২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আন্তর্জাতিক বাজারে আরো কমলো জ্বালানি তেলের দাম

বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা স্বস্তিতে
-

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরো কমে গেলো। গতকাল প্রতি ব্যারেলে দাম কমে নেমেছে ৭২ ডলার ১২ সেন্ট। তেলের এ দর গত দুই মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে এখনো এর কোনো প্রভাব না পরলেও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় স্বস্তি নেমে আসছে। অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি নির্ভরতায় জ্বালানি তেল আমদানি ব্যয়ও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে ডলারের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় তাই স্বস্তি ফিরে আসছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত জুলাইয়ের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় প্রতিদিনই জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় গত বছরের এপ্রিলে ব্যারেল প্রতি দাম ২০ ডলারে নেমে আসে। তখন ক্রেতা আকৃষ্ট করতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে ঋণ দেয়া হতো। চলতি অর্থবছরের পর থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমতে থাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকে। আর সেই সাথে বাড়তে থাকে জ্বালানি তেলের দাম। এক পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ৯৩ ডলারে উঠে যায়। এর প্রভাবে সার্বিক আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। অপর দিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। ফলে স্থানীয় বাজারে ডলারের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এতে করে হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করতে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৮২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার বিক্রি করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে। এভাবেই চাপে পড়ে যায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা।
তবে জ্বালানি তেলের দাম কমতে শুরু করায় স্বস্তি ফিরে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায়। জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এটি সম্ভব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ চীন রেখেছে বলেই। বাইডেন প্রশাসন তার মিত্রদের কাছে অনুরোধ করেছিল যাতে দেশগুলো তাদের সংরক্ষিত (রিজার্ভ) তেল বাজারে ছেড়ে দেয়। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে চীন এ কাজটিই করেছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন অনেক দিন ধরেই বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত। কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ ও ট্রাম্পের পরাজয় সেই বাণিজ্যযুদ্ধ কিছুটা কমিয়ে রাখলেও একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি। চীন যে যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুরোধ রাখবে তা অনেকেই আশা করেননি, তবে চীনের এই সিদ্ধান্ত বাজারকে প্রভাবিত করেছে; কমছে তেলের দর।
এদিকে তৈরী পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে। তবে, বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল কমার সুফল এখনো স্থানীয় বাজারে না আসলেও স্বস্তি ফিরে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায়। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় সাময়িক আমদানি ব্যয় কমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৮৭ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ১৪০ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। এ ব্যয় আরো বেড়ে যাচ্ছে। এর ধারণা পাওয়া যায় তেল আমদানিতে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি খোলা) হার দেখে। গত অর্থবছরে যেখানে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ছিল, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সেখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৭১ শতাংশ। যেমন, গত অর্থবছরের তিন মাসে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ৮৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের, সেখানে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা হয়েছে প্রায় ১৪২ কোটি মার্কিন ডলারের। তেলের দাম কমে যাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকলে আমদানি ব্যয়ও আরো কমে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement