১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গাদের বড় নেতা হয়ে যাওয়ায় খুন হন মুহিবুল্লাহ

২ মিনিটে সমাপ্ত হত্যা মিশন; জড়িত ১৯ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী; ৪ জন গ্রেফতার
-

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আজিজুল হককে গ্রেফতার করেছে এপিবিএন সদস্যরা। এ সময় আরো তিনজনকে গ্রেফতার এবং আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
গতকাল শনিবার ভোর ৪টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং লাম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের অধীন লোহার ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে মুহ্বিুল্লাহ হত্যার ঘটনায় ৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে ইলিয়াস নামে এক রোহিঙ্গা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে ১৪ নং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ‘এপিবিএন’র অধিনায়ক মো: নাঈমুল হক। সাংবাদিকদের বলেন, কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ধৃত আসামি আজিজুল হক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মাস্টার মহিবুল্লাহকে হত্যার দুই দিন আগে রাত অনুমান ১০টার দিকে নাম্বাশিয়া মরকজ পাহাড়ে একটি মিটিং হয়। উক্ত মিটিংয়ে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আজিজুল হকসহ আরো চারজন উপস্থিত ছিল। তথাকথিত দুর্বৃত্তদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মহিবুল্লাহকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে মর্মে উক্ত মিটিংয়ে আলোচনা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয় যে, মাস্টার মহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের বড় নেতা হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন সংক্রান্তে বিশেষ ভূমিকা পালন করায় দিনে দিনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে উঠেছে। তাকে থামাতে হবে। পরবর্তীতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল হক জানিয়েছেন মুহিব্বুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে ১৯ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী অংশ নেয়। গতকাল ভোরে আটককৃত আসামিরা হলো, ক্যাম্প ১/ইস্টের বাসিন্দা মোহাম্মদ আজিজুল হক, ক্যাম্প ১/ ইস্টের বাসিন্দা আব্দুল মাবুদের পুত্র মো: রশিদ প্রকাশ মুরশিদ আমিন, ক্যাম্প ১/ওয়েস্টের বাসিন্দা ফজল হকের পুত্র মো: আনা, ও একই ক্যাম্পের বাসিন্দা নূর সালামের পুত্র নূর মোহাম্মদ।
এসপি নাইমুল হক জানান, ‘সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আজিজুল হককে শনিবার ভোরে লাম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের অধীন লোহার ব্রিজ এলাকা থেকে একটি ওয়ান শুটারগান এবং এক রাউন্ড তাজা কার্তুজসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে আজিজের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।’ সন্ত্রাসীদের মাত্র ২ মিনিট সময় লাগে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে। কিলিং মিশিনে অংশ নিয়েছিল পাঁচ অস্ত্রধারী। জিজ্ঞাসাবাদে আজিজ এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে উল্লেখ্য করে নাঈমুল হক বলেন, ‘মহিবুল্লাহকে হত্যার দুই দিন আগে লাম্বাশিয়া মরকজ পাহাড়ে দুর্বৃত্তরা বৈঠক করে যেখানে ধৃত আজিজুল হকসহ আরো চারজন উপস্থিত ছিল।’
জিজ্ঞাসাবাদে আজিজ জানায়, ‘আলোচনায় প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মুহিবুল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় হত্যার নির্দেশ দিয়েছে তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। তাই মুহিবুল্লাহকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়’। ঘটনার দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘এশার নামাজের পর মাস্টার মহিবুল্লাহ তার শেডে ফিরে গেলে ধৃত মুরশিদ আমিন তাকে নিজ শেডে ডেকে নিয়ে প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথাবার্তা বলে এবং কিছু লোক তার সাথে কথা বলবে জানিয়ে তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে যায়।’
আজিজ আরো জানায়, ‘মুরশিদ আমিন মহিবুল্লাহর নিজ অফিসে অবস্থান করছে এমন তথ্য ধৃত অপর দুই আসামি মো: আনাছ ও নুর মোহাম্মদকে জানিয়ে অই এলাকা দ্রুত ত্যাগ করে। পরে আনাছ ও নুর মোহাম্মদ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিতে অপেক্ষায় থাকা সাত সদস্যের মুখোশধারী দুর্বৃত্ত দলকে অফিসে আসতে বলে।’ আজিজের ভাষ্যমতে ‘দুর্বৃত্ত দলটির তিনজন অফিসে প্রবেশ করে এবং আজিজ, আনাস, নুর মোহাম্মদ ও অপর এক অস্ত্রধারীসহ চারজন অফিসের দরজায় অবস্থান নেয়। অফিসে প্রবেশ করে অস্ত্রধারীরা চারটি গুলি করলে মুহিবুল্লাহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।’ হত্যাকাণ্ডের পর অফিসের পেছনের দরজা দিয়ে আজিজ, আনাস, নুর মোহাম্মদসহ বাকিরা পালিয়ে যায়।
ব্রিফিংয়ে নাঈমুল হক জানান, হত্যাকাণ্ডের পরপরই এপিবিএন পুলিশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ফলে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত বর্ণিত আসামিদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।’ রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আইন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত অন্যদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এপিবিএনের এই কর্মকর্তা।
আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী : এ দিকে মুহিব্বুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে আজিজুল হক। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেরিন সুলতানার আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় সে।
শনিবার ভোরে কক্সবাজারের ১৪ এপিবিএন পুলিশ তাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে সে মুহিব্বুল্লাহ হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় বলে স্বীকার করে। এর পরই তাকে এপিবিএন পুলিশ উখিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে রাজি হলে পুলিশ আজ শনিবার বিকেল ৫টায় কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেরিন সুলতানার আদালতে নিয়ে আসে উখিয়া থানা পুলিশ। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আদালতের বিচারক জেরিন সুলতানা আজিজুল হকের জবানবন্দী গ্রহণ করেন। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন। মুহিব্বুল্লাহ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কার্তিক চন্দ্র জানান, গ্রেফতার আসামি আজিজুল হক মুহিব্বুল্লাহ হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছে বলে আদালতে স্বীকার করে এবং ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে সে জানিয়েছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া ১ ইস্ট নম্বর ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিব্বুল্লাহর নিজ অফিসে তার সহকর্মীদের সাথে আলাপচারিতাকালে তাকে হত্যার মিশনে যে পাঁচজন রোহিঙ্গা অংশ নিয়েছিল তাদের মধ্যে আজিজুল হক নিজেই অংশ নেয় এবং তাদের তিনজনের কাছে অস্ত্র ছিল। এ ছাড়া আরো দুইজন তাদের সহযোগী অফিসের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। পাঁচজনের মধ্যে তারা তিনজন মুহিব্বুল্লাহর অফিসে ঢুকে মুহিব্বুল্লাহকে গুলি করে। অপর দুইজন মুহিব্বুল্লাহর অফিসের বাইরে পাহারায় ছিল। মাত্র দুই মিনিটেই হত্যামিশন শেষ করে তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, মুহিব্বুল্লাহকে খুন করার পর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া সবাই যে যার মতো আত্মগোপনে চলে যায় এবং নিজেরা মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে। তাদের নেতাদের নির্দেশেই মুহিব্বুল্লাহকে খুন করে বলে জবানবন্দীতে জানিয়েছে সে।


আরো সংবাদ



premium cement
জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের

সকল