২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অরক্ষিত টেংরাগিরি ইকোপার্ক : পর্যটকরা নিরাপত্তাহীন

-

চার দিকে সবুজ সারি সারি গাছ সামনে বিশাল সমুদ্রসৈকত। এক কথায় অসাধারণ একটি পর্যটক স্পর্ট তালতলী টেংরাগিরি ইকোপার্ক ও সোনাকাটা সমুদ্রসৈকত। বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দূরে এই বনটিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য সারি সারি গাছ। ইকোপার্কের পাশেই আরেকটি আকর্ষণীয় স্থান সোনাকাটা সমুদ্রসৈকত। সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়ালে ঝিরি ঝিরি বাতাসে মন মুগ্ধ হয়ে যায়। সুন্দরবনের এক অংশ নিয়ে বিশাল বনভূমির উপর টেংরাগিরি ইকোপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে।
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত পর্যটক টেংরাগিরি বন ও সোনাকাটা সমুদ্রসৈকতের একটু স্বাদ নিতে আসেন। তবে রাস্তাঘাট ও নিরাপত্তা নিয়ে পর্যটকদের নানান অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল এই টেংরাগিরি বনটি এখন অবহেলায়, অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।
পর্যটনসমৃদ্ধ এসব এলাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা তো দূরের কথা, এখনো নিরাপদই হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ১ এপ্রিল দুলাভাইয়ের সাথে বেড়াতে গিয়ে এখানে শালী সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় ইকোপার্কের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বেড়াতে আসা নারী পর্যটকরা। ইকোপার্কের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড নেই। নেই কোনো উদ্ধারকর্মী, নেই টহলের ব্যবস্থা। টেংরাগিরি বনের মধ্যে কুমিরের বেষ্টনী দেখতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান মো: রনি নামের এক পর্যটক। সেই সময়ে উদ্ধারকর্মী ও টহল ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় পাচ ঘণ্টা পরে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়াও দিন দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ। স্থানীয় কয়েকটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র বনে মধু সংগ্রহ ও পশুচারণের কথা বলে ঢুকে বনের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে এবং নির্বিচারে পাচার করে দিচ্ছে।
জানা জায়, ১৯৬০ সালের ১২ জুলাই সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেয় বন বিভাগ। পরে ১৯৬৭ সালের এই বনাঞ্চলটিকে টেংরাগিরি বন নামকরণ করে ঘোষণা দেয়া হয়। এর আগে স্থানীয়দের কাছে হরিণঘাটার বন, পাথরঘাটার বন ও ফাতরার বনসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ হাজার ৬৩৪ একর জমির ওপর তালতলী উপকূলীয় টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে সকিনা বিটের আওতায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে ইকোট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করে। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। ওই সময় ইকোট্যুরিজমে পাঁচটি কুমির, ৯টি হরিণ, ২৮টি শূকর ও একটি মেছোবাঘ ছিল। খাবার সরবরাহে সঙ্কটের কারণে ২০১৮ সালে সংরক্ষিত এলাকা থেকে শূকর, কচ্ছপ ও মেছোবাঘ বনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এরপর হরিণের বেষ্টনী থেকে চারটি হরিণও ছেড়ে দেয়া হয়। বর্তমানে ইকোপার্কের সংরক্ষিত বেষ্টনীতে দু’টি কুমির ও তিনটি হরিণ রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সদস্য খোকন বলেন, তালতলী টেংরাগিরি ইকোপার্কটি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় জায়গা। ফরেস্ট বিভাগের পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় বর্তমানে অরক্ষিত। এটা আসলেই কাম্য নয়।
ইকোপার্কে নিরাপত্তা জোরদার করতে কী কী করণীয় এ বিষয়ে তিনি বলেন, ফরেস্ট বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ দিলে যেমন বনটি সংরক্ষিত থাকবে তেমনি ধর্ষণ, পর্যটকদের নিরাপত্তাহীনতা, বন উজাড়ের মতো কোনো ঘটনা ঘটবে না। ফরেস্ট বিভাগের পাশাপাশি পর্যটন উন্নয়ন করপোরেশনের বিশেষ তদারকির জন্য বিশেষ টিম রাখার সুপারিশ করেন তিনি। সোনাকাটা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুলতান ফরাজী জানান, ইকোপার্কে নিরাপত্তা জোরদার করতে জনবল ও রাস্তাঘাট সংস্কারসহ টেংরাগিরি বন থেকে সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত যেতে যে ছোট ছোট খালগুলো আছে তার উপরে কালভার্ট নির্মাণ করলে দর্শনার্থীদের সুবিধা হতো ও পাশাপাশি সরকারের অনেক রাজস্ব আয় বাড়াত।
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা বন কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা সর্বদা চেষ্টা করি বনের মধ্যে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। তা ছাড়া বনের মধ্যে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয় সেসব বিষয়ে তিনি সামাজিক অসচেতনতাকে দায়ী মনে করছেন। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক ও স্থানীয়দের সচেতনতায় টেংরাগিরি ইকোপার্কের মধ্যে অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব। বনের গাছ ও বনজসম্পদ লুটের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়ে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement