২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সঙ্কট মেটাতে টাকা তোলা বন্ধ করল বাংলাদেশ ব্যাংক

-

মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে গত মাসে তুলে নিয়েছিল প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। আর সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে তুলে নেয়া হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। সব মিলেই ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার প্রবাহে টান পড়েছে। অনেক ব্যাংকই এখন এ সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে নগদ টাকার সঙ্কট মেটাতে বাজার থেকে আগামী এক মাসের জন্য টাকা উত্তোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সিদ্ধান্ত গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এটি আবারো চালু করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির অন্যতম লক্ষ্য হলো টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা। বিনিয়োগ চাহিদা কম থাকলে ব্যাংকের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকে। এ অর্থের ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতে সহজ শর্তে বিনিয়োগ করা হয়। তখন মানুষের হাতে বেশি অর্থ চলে যায়। একই সাথে পণ্য কেনার প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। তখন মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। আর মূল্যস্ফীতি বাড়লে সাধারণের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত অর্থ তুলে নেয়। সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক বিল, আমানতের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার (সিআরআর) বাড়িয়ে দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা তুলে নেয়া হয়।
অপর দিকে টাকার সঙ্কট দেখা দিলে ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা ট্রেজারি বন্ড বন্ধক রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ সরবরাহ (রেপো) করা হয়। এ ছাড়া বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ব্যাংকগুলোর নগদ টাকা সররবাহ করা হয়।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত প্রায় দুই বছর ধরে বিনিয়োগ চাহিদা কমে যায়। একই সাথে বিদেশ থেকে শ্রমিক ফিরে আসায় বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে। বিনিয়োগ চাহিদা কম থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহারও কমে যায়। এতে প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই উদ্বৃত্ত ডলার ছিল। বাজারে ডলার চাহিদা কম থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে নেয়। বিপরীতে বাজারে টাকা ছাড়া হয়। অপর দিকে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে নগদ টাকার সরবরাহ করা হয়। সবমিলেই বাজারে উদ্বৃত্ত অর্থ ছিল। এই কারণে ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। এতে কমে যায় আমানত প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছর ৩০ জুনে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। কিন্তু ৩০ সেপ্টেম্বরে এসে হয়েছে ১৫ লাখ ১০ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে আমানত বেড়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডে কম সুদে বিনিয়োগ করতে থাকে ব্যাংকগুলো। এতে ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারের ঋণ হিসেবে আটকে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর হাতে প্রায় তিন লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ড রয়েছে। অপর দিকে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করতে থাকে। বাজার থেকে এ টাকা উত্তোলন গত নভেম্বর পর্যন্ত চালু রাখা হয়।
এ দিকে চলতি অর্থবছরের আগস্ট থেকে পণ্য আমদানি বেড়ে যায়। এতে বেড়ে যায় আমদানি ব্যয়। গত সেপ্টেম্বরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ঋণাত্মক ৭ শতাংশ। আর জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ, যেখানে আগের বছরে ছিল ঋণাত্মক প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ। বিপরীতে গত জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে রেমিট্যান্স-প্রবাহ। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমতে থাকায় বাজারে ডলারের সঙ্কট বেড়ে যায়। এ সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করতে থাকে। এভাবে আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর (১৭ নভেম্বর) পর্যন্ত চার মাসে ১৮২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। এতে বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
অপর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন অব্যাহত রাখা হয়। গত মাসের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা এবং ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে ২৫০ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়। এক দিকে ডলার বিক্রি করে টাকা উত্তোলন, অপর দিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন একসাথে চলায় বাজারে নগদ টাকার প্রবাহ কমে যায়। এতে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দেয়। বেড়ে যায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের সুদহার। যাদের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ ছিল তারা মার্কেট প্লেয়ারের ভূমিকায় নামে। এতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রা সংগ্রহের ব্যয় বেড়ে যায়। পাশাপাশি বেশি মাত্রায় সরকারকে ঋণ দেয়ায় ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার সঙ্কট আরো বেড়ে যায়। ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বন্ড বন্ধক রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অর্থ সংগ্রহ করতে এলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রথমে তেন সাড়া দেয়া হয়নি। তবে সরকারের বাধ্যতামূলক ঋণের জোগান দেয় (পিডি) এমন ব্যাংকগুলোকে এএলএস’র (অ্যাসোয়ারেন্স লিকুইডিটি সাপোর্ট) মাধ্যমে সীমিত পর্যায়ে টাকা সরবরাহ করা হয়। সবমিলে বাজারে টাকার সঙ্কট বেড়ে যায়।
এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী এক মাসের জন্য নেয়া এ সিদ্ধান্ত গতকাল থেকে কার্যকর করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো বাজার থেকে টাকা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত বহাল করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা হলে হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি শনিবার থেকে শুরু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, প্রস্তত জবি ক্যাম্পাসগুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন বাইডেন: মুখপাত্র নোয়াখালীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব থাকবে বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি বাগাতিপাড়ায় ইসতিসকার নামাজ পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন : বাকৃবি অধ্যাপক বৃষ্টির জন্য হাকাকার, সাভারে ইসতিসকার নামাজ আদায়

সকল