১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গতিতে পিছিয়ে দোহাজারী-ঘুনদুম পদ্মায় রেলপথ ও রূপপুর বিদ্যুৎ

ফাস্ট ট্রাকের প্রকল্প
-

ফাস্ট ট্রাক মানে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও চরম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প। এই তালিকায় থাকা সাত প্রকল্পের মধ্যে চারটির কাজের গতি সন্তোষজনক না। যদিও পদ্মা বহুমুখী সেতু, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর ও মেট্রোরেল লাইন-৬ এর অগ্রগতি অনেকটাই শেষের পথে। এই সাত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪২ হাজার ৬৮৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা বলে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগই এখনো মাঠপর্যায়ের কাজ। মহামারী করোনার কারণে মাঠপর্যায়ের কাজগুলোর অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হয় বলে পরিকল্পনা কমিশন ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো বলছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের উচিত হবে ফাস্ট ট্র্যাকের এসব বড় ব্যয়ের প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ করার জন্য বিশেষ নজর দেয়া।
সর্বশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, ওই সাত প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৮২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এখানে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ৪৩ হাজার ১৭৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। দেশের সর্ববৃহত্তম সেতু পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের বাস্তব বা ভৌত অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। যেখানে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৮৬ দশমিক ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ২৬ হাজার ৪০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধিত এই প্রকল্পটি আগামী ২০২২ সালের জুনে সমাপ্ত করার কথা। মোট ৩০ হাজার ১৯০ কোটি টাকার এই সেতু প্রকল্পের কাজ ২০১৪ সালের নভেম্বরে শুরু করা হয়। তবে প্রকল্পের শেয়াদ ২০০১ সালের জানুয়ারিতেই শুরু হয়। চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। দ্বিতীয় সংশোধিত মেয়াদ অনুযায়ী এখন আগামী বছরের জুনে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসনের জন্য বাকি কাজ শেষ করার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
অন্য দিকে, রাশিয়ার ঋণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের বাস্তব অগগ্রতি ৩৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে এই প্রকল্পটি শুরু করা হয়। আগামী ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত করা কথা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ অগ্রগতির জন্য খরচ হয়েছে ৪৩ হাজার ১৭৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। এই প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এখানে রাশিয়ার ঋণ হলো ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে প্রকল্পটির জন্য ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে।
এই তালিকায় রয়েছে মহেশখালীর-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়নকার্যক্রম। এখানে ১২ শ’ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পসহ মোট ১২টি প্রকল্প। বিদ্যুৎ প্রকল্পে মোট খরচ ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হলো ৫৯ শতাংশ। যার বিপরীতে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৫০ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার মতো। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ রয়েছে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। আগামী ২০২৩ সালের প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা।
যোগাযোগ খাতের ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের বা মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। মোট অর্থ ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৫৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৭৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১২ সালের জুলাইয়ে অনুমোদন নিয়ে শুরু করে। প্রকল্পের কাজ অনেকটা দৃশ্যমান।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা বন্দরের ভৌত কাজ ২০১৫ সালের জুলাইয়ে শুরু করা হয়। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পের বাস্তব কাজ হয়েছে ৮৩ শতাংশ। ৩ হাজার ৭০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৭০ দশমিক ১৯ শতাংশ। আগামী ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। নিজস্ব অর্থায়ন চার হাজার ৩৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বৃহত্তম পদ্মা বহুমুখী সেতুতে রেল সংযোগের জন্য নেয়া প্রকল্পটির পাঁচ বছর ৯ মাসে প্রকল্পের কাজ হয়েছে সাড়ে ৪৪ শতাংশ। বাস্তব কাজের অগ্রগতিতে খরচ হয়েছে ৪৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ বা ১৯ হাজার ৫৬৩ কোটি ১০ হাজার টাকা। ২১ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণসহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুমোদিত খরচ হলো ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
আর দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন রেলের ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটির বাস্তব কাজ হয়েছে ৬৩ শতাংশ। তবে রামু থেকে সীমান্ত পর্যন্ত কাজে মিয়ানমার সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ পর্যন্ত ৩২ দশমিক ৮১ শতাংশ অর্থ অর্থাৎ পাঁচ হাজার ৯১৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে এই প্রকল্পে। প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিদেশী ঋণ ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১০ সালের জুনে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ২০২২ সালের জুনে সমাপ্ত করার কথা।
এ দিকে এডিপিভুক্ত নয় তবে ফাস্ট ট্র্র্যাকের তালিকার আরেকটি প্রকল্প রামপালে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের ভৌত কাজের অগ্রগতি ৭০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ৭০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার ৭১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় বাগেরহাটের রামপালে একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রথম ইউনিট ২০২১ সালের ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২২ সালের মার্চে বাস্তবায়ন করার কথা।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, ফাস্ট ট্র্যাক ও মেগা প্রকল্পগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ করা। করোনার কারণে প্রকল্পে কাজের ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যাঘাত ঘটেছে। সরকারের উচিত হবে এসব প্রকল্পের ব্যাপারে কঠোর মনিটরিং করা। অন্যান্য কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে বা ধীরে রেখে এসব বড় ব্যয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোকে আগে সমাপ্ত করা। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পগুলো শেষ করতে না পারলে আবারো ব্যয়ের ঘানি টানতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল