২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গাজীপুরে প্রতিশোধ নিতে মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা জামাতাসহ গ্রেফতার ২

-

ফেরদৌসির জামাতাসহ (ভাতিজীর প্রাক্তন স্বামী) দুইজনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। ইন্স্যুরেন্সের কিস্তির টাকা চাওয়ায় এবং স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদের ইন্ধনদাতা সন্দেহে প্রতিশোধ নিতে ক্ষুব্ধ ওই জামাতা তার বন্ধুর সহযোগিতায় এ জোড়া খুন করে। পুলিশ খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত দু’টি চাকু ও মোটরসাইকেল এবং নিহতের ব্যাগ উদ্ধার করেছে। শনিবার জিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রেজোয়ান আহমেদ, সহকারী পুলিশ কমিশনার (সদর জোন) রিপন চন্দ্র সরকার, সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সৈয়দ রাফিউল করিম উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের সালদিয়া গ্রামের সাত্তার খানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম খান (২১) এবং একই গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে ও নিহত ফেরদৌসির জামাতা মো: মহিউদ্দিন ওরফে বাবু (৩৫)।
জিএমপির ওই কর্মকর্তা জানান, প্রথম স্বামীর সাথে ডিভোর্সের পর প্রায় দুই বছর আগে গাজীপুর সদর উপজেলার খুদে বরমী এলাকার রবিউল ইসলামকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন দুই সন্তানের জননী ফেরদৌসি আক্তার (২৮)। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের বড়াইয়া গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিন বছুর মেয়ে। প্রথম সংসারের দুই সন্তান হাফসা আক্তার (১০) ও তাসমিয়া আক্তারকে (৪) নিয়ে মহানগরীর হাড়িনাল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন ফেরদৌসি। তিনি গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাইয়ে দেন ভাতিজী লিমাকে। চাকরি পাওয়ার পর প্রায় তিন মাস আগে লিমা তার স্বামী মহিউদ্দিন ওরফে বাবুকে ডিভোর্স দেন। লিমাকে চাকরি পাইয়ে দেয়াটাই কাল হলো ফেরদৌসির। বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনায় ইন্দনদাতা হিসেবে ফুপু শাশুড়ি ফেরদৌসিকে দায়ী করে বাবু। স্ত্রীকে ফিরে পেতে বাবু বিভিন্ন কবিরাজের কাছে ধর্ণা দিয়ে ব্যর্থ হয়। এ দিকে ইন্স্যুরেন্সের পাওনা কিস্তির টাকা চাওয়ায় ফেরদৌসির ওপর ক্ষুব্ধ হয় বাবু। উভয় ঘটনার প্রতিশোধ নিতে বাবু তার বন্ধু জাহিদুলকে নিয়ে ফেরদৌসিকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বোনকে দিয়ে বীমা করিয়ে দেয়ার কথা বলে ফেরদৌসিকে বাসা থেকে ডেকে আনে জাহিদুল। মেয়ে তাসমিয়াকে নিয়ে ফেরদৌসি একই রিকশায় চড়ে জাহিদুলের সাথে মহানগরীর দেশীপাড়ার বিমানবাহিনীর টেক এলাকায় যায়। সেখানে নির্জন এলাকায় পৌঁছা মাত্রই ফেরদৌসির গলায় ছুরিকাঘাত করে জাহিদুল। এ সময় ধস্তাধস্তিতে জাহিদুলের হাত কেটে যায়। ঘটনাস্থলে পূর্ব থেকে অপেক্ষমাণ বাবু চাকু দিয়ে আহত ফেরদৌসির গলার অপর অংশ কেটে ফেলে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ফেরদৌসি। এ ঘটনা দেখে তাসমিয়া কান্নাকাটি শুরু করলে তাকেও মুখ চেপে ধরে গলা কেটে হত্যা করে জাহিদুল। পরে তারা নিহত ফেরদৌসির মোবাইল ও হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পথে তারা ব্যাগটি একটি ঝোপের মধ্যে এবং মোবাইল ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু দু’টি সালদিয়া গ্রামের একটি পুকুরে ফেলে দেয়। পুলিশ মধ্যরাতে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে। পরে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে জাহিদুলকে ও পরে বাবুকে এ ঘটনায় গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে নিহতের হ্যান্ডব্যাগ এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দু’টি চাকু ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ইজ্জত আলী বাদি হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। শনিবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ঘটনার দু’দিন আগে তারা মোটরসাইকেলে ঘুরে হত্যাকাণ্ডের জন্য মহানগরীর সদর থানাধীন দেশীপাড়া এলাকার বিমান বাহিনীর নির্জন টেক বেছে নেয়। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য সুইচ গিয়ার দু’টি ৩৫০ টাকা দিয়ে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাতের দোকান থেকে কিনে আনে জাহিদুল।


আরো সংবাদ



premium cement