্রিকোয়েন্সি হ্রাসের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, মহিলাদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের ব্যবহার পোস্টমেনোপজাল হরমোন থেরাপি শুধু চিকিৎসার জন্য ইস্ট্রোজেনের তুলনায় ইস্ট্রোজেন প্লাস টেস্টোস্টেরনের সুবিধার জন্য খুব কম প্রমাণ রয়েছে। বিষণ্নতা, রাগ, মেজাজ, অনিদ্রা ও সুস্থতার অভাব পোস্টমেনোপজাল মহিলাদের সাধারণ অভিযোগ। সীমিত সংখ্যক গবেষণায় দেখা গেছে যে ইস্ট্রোজেনের সাথে টেস্টোস্টেরন যোগ করার সাথে মানসিক লক্ষণ এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়।
এই চিকিৎসক বলেন, মহিলাদের মধ্যে এর প্রভাব বেশি লক্ষ করা যায়। যেমন- ভাসোমোটর, বেশি ঘাম হওয়া, অনিদ্রা ও ঘুমের ছন্দে ব্যাঘাত, স্নায়ুবিকতা মেজাজের ব্যাধি, অমার্জিততা, অলসতা, সুস্থতার বোধ কমে যাওয়া, হতাশার লক্ষণ ইত্যাদি। মহিলাদের মধ্যে ইস্ট্রোজেন ছাড়াও ব্যবহার করার সময় মোট কোলেস্টেরল এবং এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে, যদিও হৃদরোগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব জানা যায়নি।
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞদের জাতীয় পর্যায়ের প্লাটফর্ম। বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সে বাংলাদেশের ও বিদেশের শতাধিক চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন। কনফারেন্সের পাশে আয়োজক সংগঠনের উদ্যোগে ‘সায়েন্টিফিক ফেয়ারের’ আয়োজন করা হয়। যেখানে ১২টি ফার্মাসিটিক্যালস্ কোম্পানি স্টল নিয়ে হরমোন সংক্রান্ত পণ্য ও তাদের সেবা উপস্থাপন করেন এবং কনফারেন্সে আসা চিকিৎসকদের মতামত নেন।