১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুঁজিবাজারে শেয়ার ধারণ গণনায় পরিবর্তন আসছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে এসইসির বৈঠক
-

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির আলোচনায় ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনার পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কের অবসান হতে যাচ্ছে। আলোচনায় নেতৃত্ব দেয়া পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ক্রয়মূল্যে এক্সপোজার লিমিট গণনার বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন। দাফতরিক প্রক্রিয়া শেষে বিস্তারিত জানানো হবে। গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিএসইর সাথে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে যোগ দেন কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। সাথে ছিলেন নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ।
বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে আরো সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে। আমরা নতুন করে আরো কিভাবে সংযোগ বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা করছি।’ আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আলোচনার সব বিষয় নিয়ে পজিটিভ সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি। এর ফলাফল আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আপনারা দেখতে পাবেন।’
বৈঠকের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, অন্য দিকে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে দুই প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করবে। আজকের আলোচনার প্রেক্ষিতে সামনে আরো আলোচনা হবে।
শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এক্সপোজার লিমিট যেন শেয়ারের ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে করা হয় এসব বিষয়সহ শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা তহবিল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা একমত হয়েছি। এগুলোর দাফতরিক প্রক্রিয়া শেষ করে বিস্তারিত জানানো হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এক্সপোজার লিমিট নিয়ে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা এটা রিভিউ করব।’
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা নিয়ে উভয়সঙ্কটে পড়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। একদিকে বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ তহবিলের কথা বলা হচ্ছে, অন্য দিকে বিশেষ পদ্ধতিতে গণনার কারণে শেয়ারদর বেড়ে গিয়ে বিনিয়োগসীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণে গুনতে হচ্ছে জরিমানা।
আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ এটা হবে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ।
শেয়ারের ধারণকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয় বাজারমূল্যের ভিত্তিতে। আর এখানেই বিপত্তি। ব্যাংক বিনিয়োগসীমার মধ্যেই শেয়ার কিনলেও দাম বেড়ে গেলে বাজারমূল্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগ গণনার কারণে বিনিয়োগসীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে আগে ভাগেই। এতে পুঁজিবাজারে বিক্রয় চাপ তৈরি হচ্ছে। ফলে বাজারে হচ্ছে দরপতন।
এমনিতেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের অভাবে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় চলে গেছে, সেটি বাজারে দরপতনকে ত্বরান্বিত করতে পারে, যেটি দেখা যাচ্ছে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে পুঁজিবাজারে উত্থানে সূচক বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা হারিয়ে ফেলা টাকা ফিরে পেতে শুরু করেন।
তবে এক দশক পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যসূচক সাত হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে মূলত ব্যাংকের শেয়ারের বিক্রয় চাপে সূচকের নিম্নগতি দেখা দেয়।
এ সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলোকে শেয়ার বিক্রি করে দিতে বাধ্য করেছে। এর ফলে দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতেই পারছে না পুঁজিবাজার। শেয়ারদর কমে আসায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
বন্ডে বিনিয়োগও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিনিয়োগসীমার মধ্যে ধরছে। অথচ বিএসইসি এই বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখার পক্ষে। তারা বলছে, সারা বিশ্বেই বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বাইরে থাকে। সরকার পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেটকে জনপ্রিয় করতে চাইছে। এর অংশ হিসেবে সুকুক বন্ড ছেড়ে তিন হাজার কোটি টাকা তুলতে অনুমতি দিয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডকে। আকর্ষণীয় মুনাফার এই বন্ডে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছে। আর বিনিয়োগসীমা অতিক্রম করে যায় বলে ব্যাংকগুলো শেয়ার বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে। যারা করেনি, তাদের জরিমানার শিকার হতে হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement