১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গবেষণার তথ্য

প্রতিবন্ধীদের রাস্তা ও গাড়ি ব্যবহারে নানা সমস্যায় পড়তে হয়

-

রাস্তা ও গাড়ি ব্যবহারে প্রতিবন্ধীদের নানামুখী সমস্যায় পড়তে হয়। এর মধ্যে রয়েছে গাড়ির উচ্চতা, চালক ও হেলপারদের অসহযোগিতা, ফুটপাথে মোটরসাইকেল চালানো, অতিরিক্ত ভাড়া প্রভৃতি। বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দীন হাসানের তত্ত্বাবধানে মুশফিকুর রহমান ভুঁইয়ার করা ‘ঢাকার রাস্তায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যাতায়াতকালীন সমস্যা’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। মুশফিকুর রহমান ভুঁইয়া বর্তমানে আমেরিকার আলবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির শিক্ষার্থী।
আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে গতকাল বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনা সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দীন হাসানের সভাপতিত্বে সভায় ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (এমআরটিএ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
মুশফিকুর রহমান ভুঁইয়া জানান, গবেষণাটি করোনা মহামারী শুরুর আগে ২০১৯ সালে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে সক্ষম নন; কোন ব্যক্তি বা যন্ত্রের সাহায্যের প্রয়োজন হয় এমন ব্যক্তিদের ওপর করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন চলাচলে স্বচ্ছন্দতা অর্থাৎ কত সহজে হাঁটতে বা বাহনে উঠতে পারছেন তার ওপর এবং একইভাবে সরাসরি যাতায়াতকে। এতে দেখা যায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম রিকশা (৪৫ শতাংশ) ও সিএনজি (২২ শতাংশ)। বাসে ও হেঁটে যাতায়াত করে ১১ শতাংশ। কিন্তু সব মাধ্যমে বা বাহনে তাদের সমস্যার ধরন ও মাত্রায় পার্থক্য আছে। হাঁটার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হল ভাঙা, উঁচু-নিচু ফুটপাথ এবং ফুটপাথে উঠতে র্যাম্পের অনুপস্থিতি। এ ছাড়া ফুটপাথে মোটরসাইকেল চালানোও অন্যতম সমস্যা বলে উঠে এসেছে। বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো বাসের অতিরিক্ত উচ্চতা, ভিড়ের কারণে বাসে উঠে যথাস্থানে যেতে দারুণ অসুবিধা ও বাহনে নিতে বাসসহকারীর অস্বীকৃতি। এ ছাড়া বাসে হুইল চেয়ার, ক্র্যাচ রাখার মতো ব্যবস্থা না থাকাও সমস্যা হিসেবে উঠে এসেছে। রিকশায় চলাচলের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া, রিকশার অতিরিক্ত উচ্চতা ও বাহনে হুইল চেয়ার, ক্র্যাচ রাখার মতো ব্যবস্থা না থাকা। সিএনজিতে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া, বাহনে নিতে চালকের অস্বীকৃতি ও সিএনজিতে, ক্র্যাচ রাখার মতো ব্যবস্থা না থাকা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যাতায়াতকালীন সাহায্যকারীদের সবাইকেই কম-বেশি অতিরিক্ত অর্থ সময় ব্যয় করতে হয়, এমনকি অতিরিক্ত দূরত্ব ভ্রমণ করতে হয়। আর সাহায্যকারী হিসেবে যখন মা বা স্ত্রী থাকেন, তখন তাদের প্রায় শতভাগকেই এ অতিরিক্ত কষ্ট করতে হয়।
সভায় এমআরটিএর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক তার বক্তব্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যাতায়াতকালীন সমস্যাগুলো আমলে নিয়ে মেট্রোরেলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যাতায়াত কিভাবে স্বচ্ছন্দ হবে তার ওপর আলোকপাত করেন। তিনি জানান, মেট্রোরেল স্টেশনে ও রেল কম্পার্টমেন্টে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের একা বা হুইল চেয়ারসহ ওঠানামার জন্য আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া প্রতিটি কম্পার্টমেন্টে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আলাদা সিট ও হুইল চেয়ার বা ক্র্যাচ রাখার আলাদা জায়গা থাকবে।
অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দীন হাসান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যাতায়াতকালীন সমস্যাগুলোর সমন্বিত সমাধানের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, যেহেতু বেশির ভাগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাদের যাত্রার প্রথম মাইলে বা শেষ মাইলে রিকশা বা ফুটপাথ ব্যবহারে সমস্যার মুখে পড়েন। এ ক্ষেত্রে বর্ণিত সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা গণপরিবহন ও মেট্রোরেল ব্যবহার বাড়াতে পারবেন না। এ ছাড়া ফুটপাথ ও প্রতিটি বাহনের ভেতরের ডিজাইন পরিবর্তন করে এক প্রতিবন্ধীবান্ধব করা ও বাসে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সিট সংরক্ষণের আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।


আরো সংবাদ



premium cement