২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

৪৮ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমেছে ২,২১১ কোটি টাকা

১১ মাসে টিসিবির লোকসান ৫ গুণ; মুনাফা কমেছে বিটিআরসি ও পেট্রোবাংলার; বেড়েছে বিপিসি, আরইবি ও বেজা’র
-

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে ৪৮টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিট মুনাফা দুই হাজার ২১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা কমেছে। এ ছাড়া একই অর্থ বছরে ৩৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নিট মুনাফা অর্জন করেছে ১১ হাজার ৯২৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অন্য দিকে ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নিট লোকসান দিয়েছে তিন হাজার ৪২৬ কোটি আট লাখ টাকা। আর ‘নো লস-নো প্রফিট’ অবস্থানে রয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান (বিএসএমআরএন)। লাভ-লোকসান মিলিয়ে ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৪৯৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ দিকে লোকসানের দিক দিয়ে সর্বশীর্ষে রয়েছে টিসিবি। এক বছরের ব্যবধানে এই প্রতিষ্ঠানের লোকসান বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এর আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) লাভ-লোকসান মিলিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৭১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সেই অর্থবছরে ৩৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মোট ১৩ হাজার ২০৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছিল। অন্য দিকে ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মোট নিট লোকসান দিয়েছিল তিন হাজার ১৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে সমাপ্ত অর্থবছরে লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান বেড়েছে প্রায় ৪০৮ কোটি টাকা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ‘ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’ (টিসিবি) সর্বোচ্চ এক হাজার ৩৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। এর আগের অর্থবছরে (২০১৯-২০) সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৮৬ কোটি টাকা। চলমান করোনা পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অধিক মূল্যে পণ্য কিনে ভর্তুকি দামে বিক্রি করায় টিসিবি’র লোকসান বেড়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। তবে অর্থ বিভাগ পক্ষ থেকে এত লোকসান বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন’ (বিএসএফআইসি) ৯৭১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছিল ৯২৯.০৯ কোটি টাকা) এবং ‘বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন’ (বিসিআইসি) ৬৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা (গত অর্থবছরে লোকসান দিয়েছিল ৭০২.১৮ কোটি টাকা) লোকসান দিয়েছে।
এ দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সব ক’টি পাটকল বন্ধ থাকায় গত অর্থবছরে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)-এর লোকসান আগের অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। সমাপ্ত অর্থবছরে বিজেএমসি’র লোকসান কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরে সংস্থাটি লোকসান দিয়েছিল ৭৭৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
অন্যান্যের মধ্যে এফডিসি ২০ কোটি ২০ লাখ টাকা (আগের অর্থবছরে ১৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা); বিটিএমসি ১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা (আগের অর্থবছরে ১১ কোটি তিন লাখ টাকা) লোকসান দিয়েছে।
ছিল মুনাফায় এখন লোকসানে : লোকসান দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দীর্ঘ দিনের লোকসানি প্রতিষ্ঠান ‘পিডিবি’ ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় চার কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করলেও গত অর্থবছরে আবারো ১২৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। এ ছাড়া আগের অর্থবছরে ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা মুনাফা অর্জনকারী ‘বিআইডব্লিউটিএ’ ৮১ কোটি ছয় লাখ টাকা। ১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা মুনাফা অর্জনকারী ‘বিএসসিআইসি’ ১১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ১৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা মুনাফা অর্জনকারী ‘বিইআরসি’ চার কোটি ৩৮ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে।
লাভজনক অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমেছে : পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সমাপ্ত অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত শীর্ষ লাভজনক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একমাত্র বিপিসি’র মুনাফা কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া বেজা ও রাজউক-এর মুনাফা বেড়েছে এবং আগের বছর প্রায় ২১৮ কোটি টাকা লোকসান দেয়া প্রতিষ্ঠান ‘আরইবি’ ৭১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। অন্য দিকে বিটিআরসি, পেট্রোবাংলা ও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, বিবিএ ও সিপিএ’র মুনাফা কমেছে।
সমাপ্ত অর্থবছরে বিপিসি পাঁচ হাজার ৮৩৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা (আগের অর্থবছরের মুনাফা ৫,০৬৬.৫৪ কোটি টাকা); বিটিআরসি দুই হাজার ২৩২ কোটি ২৯ লাখ টাকা (আগের অর্থবছরের মুনাফা ৪,৪০২.২১ কোটি টাকা); পেট্রোবাংলা ৭৫৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা (আগের অর্থবছরের মুনাফা ৯৪০.৬৬ কোটি টাকা); বেজা ৪৬২ কোটি ২৩ লাখ টাকা (আগের অর্থবছরের মুনাফা ৩৬৭.৩৪ কোটি টাকা); ‘সিভিল এভিয়েশন অথরিটি’ ৪০২ কোটি তিন লাখ টাকা (আগের অর্থবছরের মুনাফা ৭২৩.৬০ কোটি টাকা); বিবিএ ৩৭৭ কোটি ৯ লাখ টাকা (আগের অর্থবছরের মুনাফা ৩৮১.৭২ কোটি টাকা); সিপিএ ৩০৫ কোটি ১০ লাখ টাকা (আগের অর্থবছরের মুনাফা ৮০৭.৬৩ কোটি টাকা) এবং রাজউক ২১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা (আগের অর্থবছরে ১৫৮.৮৫ কোটি টাকা) মুনাফা অর্জন করেছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠাগুলোর লাভলোকসানের চিত্র এখন পর্যন্ত ১১ মাসের সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। আগামী নভেম্বর নাগাদ ১২ মাসের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া সম্ভব হবে।


আরো সংবাদ



premium cement