২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তদবির সুপারিশে বিব্রত প্রশাসন

- ছবি : সংগৃহীত

বিভিন্নপর্যায়ে পদোন্নতির তদবিরের চাপে বিব্রত প্রশাসন। বিধি লঙ্ঘন করে এসব তদবিরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। আর এ ধরনের সুপারিশ (ডিও) ও তদবিরের কারণে যোগ্য হয়েও পদোন্নতিবঞ্চিত প্রশাসনের বিভিন্নপর্যায়ের ক্যাডার-কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ। পদোন্নতির জন্য এভাবে আধা সরকারিপত্র (ডিও লেটার) মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দেয়া সরকারি চাকরি বিধিমালার পরিপন্থী। কিছুদিন আগে কয়েকজন মন্ত্রী এমপির পর সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) উপসচিব মাসুদুল হককে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তদবির করেছেন। এ ব্যাপারে সাবেক সচিবরা বলছেন, এটা গর্হিত কাজ, অন্যায়। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ডিও নেয়া সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থী।

প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীই নন, এর আগে-পরে অনেক মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এমপিও একই ধরনের ডিও লেটার দিয়েছেন। কেউ অতিরিক্ত সচিবকে সচিব কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রশাসনে তদবির করেছেন। কেউ উপসচিবকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য ডিও লেটার দিয়েছেন। এসব ডিও লেটার অনাকাক্সিক্ষত ও আইনবহির্ভূত। এতে সিভিল সার্ভিসের মধ্যে যে ঐক্যবন্ধন ও ভ্রাতৃত্ববোধ ছিল তা নষ্ট হচ্ছে। যাদের তদবির নেই, তারা সচিব হতে পারছেন না। একইভাবে উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেতে, পদায়ন নিতে, বদলি হতে-সবকিছুতেই তদবির চলছে। তদবির হচ্ছে ভালো জায়গায় পোস্টিং নিতে। অথচ এই বিষয়গুলো নিয়মবহির্ভূত। তারা বলেছেন, সম্প্রতি উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় মন্ত্রী এমপিদের ডিও লেটার দিয়ে বেশি তদবির শুরু হয়েছে। কেউ আবার সরকারের প্রভাবশালীদের দিয়ে সরাসরি জনপ্রশাসনমন্ত্রী কিংবা সচিবকে ফোনও করাচ্ছেন। এতে রাজনৈতিকভাবে যোগাযোগ না থাকা কর্মকর্তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অনেক কর্মকর্তা ক্ষোভের সাথে বলেন, যারা যোগ্য তারা পদোন্নতিবঞ্চিত হচ্ছেন। যাদের ব্যাপারে কোনো ধরনের সুপারিশ বা তদবির নেই তারাও পদোন্নতি না পেয়ে হতাশ হয়ে আছেন।

প্রসঙ্গত সরকারের উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা ২০০২-এ বলা হয়েছে, অতিরিক্ত সচিব কিংবা সচিব পদে পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সমগ্র চাকরিকালে পালনকৃত দায়িত্বের গুরুত্ব ও প্রকৃতি এবং তার ব্যক্তিগত সুনামসহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করা হবে। পদোন্নতি প্রদানের ভিত্তি হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মেধা, দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতা। মূল্যায়নের জন্য নির্ধারিত ১০০ নম্বরও রয়েছে। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) এসব মানদণ্ড বিবেচনা করে সচিবসহ অন্যান্য পদে পদোন্নতির সুপারিশ করে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সুপারিশ চূড়ান্ত অনুমোদন করেন।

এদিকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর দেয়া ডিও লেটারে বলা হয়, দশম জাতীয় সংসদের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকে মো: মাছুদুল হক (পরিচিতি নম্বর ৬৮৪৭) আমার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রায় দেড় বছর মূল দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর আমি তাকে পরবর্তী সময়ে নিয়মিত একান্ত সচিব হিসেবে পদায়িত করি। দুই বছর দায়িত্ব পালনকালে ওই কর্মকর্তা সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন। তাই আমার এই সাবেক একান্ত সচিবকে আপনার ও পদোন্নতি বোর্ডের সদস্য বরাবর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি প্রদানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

প্রসঙ্গত গত ২০১৮ সালে মাছুদুল হক মন্ত্রীদের যোগ্যতা নিয়ে ফেসবুকে একটি বিতর্কিত পোস্ট দেন। এতে তিনি লিখেন, ‘বাংলাদেশে যদি বুলগেরিয়ার মতো অপরাধের জন্য মন্ত্রীদের বহিষ্কারের রীতি প্রচলন করা হয়, তবে কোনো মন্ত্রী এক সপ্তাহের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।’ এ পোস্টকে কেন্দ্র করে তখন বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। ওই মামলায় তাকে তিরস্কারের সাজা দেয়া হয়। এ ছাড়া তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেও পোস্ট দেন; যা নিয়েও সমালোচনা হয়।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে পৃথকভাবে আধা-সরকারি পত্র দেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, নেত্রকোনা-৩ আসনের এমপি অসীমকুমার উকিল, অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
উপসচিব মো: মাছুদুল হকের সাথে গতকাল বুধবার রাতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের সাথে এসব বিষয়ে কথা হলে তার অভিমত, পদোন্নতির জন্য রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ডিও নেয়া সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রাজনৈতিক নেতারাও এ বিষয়ে তদবির করতে পারেন না। এতে করে প্রশাসনে এক ধরনের বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়।

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব এম হাফিজউদ্দিন খানের মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ডিও লেটার দিয়ে পদোন্নতির জন্য বলা খুবই অন্যায়। এটা একটা তদবির। এটা গর্হিত কাজ; যা প্রশাসনের কাজে সমস্যার সৃষ্টি করবে।

ডিও পত্রের ব্যাপারে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, জনপ্রতিনিধিরা ডিও লেটার দিতেই পারেন। তবে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদোন্নতির একটা মাপকাঠি রয়েছে। যেকোনো পদোন্নতিতেই যোগ্যতা প্রধান বিবেচ্য। এ ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় হওয়ার কথা নয়।


আরো সংবাদ



premium cement
প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ভারতীয় ৩ সংস্থার মশলায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান সাবেক শিবির নেতা সুমনের পিতার মৃত্যুতে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের শোক গণকবরে লাশ খুঁজছেন শত শত ফিলিস্তিনি মা ভারতের লোকসভা নির্বাচনে আলোচনায় নেতাদের ভাই-বোন ও সন্তান সংখ্যা চীনে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা, ঝুঁকিতে ১৩ কোটি মানুষ ভারতের মাঝারি পাল্লার নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা ৩ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার চেন্নাইকে হারাল লক্ষৌ ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হিজবুল্লাহর যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী : ১ মেক্সিকো, ২ ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতেও পাকিস্তানে যাবে না ভারত!

সকল