২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বিশ্ব এইডস দিবস আজ

সচেতনতা কমাতে পারে এইডসের ঝুঁকি

-

দেশে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। অথচ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ রোগের সংক্রমণ কমছে। অভিবাসনপ্রক্রিয়া ও সীমান্ত এলাকায় অসচেতন যৌন সম্পর্কসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে। এ জন্য গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে পারলে এইডসের ঝুঁকি কমবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সেভ দ্য চিলড্রেনের তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ দেশে এসে এইডসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ফলে এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় প্রতি বছর গড়ে ৭ লাখ মানুষের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার আগে গুরুত্বপূর্ণ রোগ-ব্যাধি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও দেশে ফেরা অভিবাসীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার দেশে ফেরত অভিবাসীদের সম্পর্কে জানতে সরকারিভাবে তথ্য-উপাত্তের কোনো সঠিক ডাটাবেজ নেই।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে কর্মরত অসংখ্য নারী গৃহকর্মী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরছেন। নির্যাতিত ওই সব নারীর অনেকের শরীরেই এইডসের জীবাণু প্রবেশ করলেও সামাজিকতা ও লোক-লজ্জার ভয়ে এ বিষয়ে তারা মুখ খুলছেন না। আবার প্রান্তিক পর্যায়ে এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং, এআরটি ম্যানেজমেন্ট, রেকর্ড কিপিং ও রিপোর্টিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেই। এসব কারণে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে এইচআইভি নির্মূল ঘোষণার বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল এইডস এসটিডি সংশ্লিষ্টদের দাবি, বর্তমানে এইডস আক্রান্তদের অনুমিত হিসাব প্রায় ১৫ হাজার। সরকারিভাবে রোগটির শনাক্ত ও চিকিৎসাপ্রক্রিয়া পুরোদমে চালু হয়েছে ২০১৭ সাল থেকে। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশের মতো রোগী শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে ৭৫ ভাগ রোগীকে চিকিৎসার আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে এইচআইভি নির্মূল করতে ৯০, ৯০, ৯০ পদ্ধতিতে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার আওতায় আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কান্ট্রি কো-অর্ডিন্যাশন মেকানিজমের মেম্বার হাফিজ উদ্দিন মুন্না বলেন, এইডস নির্মূল করতে চাইলে একযোগে কাজ করতে হবে। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৫ হাজার রোগী রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসার আওতায় আছে মাত্র ৮ হাজার। বাকি সাত হাজার রোগী আমাদের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে কেউ যে কোন সময় এই রোগীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য সংক্রমিত রোগীদের নিয়ে যারা কাজ করছে তাদের সাথে সরকারের যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনও অভিবাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এইডস সংক্রমণের হার বাড়ছে বলে জানিয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের সন্ধানে যাওয়া ব্যক্তিদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এইডস ছড়িয়ে পড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক ও সরকারি-বেসরকারি অর্থায়ন বাড়ানোর মাধ্যমে দেশে এইডস আক্রান্তের ঝুঁকি হ্রাসের পাশাপাশি চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
দেশের ২৩ জেলা সবচেয়ে বেশি এই ঘাতকব্যাধির ঝুঁকিতে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এইডস/এসটিডি কর্মসূচি থেকে সারা দেশে জরিপ করে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, কুমিল্লা, যশোর, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাট, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, পটুয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহী, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ- এই ২৩ জেলায় এ ঘাতকব্যাধির অধিক মাত্রায় সংক্রমণ দেখা গেছে।
বিশ্ব এইডস দিবস আজ। প্রতিবারের মতো এবারো বাংলাদেশে দিবসটি পালন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব সম্প্রদায় ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্ব এইডস দিবস পালন করে আসছে। ইউএনএইডসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মানুষ এইডসে আক্রান্ত রয়েছে এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এ মারণঘাতী রোগে মৃত্যুবরণ করেছে।
এ উপলক্ষে আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।


আরো সংবাদ



premium cement