২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
কুমিল্লার ঘটনা প্রসঙ্গে রিজভী

আওয়ামী লীগ সর্প হইয়া দংশন করে ওঝা হইয়া ঝাড়ে

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখছেন রুহুল কবির রিজভী: নয়া দিগন্ত -

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপের ঘটনা সরকারের পূর্বপরিকল্পিত মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একটা কথা আছে সর্প হইয়া দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাড়ে। আওয়ামী লীগ সরকারে যারা অবৈধভাবে আছে তারা সেই কাজটি করছে। সর্প হইয়া দংশন করছে আবার ওঝা হয়ে ঝাড়ার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ, কোনো রাজনৈতিক দলই এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেনি। এগুলো করেছে এই সরকার। তাদের ব্যর্থতা, গণতন্ত্রহীনতা, জোরজবরদস্তির মাধ্যমে ডাকাতের মতো ক্ষমতা দখল করে আছে, এখান থেকে বিশ্বে নিজের ভাবমূর্তি ভালো করার জন্য কুমিল্লার ঘটনা ঘটিয়েছে সরকার। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের উদ্যোগে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসানুল হুদার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন- লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, কুমিল্লার ঘটনা ঘটানোর কারণ হলো প্রধানমন্ত্রী দেখাচ্ছেন এই দেশে সাম্প্রদায়িক ঘটনা যাই হোক আমি কঠোর হস্তে দমন করতে পারি। এখন প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা তাই বলছে। তার মানে কুমিল্লার ঘটনা পরিকল্পিত, সাজানো, চক্রান্তমূলক। আর এইগুলো ঢাকতে গিয়ে কত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে। সরকারের তো দয়ামায়া নেই এই দেশের ওপর। কারণ তারা চায় প্রভুদের সন্তুষ্ট করতে। সে জন্য এমন কোনো কাজ নেই যে, তারা করতে পারেন না। তাই কুমিল্লার ঘটনা এই সরকারের পরিকল্পিত।
দ্রব্যমূল বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এশিয়ার মধ্যে চালের দাম এখন সবচাইতে বেশি বাংলাদেশে। পেঁয়াজ, মরিচ, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর দাম হু-হু করে বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে হাত দিলে বিদ্যুতের মতো শক করে। আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। সুপেয় পানির দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের কথা তো দূরে থাক বরং সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। কথা বলার অধিকার নাই। গণতন্ত্র নাই। ভোটের অধিকার নাই। আর শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের কবরের উপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়চ্ছে। কারণ তার লোকের পকেট যেন ভারী হয়। এসব থেকে দেশের জনগণের দৃষ্টি সরানোর জন্য কুমিল্লার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সরকার নাকি সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা দিচ্ছে। তিনি ক্ষমতায় আসার পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। আমরা আগে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের কথা শুনি নাই। তবে এই সরকারের আমলেই আমরা এই কথা শুনেছি।
তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- বাংলাদেশের সব সম্প্রদায়ের অতীত ঐতিহ্য অনুযায়ী বন্ধুত্বের বন্ধনের মধ্য দিয়ে যেকোনো উসকানি রুখব। দৃঢ় বন্ধন আমরা বজায় রাখব। এই সরকারের উসকানির মুখে আমরা কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাব না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা রাজনীতিতে এসেছেন প্রতিশোধ নিতে। আর তিনি শত্রুপক্ষ বানিয়েছেন দেশের জনগণকে। তা না হলে তিনি গণতন্ত্র হত্যা করবেন কেন?
নাৎসিবাদের থাবা প্রেস ক্লাবে পড়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, প্রেস ক্লাব মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার একটি জায়গা। চার দিকে যখন ফ্যাসিবাদ ও নাৎসিবাদের জুলুম তখন গণতন্ত্রকামী মানুষ প্রেস ক্লাবে দাঁড়িয়ে তাদের অধিকারের কথা বলতে পারে। আর সাংবাদিকরা দু’লাইন হলেও লিখতে পারে। কিন্তু নাৎসিবাদের থাবা প্রেস ক্লাবে বিস্তার করেছে। এটা বিরল ঘটনা। সেখানে বিএনপিকে সভা করতে নিষেধ করেছে। কারণ হলো দেশে গুম খুন হত্যা আরো ঘটবে অতএব তোমরা কোনো কথা বলতে পারবে না। কেউ মানববন্ধন করতে পারবে না, সভা করতে পারবে না। কথা বলার জন্য যে ন্যূনতম জায়গা ছিল আজ সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কথা বলেছেন এই জন্য আপনি বন্ধ করেছেন? গায়ের জ্বালা একটাই যে, তারেক রহমান লন্ডনে থেকে কথা বলেছেন। তবে যারা অন্যের কণ্ঠ রোধ করে, ফাঁসিতে ঝুলায় সেই ফাঁসির দড়ি ক্রমাগত তার দিকেই যায়। সরকারে যারা আছেন এটা হয়তো টের পাচ্ছেন না। মনে করছেন একের পর এক পার পেয়ে যাচ্ছি। আমাদের ঠেকায় কে? কিন্তু যেদিন ঠেকে যাবেন সেদিন আর্তনাদ করেও পার পাবেন না।


আরো সংবাদ



premium cement