২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুঁজিবাজারে হঠাৎ বড় উল্লম্ফন ডিসইতে বেড়েছে ১৪৩ ও সিএসইতে ৩৮৩ পয়েন্ট

-

দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বৈঠকের পর গতকাল দেশের শেয়ারবাজারে বড় উল্লম্ফন হয়েছে। এ দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেরও (সিএসই) সব ক’টি সূচকের বড় উত্থান হয়। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ১৪৩ পয়েন্ট। আর সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক বেড়েছে ৩৮৩ পয়েন্ট। এ দিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুতেই ডিএসই প্রধান মূল্যসূচক ১০০ পয়েন্টের উপরে বেড়ে যায়। শুরুর এ বড় উত্থান লেনদেনের পুরো সময়জুড়েই অব্যাহত থাকে।
এর আগে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হয়। টানা আট দিনের দরপতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৩৮৮ পয়েন্ট কমে। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বৈঠকে বসে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বৈঠক শেষে বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ জানান, স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড নিয়ে কিছু আইনগত অস্পষ্টতা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কথা হয়েছে। বিএসইসি-বাংলাদেশ ব্যাংক উভয়পক্ষ এ বিষয়ে আন্তরিক। আমাদের কারো সাথে কারো কোনো মতবিরোধ নেই। আমার মনে হয়েছে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক খুবই আন্তরিক। যে কারণে তারা বন্ডে বিনিয়োগকে বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখার অঙ্গীকার করেছেন। এ ছাড়া বিনিয়োগসীমা গণনায় বাজারদরের পরিবর্তে কস্ট প্রাইসকে বিবেচনায় নেয়ার যে দীর্ঘ দিনের চাহিদা রয়েছে, সেটিও তারা সমাধান করবে। এ জন্য যা করণীয় তারা তাই করবেন।
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে এমন বক্তব্য আসার পর গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় প্রায় সব ক’টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১০০ পয়েন্টের উপরে বেড়ে যায়। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত সূচকের এ বড় উত্থানপ্রবণতা অব্যাহত থাকে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪৩ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৮৪৭ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৫৮৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ৩২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৩৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৯৩ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৫টির। আর ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১০২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় এক হাজার ১৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন কমেছে ৪৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১২২ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওয়ান ব্যাংকের ১১৩ কোটি ১১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, একমি পেস্টিসাইড, আইএফআইসি ব্যাংক, জিনেক্স ইনফোসিস, ওরিয়ন ফার্মা, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল এবং ফরচুন সুজ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৮৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৬৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৬টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ব্লক মার্কেট : প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে বুধবার ৩০টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ১০৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। জানা গেছে, কোম্পানিগুলোর ৭৩ লাখ ৩৮ হাজার ৩৩৬টি শেয়ার ৬৭ বার হাতবদলের মাধ্যমে ১০৩ কোটি ৮৬ লাখ ১৬ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৩৯ কোটি ৪৪ লাখ ৬২ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে ডেল্টা লাইফের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ কোটি ৪৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকার সোনালী পেপারের এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৪ কোটি ৯০ লাখ ৩৮ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মার।
সব শেয়ার ফেরত নিতে বেক্সিমকো সিনথেটিকসের আবেদন
বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার ফেরত নিতে উদ্যোগ নিয়েছে বেক্সিমকো গ্র“পের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো সিনথেটিকস। শেয়ারবাজারে এটি বেক্স সিনথেটিকস নামে পরিচিত। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি সাধারণ শেয়ারধারীদের হাতে থাকা সব শেয়ার কিনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে নেয়ার মাধ্যমে কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে বেরিয়ে (এক্সিট) যাবে।
বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করেছে। বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানিয়েছে কোম্পানিটি। সেখানে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য বিএসইসির করা ‘এক্সিট পরিকল্পনার’ আওতায় বেক্স সিনথেটিকস কর্তৃপক্ষ বিএসইসিতে আবেদন করেছে। এক্সিট পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে থাকা ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬১৩টি শেয়ার কিনে নেবে।
বিএসইসির আদেশে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিত রাখা হয়েছে। ওই দিনই কোম্পানির পক্ষ থেকে শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে লেনদেন বন্ধের আগে বেক্সিমকো সিনথেটিকসের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৮ টাকা ৪০ পয়সা। নিয়ম অনুযায়ী, এখন কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে নিলে তাতে সর্বশেষ বাজারমূল্যের চেয়ে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৬০ পয়সা বেশি পাবেন শেয়ারধারী সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। প্রতিটি শেয়ারের জন্য ১০ টাকা করে বিনিয়োগকারীদের ফেরত দিলে তাতে কোম্পানিটির খরচ হবে প্রায় ৫৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু করে বেক্সিমকো সিনথেটিকস। ১৯৯৩ সালে এটি ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। আর ১৯৯৫ সালে তালিকাভুক্ত হয় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)।


আরো সংবাদ



premium cement