২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্ত করছে: মির্জা ফখরুল

জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: নয়া দিগন্ত -

সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আপনারা দেখেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজায় কতগুলো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে কুমিল্লা ও চাঁদপুরে। চাঁদপুরে চারজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে এবং নির্বিচারে গুলি করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার যে চক্রান্ত, তা সরকারের চক্রান্ত। তারা এ দেশে সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, ধ্বংস করতে চায় এবং দেশে স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায়। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং একই সাথে অবিলম্বে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। ফখরুল বলেন, আপনারা শুনেছেন যে কুরআন শরিফ নিয়ে রেখেছে পূজামণ্ডপে। যারা এটি করেছে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্যই করেছে, দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্যই করেছে। অন্য দিকে আবার পুলিশ গুলি চালায় নির্বিচারে, সেটিও একই কারণে তারা করেছে। একটি জায়গা না, বহু জায়গায় এগুলো করেছে। আমি আপনাদের সতর্কতার সাথে বলতে চাই, আমাদের দেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এসব ঘটনা যারা ঘটায় তারা সম্পূর্ণভাবে সরকারের এজেন্সির মাধ্যমে অশান্তি সৃষ্টি করবার জন্য এবং আসল জায়গা থেকে অন্য দিকে দৃষ্টি নেয়ার জন্য করছে। তিনি বলেন, আমার দেশের সঙ্কট কী? দেশের এখন সঙ্কট হচ্ছে গণতন্ত্র, দেশের এখন সঙ্কট হচ্ছে কথা বলার অধিকার নেই। আমাদেরকে কোথাও দাঁড়াতে দেয়া হয় না, মানুষের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে। একটি ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী দানবের মতো শাসন চেপে বসে আছে আমাদের ওপর। সেটি নিয়ে যখন কথা বলছি, কাজ করছি তখন এসব ঘটনা ঘটিয়ে তারা ডায়ভার্ট করতে চায় জনগণের দৃষ্টিকে।
নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন বাংলাদেশে হাসির কথা। মানুষ নির্বাচন ভুলে গেছে। লাস্ট নির্বাচন ২০০১ সালে হয়েছে তারপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০০৮ সালে যেটা হয়েছে, সেটা একটি অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে, সেটা কখনো মেনে নিতে পারি না। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন সাহেব বলেছেন, বাংলাদেশে যে প্রেক্ষাপট আছে তাতে একটি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন কমিশন কিছুই করতে পারবে না, সম্ভব না। যত ভালোই লোককে নিয়ে দেন, সরকার যদি নিরপেক্ষভাবে কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনা করতে না দেয় তা হলে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। তিনি বলেন, কিন্তু সরকার ওদিকে যাবে না। তারা সার্চ কমিটির মাধ্যমে সেই লোকগুলো নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এটি কোনো দিনই গ্রহণযোগ্য হবে না। সত্যিকার অর্থে যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হয় আগে সরকারকে সরে যেতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি পাল্টাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘মানুষকে জাগিয়ে তোলা’র আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ কোথাও বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, নব্বইয়ের আন্দোলনের নেতাদের একটা অনুষ্ঠান ছিল প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে। সেখানে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছিলেন ভার্চুয়ালি। এটি তারা সহ্য করতে পারল না। তার পরের দিন থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সরকারের তথ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করলেন খুব অন্যায় হয়েছে, বেআইনি হয়েছে। আরে ভাই এত ভয় কেন? তারেক সাহেব তো সেই আট হাজার মাইল দূর থেকে একটি বক্তব্য দিয়েছেন। আপনারা এত ভয় পাচ্ছেন কেন। জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা হয়। সংগঠনের সভানেত্রী অধ্যক্ষ নূর আফরোজ বেগম জ্যোতির সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইসহাক সরকার প্রমুখ নেতা বক্তব্য রাখেন।


আরো সংবাদ



premium cement