২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মানবসম্পদ মন্ত্রী সারাভানানের আশঙ্কা

বাংলাদেশীদের কারণে ডাম্পিং গ্রাউন্ড হতে পারে মালয়েশিয়া

-

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, বাংলাদেশীদের কারণে ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হয়ে উঠতে পারে মালয়েশিয়া। এরপরও তিনি বাংলাদেশীর সাথে শ্রমিক নিয়োগে সমঝোতা স্মারকের চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করবেন।
তার এমন বক্তব্য জানাজানি হওয়ায় ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের অনেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাদের কেউ কেউ নাম না প্রকাশ করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেছেন, যেখানে সবাইকে ব্যবসা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ দেয়া হচ্ছে, সেখানে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ (আবর্জনার স্টেশন) হওয়ার মতো কথা বলাটা মোটেও সঠিক হয়নি। মূলত মানবসম্পদ মন্ত্রী আকার ইঙ্গিতে গতবারের সেই পুরনো ১০ সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা দাতো শ্রী আমিন নুরের ফর্মুলার পক্ষেই কিছুটা সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে তারা মনে করছেন। যদিও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীসহ অধিকাংশ কেবিনেট সদস্য এবার কোনো ধরনের সিন্ডিকেট ছাড়াই বিদেশী কর্মী নেয়ার পক্ষে রয়েছেন বলে মালয়েশিয়া থেকে জানা গেছে, তাই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে সেই অনুযায়ী যাতে এবার দেশটিতে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দেয়া হয় সে ব্যাপারে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা মালয়েশিয়া সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
তাদের বক্তব্য একটাই- মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আর কোনো ধরনের সিন্ডিকেট করে কর্মী প্রেরণ নয়- ‘নো সিন্ডিকেট’। প্রয়োজনে যাচাই-বাছাই করে কম অভিবাসন ব্যয়ে নেপালের ফর্মুলায় শ্রমিক নেয়া হোক। অর্থাৎ মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী কোম্পানি বিদেশী কর্মীর লেভি, মেডিক্যাল, ইন্স্যুরেন্স ও বিমান টিকিটসহ সব খরচ বহন করবে।
মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে অনলাইনে গতকাল শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান কুয়ালালামপুরের একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানির প্রক্রিয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মালয়েশিয়া একটি ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’ হয়ে উঠবে, যদি বাংলাদেশের দুই হাজার সংস্থাকে (রিক্রুটিং এজেন্সি) এখানে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকার অনুমতিপ্রাপ্ত সংস্থার সংখ্যা এখন ১০ থেকে (গতবারের ১০ সিন্ডিকেট) বাড়িয়ে দুই হাজার করতে বলেছে। উভয় দেশের সরকার তাদের প্রস্তাবিত শ্রমিক নিয়োগের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে আলোচনায় রয়েছে বলে জানান তিনি। সারাভানান অবশ্য বলেন, তিনি শ্রমিক আনার জন্য দুই হাজার এজেন্সি রাখার অনুরোধে আপত্তি জানিয়েছেন। তার মতে, ‘যদি অনেক সংস্থা (সেখান থেকে) তাদের কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠাতে চায়, তাহলে মালয়েশিয়া একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পরিণত হতে পারে। ‘এর আগে ১০টি এজেন্সি (কোম্পানি) বাংলাদেশ থেকে বিদেশী শ্রমিক আনতে পারত। যদিও আমি বিশ্বাস করি, এটিকে ১০-এর বেশি প্রসারিত করতে হবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তিনি এখানে একটি হোটেলে ফোর্সড লেবার জাতীয় কর্মপরিকল্পনা চালু করার পর সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেছেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আরো বলেন, ‘আমি সমঝোতা স্মারকের একটি চূড়ান্ত খসড়া পেয়েছি এবং এটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করব। তিনি বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, জোরপূর্বক শ্রমের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সরকারের একটি উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ওয়ার্কিং ফর ওয়ার্কার্র্স মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা ডব্লিউএফডব্লিউ, একটি অ্যাপ যাকে শ্রমিকরা তাদের অভিযোগ দায়ের করার জন্য একটি অনলাইন প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে। পাঠাতে পারে অতিরিক্ত ওভারটাইম, মজুরি আটকে রাখা এবং আপত্তিজনক কাজ ও জীবন যাপনের অবস্থা। এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৯৫ শতাংশ অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীর এমন বক্তব্য শোনার পর থেকেই সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকে তার দেয়া প্রতিবেদন নিয়ে ওয়াটস অ্যাপ গ্রুপে দিচ্ছেন। তারা বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমানসহ অন্যান্য শ্রমবাবন্ধব দেশ যদি কোন ধরনের সিন্ডিকেট ছাড়া লাখ লাখ শ্রমিক নিতে পারে তাহলে মালয়েশিয়া এক্ষেত্রে কি কারণে ১০-২০-৫০ জনের সিন্ডিকেট করে লোক পাঠানোর পক্ষে মতামত দেয়? তারা উদাহরণ দিয়ে বলেন, নেপাল থেকে যদি ১২ শ রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে পারে ইন্দোনেশিয়া থেকে যদি সহস্রাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠায় তাহলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যা কোথায় তা তারা বুঝতে পারছেন না মানবসম্পদ মন্ত্রীর এমন বক্তব্যে তারা মনে করছেন, তিনি দেশটিতে থাকা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার নাগরিক দাতো শ্রী আমিন নুরের সুরে কথা বলছেন। যদিও দেশটির রাজা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় লোক আনার বিপক্ষে। তারা চাচ্ছেন শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে সবাই সুন্দরভাবে ব্যবসা করুক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ ও সচিব ড. আহমদ মনিরুছ সালেহিনও এবার মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেট করে কর্মী পাঠানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
তারা ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে সব নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সির নামের তালিকা পাঠিয়েছেন। শুধু তাই নয় গতবারের ১০ সদস্যের সিন্ডিকেটের অধিকাংশই এবার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনও এবার সিন্ডিকেটের বিপক্ষে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। এসব কারণে এবার সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে কতিপয় রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক কতটুকু সফল হবেন- তা সময়ই বলে দেবে বলে মনে করছেন দেশের সচেতন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকরা।


আরো সংবাদ



premium cement