২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১০ মাসেই চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম

-

চলতি মৌসুমের ১০ মাসেই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে দেশ উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে এক লাখ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে দেশে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭৭ হাজার ৭৮০ মিলিয়ন কেজি। তা ছাড়িয়ে চলতি অক্টোবরের মধ্যে উৎপাদন হয়েছে ৭৯ হাজার ৩৩৩ মিলিয়ন কেজি। অবশিষ্ট নভেম্বর ও ডিসেম্বরে উৎপাদন যোগ হলে এক লাখ মিলিয়ন কেজি চায়ের উৎপাদন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের দেয়া নির্দেশনার আলোকে এবং বাংলাদেশ চা বোর্ডের সরাসরি তত্ত্বাবধানে দেশের ১৬৭টি চাবাগানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চা উৎপাদনে নতুন নুতন রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। দুইটি বাগান থেকে আজ দেশে ১৬৭টি বাগানে উন্নত মানের চা উৎপাদিত হচ্ছে।
প্রায় ২০ মাস ধরে বৈশ্বিক মহামারী করোনাকে জয় করেই এগিয়ে চলছে দেশের অন্যতম চাশিল্প। দেশের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে প্রতি বছরই বিদেশে চায়ের রফতানির পরিমাণও বাড়ছে। বিদেশে রফতানি হয়েছে গত ২০২০ অর্থবছরে ২.১৭ মিলিয়ন কেজির বেশি চা।
এ দিকে গত দুই মৌসুম ধরে করোনা সংক্রমণ ও প্রচণ্ড খরা উপেক্ষা করেও প্রতি বছর চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চাশিল্প। গত দুই বছরের মতো চলতি (২০২১) অর্থবছরেও দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র চাবাগান বাঁশখালী, চাঁদপুর, বেলাগাঁও চাবাগানসহ ১৬৭টি চাবাগান ও এস্টেটে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার ৭৭.৭৮০ মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে গেছে। গত ২০২০ অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫.৯৪০ মিলিয়ন কেজি তা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছে ৮৬.৩৯৪ মিলিয়ন কেজি। অপর দিকে ২০১৯ অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪.১৪০ মিলিয়ন কেজি তা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছে ৯৬.০৬৯ মিলিয়ন কেজি।
গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এ অঞ্চলের ২২টা চাবাগানে উৎপাদনে কিছুটা বিঘœ ঘটে। সিটি গ্রুপের বাঁশখালী বেলাগাঁও চাবাগানের ম্যানেজার আবুল বাসার জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তার বাগানে গত ১৯ মাসে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৬০০ কেজি। চলতি মৌসুমে তাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে তিন লাখ কেজি।
উদালিয়া চাবাগানের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, তার বাগানে ১০ লাখ কেজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হলেও গত ১০ মাসে উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ কেজি। তিনি জানান, চলতি বছর চট্টগ্রামের ২২টি বাগানে গত মৌসুমে ১০ মাসে উৎপাদন হয়েছে ৯০ লাখ কেজি। এবার গত ১০ মাসে উৎপাদন হয়েছে ৭৫ লাখ ৪৫ হাজার কেজি। তবে চট্টগ্রামে চলতি মৌসুমে উৎপাদন কিছুটা কম হলেও উৎপাদনে চলতি বছরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।
যে কারণে আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে চাশিল্প। সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন দেশের চাবাগানগুলো প্রায় উৎপাদন শূন্য হয়ে পড়ে।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ টি রিসার্চ স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে উন্নীত করেন। বর্তমানে যা বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট নামে বিশ্বে সমাধিক পরিচিত।
জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পূর্বে দেশে শুধু সিলেটের ‘সুরমা ভ্যালি’ চট্টগ্রামের ‘হালদা ভ্যালি’ নামে পরিচিত ছিল। এখন সিলেটের সুরমা ভ্যালিকে ছয় ভ্যালিতে ভাগ করা হয়েছে, যা লস্করপুর ভ্যালি, বালিশিরা ভ্যালি, মনু-দলই ভ্যালি, লংলা ভ্যালি ও নর্থ সিলেট ভ্যালি এবং হালদা ভ্যালিকে চট্টগ্রাম ভ্যালি করা হয়েছিল।
জানা গেছে, প্রতি বছর গড়ে প্রতি হেক্টরে চা উৎপাদন হয় এক হাজার ৫০০ কেজি। অপর দিকে সমপরিমাণ জমিতে ইস্পাহানি, ফিনলে, ডানকানসহ বেশ কিছু বাগানে দুই হাজার ৫০০ কেজি থেকে তিন হাজার কেজি উৎপাদন ছাড়িয়ে যায়।
চা চাষের পরিধি ও উৎপান বৃদ্ধির কর্মযজ্ঞে পিছিয়ে নেই দক্ষিণ চট্টগ্রামের একমাত্র চা এস্টেট বাঁশখালীর চাঁদপুর বৈলগাঁও।
চা বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী জানা গেছে, দেশে মোট নিবন্ধনকৃত ১৬৭টি টি এস্টেট ও চাবাগান রয়েছে, তাতে সর্বমোট দুই লাখ ৭৯ হাজার ৫০৬.৮৮ একরে চা উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে মৌলভী বাজারে রয়েছে ৭৬টি এস্টেট ও ১৫টি চাবাগান (১ লাখ ৫৬ হাজার ১৯১.৯৪ একর), হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে ২২টি টি এস্টেট ও তিনটি চাবাগান (৫৪ হাজার ১৬৪.১৬ একর), সিলেট জেলায় রয়েছে ১২টি টি এস্টেট ও সাতটি চাবাগান(২৮ হাজার ৯৩৬.৩২ একর), চট্টগ্রামে রয়েছে ১৮টি টি এস্টেট ও তিনটি চাবাগান (৩৪ হাজার ৫৬০.৪৫ একর), রাঙ্গামাটিতে রয়েছে একটি টি এস্টেট ও একটি চা বাগান (৭৯৪.৯৪ একর), পঞ্চগড়ে রয়েছে আটটি চাবাগান (৪ হাজার ৮১৮.২৯৫ একর) এবং ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছে একটি চাবাগান (৪০.৭৭একর)।


আরো সংবাদ



premium cement