২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আড়াই মাসে প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন ৩ শতাংশের কম

শিল্প ও সেবা খাতে বাস্তবায়ন ১.৫৬%; সিএমএসএমই খাতে বাস্তবায়ন ২.৩৮%
-

বড় ব্যবসায়ীদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা ঋণের বাস্তবায়ন ৭০ কিংবা ৮০ এমনকি শতভাগ হলেও ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এই ঋণের বাস্তবায়ন এখনো হতাশাব্যঞ্জক অবস্থায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোরও আগ্রহ নেই ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে। এর ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম আড়াই মাসে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাত এবং কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে প্রণোদনা ঋণের বিতরণের হার ৩ শতাংশের নিচেই রয়ে গেছে। এই দুই খাতে চলতি মূলধন হিসেবে প্রণোদনার ঋণ দেয়ার কথা ছিল।
কোভিড-১৯-এর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় ব্যাংক-ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন সরকার কর্তৃক ঘোষিত ১০টি প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আয়োজিত এক সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয় বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, আলোচ্য দুই খাতের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতে দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত ৩৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের বিপরীতে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি মূলধন হিসেবে মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৫১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এটি ঘোষিত প্যাকেজ ঋণ তহবিলের মাত্র ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। মোট ৫৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ ঋণসুবিধা পেয়েছে।
অন্য দিকে ক্ষতিগ্রস্ত সিএমএসএমই খাতে দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের বিপরীতে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি মূলধন হিসেবে মোট ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৫৬৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা (২.৮৪%) এবং অনুমোদনের বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে ৪৭৭ কোটি টাকা (২.৩৮%)। সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ব্যাংক ব্যবস্থার আওতায় সরকার ঘোষিত ১০টি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে দু’টি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে। এর একটি হচ্ছেÑ ২১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ‘রফতানি উন্নয়ন তহবিল’ (সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৮,৯২০ জন ঋণগ্রহীতা) এবং অপরটি রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রদানে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিল (সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৩৭,৭৮,৯৬৯ জন শ্রমিক)।
বাকি আটটি প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতে প্রথম দফায় ৪০ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিলের বিপরীতে ঋণ দেয়া হয়েছে ৩২ হাজার ৭০৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যার বাস্তবায়ন হার ৮১.৭৫% এবং সুবিধাপ্রাপ্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ৩,৩০৯টি। সিএমএসএমই খাতে প্রথম দফায় ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিলের বিপরীতে ঋণ দেয়া হয়েছে ১৬ হাজার ২১৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যার বাস্তবায়ন হার ৮১.০৭% এবং সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ১,০০,১২১টি। প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রি-ফাইন্যান্সিং স্কিম’-এর আওতায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিলের বিপরীতে দেয়া হয়েছে ৩৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাস্তবায়নের হার ৭.৫১% এবং সুবিধাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ৬৫টি। এসএমই খাতের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম-এর আওতায় ২৭৪টি আবেদনের বিপরীতে ঋণ দেয়া হয়েছে ২৯ কোটি চার লাখ টাকা। কৃষি খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের বিপরীতে ঋণ দেয়া হয়েছে চার হাজার ৪৯৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন হার ৮৯.৮৭%, সুবিধাভোগী কৃষক/কৃষি খামারের সংখ্যা ১,৮৩,০৭৫।
অন্যান্যের মধ্যে পর্যটন খাতের (হোটেল/মোটেল/থিম পার্ক) কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রদানে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ তহবিলের ঘোষণা দেয়া হলেও এ খাতে কোনো ঋণ দেয়া হয়নি। বৈঠক সূত্র জানায়, করোনাকালীন গত ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসের জন্য ঋণের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদ-ভর্তুকি বাবদ দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে এক হাজার ৩৯০ কোটি ৯ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন হার ৬৯.৫% এবং সুবিধাভোগী ঋণগ্রহীতা ৭২, ৮২,২৫৩ জন।


আরো সংবাদ



premium cement