২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কুমিল্লার ঘটনা

ইকবালসহ তিনজনের ৭ দিনের রিমান্ড

-

কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন শরিফ অবমাননার মামলায় গ্রেফতার ইকবাল হোসেনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল শনিবার দুপুরে পুলিশ তাকে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিথিলা জাহানের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই আদালতে ৯৯৯-এ কল করা ইকরাম, মসজিদের খাদেম ফয়সাল ও তার সহযোগী হুমায়ুনের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এ সময় কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমদে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল মণ্ডপে কুরআন রাখার কথা স্বীকার করেছে। ঘটনার বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে এবং স্বীকারোক্তি যাচাই-বাছাই করতে ইকবালসহ অপর তিনজনকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাত দিনের রিমান্ড নেয়া হচ্ছে। গত শুক্রবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে তাকে কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় আনা হয়। গত ১৩ অক্টোবর ভোররাতে নগরীর নানুয়ার দীঘিরপাড় এলাকার একটি পূজামণ্ডপে কুরআন রেখেছিল ইকবাল।
এ ঘটনায় কুমিল্লা নগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পরে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে ইকবালই পাশের দারোগাবাড়ি মাজারের মসজিদ থেকে কুরআন নিয়ে গভীর রাতে মণ্ডপে রাখে।
অভিযুক্ত ইকবাল মাদকাসক্ত এবং মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে পরিচিত
সিসি টিভি ফুটেজ দেখে গত বুধবার ইকবালকে শনাক্তের কথা জানায় পুলিশ। অভিযুক্ত ইকবাল কুমিল্লা মহানগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুরপাড় এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার সকালে দ্বিতীয় মুরাদপুর লস্করপুকুর এলাকায় গিয়ে জানা যায়, সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজে শনাক্ত হওয়া ইকবাল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত এবং মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে পরিচিত। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। এরই মধ্যে বিয়ে করেছেন দুটি।
প্রথম বিয়ে করেছিলেন কুমিল্লার পার্শ্ববর্তী চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়। ওই সংসারে ১০ বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। তার পাগলামির কারণে সাত-আট বছর আগে স্ত্রী আশা বেগম তাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করছেন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাদৈর গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ইকবাল। দুই বছর তাদের সংসার ভালোই চলছিল। এরই মধ্যে তাদের কোলজুড়ে আসে এক মেয়েসন্তান। তিন বছর আগে আবার মাদকাসক্ত হয়ে পাগলামি শুরু করেন ইকবাল। পরে দ্বিতীয় স্ত্রী রুমিও তাকে ছেড়ে চলে যান বাবার বাড়ি। এরপর থেকে তার পাগলামি আরো বেড়ে যায়।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ইকবাল বেশির ভাগ সময় থাকতেন লস্করপুকুর এলাকায় নানীর বাসায়। এ ছাড়া তিনি নগরীর বিভিন্ন মসজিদ ও মাজারে অবস্থান করতেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরেও তার আসা-যাওয়া ছিল। তাদের দেয়া ভোগও খেতেন ইকবাল। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ইকবাল যেহেতু মানসিক ভারসাম্যহীন ও মাদকাসক্ত, তাই তিনি নিজে এ কাজ করতে পারেন না। তাকে দিয়ে কেউ করিয়েছে।
ইকবালের মা বিবি আমেনা বলেন, সে ১৬-১৭ বছর বয়স থেকে মাদকাসক্ত হয়ে পাগলামি করে আসছে। তার দ্বিতীয় স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকে সে আমার মায়ের কাছে থাকতো। ঘটনার দু’দিন আগে ১১ অক্টোবর বিকেলে নেশা করে আমার সঙ্গে দেখা করতে বাসায় আসে। কেন এসেছো জিজ্ঞেস করলে কথা না বলে চলে যায়। এরপর থেকে আর বাসায় আসেনি।
ইকবাল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে একজন দিনমজুর। রাজমিস্ত্রির জোগালি (সহকারী) ও রঙের কাজ করতো। বউ চলে যাওয়ার পর থেকে সে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এরপর থেকে সে মাজারে মাজারে এবং মসজিদের বারান্দায় থাকে। তার পাগলামির কারণে মা-বাবা বাড়িতে জায়গা না দেয়ায় নানীর সঙ্গে থাকতো। নানুয়ার দীঘিরপাড় এলাকা থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে বুধবার সন্ধ্যায় ইকবালের নাম প্রকাশ করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement