২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আট দফা দাবিতে ঐক্য পরিষদের শাহবাগ অবরোধ

-

সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের বিচারসহ আট দফা দাবিতে শাহবাগে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গতকাল শনিবার সকাল ৬টায় সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে গণ-অনশন ও গণ-অবস্থান করে সংগঠনটি। দুপুর সাড়ে ১২টায় মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির পানি পান করিয়ে আন্দোলনকারীদের অনশন ভাঙান। গণ-অবস্থান চলাকালে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে সংগঠনটির একাংশ। অনশন ভাঙার পর একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় ছেড়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের দিকে যান সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
গণ-অনশন ও গণ-অবস্থানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্রকুমার নাথ সংগঠনের পক্ষে আট দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবি হিসেবে তিনি বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন। ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের চিকিৎসার এবং নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে অন্যূন ২০ লাখ টাকা প্রদান বিকল্পে প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগের দাবি। বস্তুনিষ্ঠ নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ে শাস্তি নিশ্চিতকরণ, হামলাকারীদের প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ। বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও যারা সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণ, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি তাদেরও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলি তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশ এবং সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গীকার দ্রুত বাস্তবায়নের উল্লেখ করা হয়। তিনি তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে মণীন্দ্র বলেন, আমাদের দাবিসমূহের অগ্রগতি পর্যালোচনায় রেখে প্রয়োজনে পরবর্তীতে এসব দাবি সমর্থনে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ‘চল চল ঢাকায় চল’ সেøাগানে ঢাকায় সমবেত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করছি। দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিটি সংগঠন পৃথক পৃথক ও যৌথভাবে জনসংযোগ ও প্রতিবাদী কর্মসূচি এগিয়ে নেবে। আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী শ্যামাপূজায় দীপাবলি উৎসব বর্জন, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬.১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে নিজ নিজ মন্দিরে নীরবতা পালন এবং মন্দির-মণ্ডপ ফটকে কালো কাপড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিরোধী সেøাগানসংবলিত ব্যানার টাঙানোর বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিবাদী কর্মসূচির সাথে সংহতি জ্ঞাপন করে এই কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সর্বস্তরের পূজার্থীদের প্রতি আকুল আবেদন জানান মণীন্দ্রনাথ।
কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাসংঘ, বাংলাদেশ সনাতন কল্যাণ জোট, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতি, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, জাতীয় হিন্দু ফোরাম ও হিন্দু ছাত্র ফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংরক্ষণ সমিতি, ইন্টারন্যাশনাল শ্রী শ্রী হরি গুরুচাঁদ মতুয়া মিশন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সংহতি জানিয়ে অংশ নেয়।
গণফোরামের প্রতিবাদ : এদিকে সকালে রাজধানীর শাহবাগ সড়ক দ্বীপে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে গণফোরাম। সমাবেশ শেষে সংগঠনটি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের গণ-অনশন ও গণ অবস্থান কর্মসূচির সাথে সংহতি প্রকাশ করে। সমাবেশে গণফোরামের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, এই সাম্প্রদায়িক হামলার সময়ে প্রশাসন, সরকার এবং সরকারদলীয় নেতাকর্মীসহ কাউকেই আমরা পাইনি। হামলার সময় পুলিশকে ফোন করলে পুলিশ বলে ওপরের নির্দেশ নেই। অর্থাৎ যারা ভাঙচুর করবে, হত্যা করবে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে না। এ সময় তিনি অনতিবিলম্বে সব ঘটনার সুষ্ঠু বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন রশীদ, যুব গণফোরামের সদস্য সচিব মাহমুদল্লাহ মধু, গণফোরাম ঢাকা মহানগরীর কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুবুল ইসলাম প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement