১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বৈশ্বিক টিকা বৈষম্য নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্ম দেবে : বাড়াবে ধনী-গরিব ব্যবধান

-

শতাব্দীর সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী মহামারী কোভিড-১৯ মোকাবেলার অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী যে টিকা কার্যক্রম চলছে, তাতে জগৎবাসী আশায় প্রহর গুনছে এই ভেবে যে সামনে সুদিন আসছে, কোভিড-১৯ মহামারীর রাহুগ্রাস থেকে শিগগিরই মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামে ধীর গতি, টিকা বণ্টনে বৈষম্য, আন্তঃদেশীয় সমন্বয়হীনতা, টিকা রাজনীতি, টিকা জাতীয়তাবাদ ও বর্ণবাদ, উন্নত বিশ্বের কপটতা এবং পৃথিবীর কোথাও কোথাও কোভিড-১৯ এর তাণ্ডব জনমনে সবার জন্য টিকা আশা হতাশায় রূপ নিয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন শেরেবাংলা নগরস্থ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন। নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কোভিড মুক্ত পৃথিবী কখনই সম্ভব নয়, যতক্ষণ না প্রত্যেকেই ভ্যাকসিনের সমান সুবিধা পাবে। নি¤েœ তার সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : মহামারীর এ বিশ্বে ভ্যাকসিন ইকুইটি নামে একটা কথা শুনে থাকি এর মানে কী? এটা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
ডা: তৌহিদ হোসাইন : কোভিড-১৯ শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম বিশ্ব মহামারী রোগ। ভ্যাকসিন ইকুইটি বা টিকা সমতা মানে হলো পৃথিবীর সকল মানুষ যে যেখানেই অবস্থান করুক না কেন, ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে, ব্যক্তির অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থান যাই হোক না কেন। বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমত গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন ভ্যাকসিন ইকুইটি কোনো রকেট বিজ্ঞান নয়, নয় কোনো দাতব্য চিকিৎসা ব্যবস্থা বরং প্রত্যেকের জন্য এটি একটি সর্বোত্তম স্মার্ট জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা। দ্বিতীয়ত যে কোনো ব্যক্তি পৃথিবীর যে প্রান্তেই যে অবস্থায় অবস্থান করুক না কেন, এই ভ্যাকসিন সকলের জন্য সমান সুরক্ষা দেবে। তৃতীয়ত পৃথিবীর যে কোনো দেশের নাগরিক হোক সে ধনী কিংবা অতি গরিব কোভিড-১৯ এর হুমকির মোকাবেলায় সমান গুরুত্ব পাবে।
চতুর্থত চলমান ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এ পৃথিবীবাসীর অসমতা অশান্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারে এই ভ্যাকসিন ইকুইটি।
পঞ্চমত ভ্যাকসিন ইকুইটিই একটা সুযোগ, যেন তা হয় গোটা মানব জাতিকে একত্রে কাজ করার বড় উদ্যোগ।
ষষ্ঠত ভ্যাকসিন ইকুইটি মানে একটা স্বস্তির পৃথিবী।
সপ্তমত ভ্যাকসিনে সমতায় আনা পশ্চিমা আর মানবতাবাদীদের একটি বড় পরীক্ষা।
সিডিসির আফ্রিকা অঞ্চলের ডাইরেক্টর ডা: এনকেগাসং বলেছেন, পৃথিবীব্যাপী হাই ইমিউনিটি তো দূরের কথা, এমনকি ৬০ শতাংশ লোককেও ইমিউনাইজ করতে পারব না, যদি না আমরা আমাদের অংশীদারিত্ব, সহযোগিতা ও ক্ষমতা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রয়োগ করি। আমরা এটাও বুঝতে পেরেছি, ভ্যাকসিনই একমাত্র সমাধান এই প্যান্ডেমিক পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার।
প্রশ্ন: মহামারী নিয়ন্ত্রণের যে টিকা কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী চলছে। এখানে বৈশ্বিক টিকা বৈষম্য বলতে আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন?
ডা: তৌহিদ : টিকা উৎপাদন একটি দীর্ঘস্থায়ী জটিল, কঠিন ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। সকল দেশ ও কোম্পানির পক্ষে এর উৎপাদন করা সম্ভব নয়। তাই টিকা উৎপাদনের দৌড়ে অনেক দেশ এগিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত কয়েকটি ধনী ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। যাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এত অল্প সময়ে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বাজারে নিয়ে এসেছেন তারা অবশ্যই ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা পাওয়ার একশত ভাগ দাবিদার। কিন্তু এখনতো দেখছি, টিকা উৎপাদন করতে পারা বা না পারা কিংবা তা কিনতে পারা বা না পারার উপর ভিত্তি করে গোটা পৃথিবী মূলত তিনটি ব্লকে ভাগ হয়ে গেছে। প্রথমত যারা একই সাথে টিকা উৎপাদক এবং ধনী, দ্বিতীয়ত যারা টিকা উৎপাদন করে নাই বটে কিন্তু কেনার সামর্থ্য রাখে, তৃতীয়ত যাদের টিকা উৎপাদন করার ক্ষমতাও নেই, এমনকি কেনার সামর্থ্যও নেই বা থাকলেও একেবারেই সীমিত। যারা উৎপাদক এবং কিনে ফেলারও সামর্থ্য রাখে তারা এত পরিমাণে নিজেদের জন্য স্টক করে রেখেছে যে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন থাকতেও এই ধরাধামেরই অন্যত্র সবাই পাচ্ছে না।
যে সমস্ত দেশের ভ্যাকসিন উৎপাদন করার বা কেনার সামর্থ্যও নেই অথবা থাকলেও সীমিত, তাদেরকে সহযোগিতার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালের এপ্রিলে একটি ভ্যাকসিন সহযোগিতা সংস্থা গঠন করে যার নাম হল কোভিড-১৯ গ্লোবাল এক্সেজ ভ্যাকসিন সংক্ষেপে কোভ্যাক্স। ২০২০ সালের ১৫ই জুলাই এর মধ্যে ১৬৫ টি দেশ এই প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত হয়। কথা ছিল টিকা উৎপাদনকারী দেশগুলো কোভ্যাক্সকে মার্চের মধ্যে ১০ কোটি এবং মধ্য আগস্টের মধ্যে ৬০ কোটি ডোজ টীকা সরবরাহ করবে। কিন্তু কেউই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক টিকা সরবরাহ করে নি। এই সময়ের মধ্যে কোভ্যাক্স মাত্র বিশ কোটি ডোজ টিকা ১৪০টি দেশে সরবরাহ করতে পেরেছে। পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম এবং ভারতে অবস্থিত সেরাম ইনস্টিটিউট কোভ্যাক্সকে মোট চাহিদার ৬০ শতাংশই দেয়ার কথা। কিন্তু তাদের দেশেই টিকা সংকট এই ধুয়া তুলে কোভ্যাক্সের সাথে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। এমন কি আমাদের দেশের অগ্রিম টাকা দিয়ে টিকা বানিয়ে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে মোট তিন কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করার চুক্তিনামা ভঙ্গ করে হঠাৎ টিকা না দেয়ার ঘোষণা দেয়। বোকার মতো একক উৎসের উপর নির্ভর করায় আমাদের দেশে কিছুদিনের জন্য হলেও টিকা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে, এখনও ঘটছে। অপরদিকে ধনী দেশগুলো তাদের টাকা আর ক্ষমতা আছে বলে এত পরিমান ভ্যাকসিন কিনে মজুদ করে ফেলে যে গোটা বিশ্ব টিকার গভীর সঙ্কটে পড়ে যায়। একজন মানুষকে টিকা দিতে লাগে দুইটি ডোজ অথচ জাতিসঙ্ঘের হিসাব মতে ধনী দেশগুলো কিনে রেখেছে তাদের প্রয়োজনের তুলনায় ৬২ গুণ বেশি টিকা। অনেক দেশ এখন টাকা হাতে নিয়েও টিকা পাচ্ছে না। ফলে যা হওয়ার তাই অর্থাৎ চরম ভ্যাকসিন বৈষম্য। একই পৃথিবী একই মানুষ আর একই ভ্যাকসিন অথচ এই পৃথিবীর এক প্রান্তে টিকার উদ্বৃত্ত আর অন্য প্রান্তে যেন টিকার দুর্ভিক্ষ বা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর।
মানবতার জয়গান গেয়ে যারা এই গরীব মানুষগুলোকে নিত্যদিন ঘুম পাড়ায়, তারাই আবার কৃত্রিমভাবে টিকার দুর্ভিক্ষ তৈরি করে উদ্বৃত্ত ঘরে জমায়। কেন এই দ্বিমুখী আচরণ-বক্তব্যের অসারতা, কেন এই কপটতা। এই সমস্ত কথিত মানবতাবাদীদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণে জাতিসঙ্ঘ কমিশন গঠন করে যদি টিকার বৈষম্যের ব্যাপারে নিরপেক্ষ অনুসন্ধান চালায় তাহলে আমাদের বিশ্বাস কেঁচো খুঁড়তে কেউটে সাপ বের হয়ে আসবে।
প্রশ্ন: ধনী দেশগুলো এই যে টিকা বৈষম্য তৈরি করল, বিশ্বে এর কি প্রভাব হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
ডা: তৌহিদ: এর প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এই টিকা বৈষম্য সমাজ-রাষ্ট্রে পূর্ব থেকে চলমান উত্তর-দক্ষিণের ব্যবধানকে আরো বাড়িয়ে দিলো এবং লাখ কোটি গরিব দেশের অধিবাসীদের করোনা ঝুঁকিতে ফেলে দিলো। আবার অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে হয় বিশ্বকে কৃত্রিমভাবে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করে ফেলবে। একটি হবে টিকা যুক্ত ধনী বিশ্ব, অন্যটি হবে টিকা বিহীন গরিব-ভিক্ষুক বিশ্ব। টিকাযুক্তরা টিকাবিহীন বিশ্বে ভ্রমণ করবে না এই ভেবে যে তাদের যদি আবার করোনা হয়ে যায়। আর টিকাবিহীন বিশ্ব টিকা যুক্ত বিশ্বে ঢোকার সুযোগ পাবে না এই কারণে যে তারা করোনা মুক্ত নয়। পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষ করবে করোনার সাথে বসবাস আর অন্য প্রান্তের মানুষ বিধিনিষেধ উঠিয়ে নিয়ে পাবে মুক্ত জীবন খোলা আকাশ। জাতিসঙ্ঘের ধারণানুযায়ী দুই ট্রাক্ট বিশিষ্ট মহামারী পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। উন্নত বিশ্ব দুই ডোজ এমনকি বুস্টার ডোজ পর্যন্ত দিয়ে চলাচলের সমস্ত বাধা উঠিয়ে নিবে আর তাদের কাছে রক্ষিত মেয়াদোত্তীর্ণ টিকার পাহাড় সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে। দ্বিতীয় রুট হবে যারা এখনো টিকা নিতে পারে নাই, তাদেরকে ভাইরাসের দয়া-দাক্ষিণ্যের উপর ছেড়ে দিতে হবে।
ভ্যাকসিন বৈষম্য বিশ্বব্যাপী ধনী গরিবের ব্যবধান বাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে যে ব্যবধানই থাকুক বৈশ্বিক টিকা বৈষম্যের মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের দিকটা আরো ভয়াবহ। টিকা বৈষম্যের ফলে টিকা বিহীন বিশ্ব টিকা যুক্ত বিশ্বের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষোভ তৈরি হবে এবং বিভিন্ন ভাবে ঘটবে এর বিস্ফোরণ। ভ্যাকসিন বৈষম্য পৃথিবীর লাখ কোটি মানুষকে শুধু ঝুঁকির মধ্যেই ফেলবে না বরং ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য প্রধান টেড্রস আধানম গেব্রিয়াসাস বলেন, টিকা নীতিতে কলঙ্কজনক বৈষম্য বিরাজ করায় মহামারীটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। টিকাগুলো ন্যায়সঙ্গতভাবে বিতরণের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী ব্যর্থতা এ মহামারীকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলছে। মহামারী করোনা নিয়ন্ত্রণের নামে টিকা জাতীয়তাবাদ, টিকা বর্ণবাদ টিকা রাজনীতি এবং টিকা কূটনীতির উদ্ভবের কারণে টিকা বৈষম্যকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।
টিকার বা করোনাভাইরাস কারোরই কোনো হাত-পা নেই যে তারা বাহিত হবে। মানুষই এই উভয়ের বাহক। এখন টিকা প্রদানের গতি যদি ভাইরাসের সংক্রমণের গতির চেয়ে কম কিংবা অসম হয় তাহলে এই ভাইরাস মহামারী কোন দিন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। টিকা প্রদানের গতি আর ভাইরাসের সংক্রমণ গতিকে যদি দৌড় প্রতিযোগিতার সাথে তুলনা করি তাহলে অবশ্যই করোনা ভাইরাসের আগে মানব জাতিকে গন্তব্যে পৌঁছতে যা করার দরকার তা-ই করতে হবে। কৃত্রিমভাবে বৈশ্বিক টিকা বৈষম্য সৃষ্টি করে যদি আমরা আজ এই একটা ইলেকট্রন মাইক্রোস্কপিক অণুজীবের কাছে হেরে যাই তাহলে আগামী বিশ্ব আমাদের ক্ষমা করবে না।
প্রশ্ন: টিকা বৈষম্যের কারণে পৃথিবীর কোন অঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
ডা: তৌহিদ: নি¤œ আয় এবং নি¤œমধ্য আয়ের স্বল্পোন্নত দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশ বড় বেশি বৈষম্যের শিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টার্গেট হলো সেপ্টেম্বর ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি দেশেই অন্তত শতকরা দশজনকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা, শতকরা ৪০ জনকে এ বছরের শেষ নাগাদ এবং শতকরা ৭০ জনকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে দুই ডোজ টিকা সম্পন্ন করা। গতকাল পর্যন্ত ৬০১ কোটি লোক অন্তত এক ডোজ টিকা সম্পন্ন করেছে যা বিশ্বের লোক সংখার ৪৩.৭ শতাংশ। বিশ্বে প্রতিদিন টিকা দেয়া হচ্ছে ২ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার লোককে। অথচ ১০৭টি গরিব দেশের ১৩০ কোটি হত দরিদ্র লোকের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ লোক এক ডোজ টিকা সম্পন্ন করেছে। আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ধনী দেশগুলো ১০০ জনকে ১০০ ডোজ টিকাই দিচ্ছে। আরো উদ্বৃত্ত হাতে রাখছে। আর গরিব দেশগুলো ১০০ জনকে দিচ্ছে মাত্র দুই ডোজ। এরই নাম বৈশ্বিক টিকা বৈষম্য।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বর্তমান অবস্থায় জাতিসঙ্ঘের টার্গেট মোতাবেক আফ্রিকার ৭০ শতাংশ দেশ এই সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ১০ শতাংশ মানুষকে কোনোভাবেই টিকা দিতে পারবে না। বর্তমান আফ্রিকায় প্রতিদিন ৪০ লাখ লোককে টিকা দেয়া হচ্ছে। অথচ জাতিসঙ্ঘের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে প্রতিদিন ২ কোটি লোককে টিকা দিতে হবে। এজন্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান সম্প্রতি আফ্রিকার এই দুর্দশায় কাতর কণ্ঠে বলেছেন, বৈশ্বিক এই টিকা বৈষম্য শুধুমাত্র আফ্রিকার জনগণকেই আহত করছে না। এ রকম একটা বিব্রতকর অবস্থায় আমরা সকলেই মর্মাহত। এভাবে ভ্যাকসিনের অসম ডিস্ট্রিবিউশন যত বেশি পারসিস্ট করবে, করোনাভাইরাস যত বেশি দেশে দেশে বিস্তার লাভের ও মিউটেশন-ভ্যারিয়েন্ট গঠনের সুযোগ পাবে, তত বেশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্ম দিয়ে খোদ ভ্যাকসিনের সমস্ত সফলতাকে ভণ্ডুল করে দেবে।
অবশ্য বাংলাদেশ ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত এক ডোজ টিকা দিতে পেরেছে ২,২৮,২১,৩৫৭ জনকে (১৪ শতাংশ) এবং পুরো দুই ডোজ টিকা দিয়েছে ১,৫১,১৫,১৮৫ জনকে (৯.৩ শতাংশ)। যুক্তরাষ্ট্র অন্তত এক ডোজ টিকা দিয়েছে ৬৪.৭ শতাংশ লোককে এবং দুই ডোজ দিয়েছে ৫৫.৫ শতাংশকে। এছাড়াও ১০ লাখ ইমিউনো কম্প্রোমাজড্ লোককে বুস্টার ডোজ দিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য, ইসরাইল, জার্মানি এবং ফ্রান্সসহ অনেক পশ্চিমা দেশ বয়স্ক এবং ইমিউনো কম্প্রোমাইজড্ লোকদের বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করেছে। অথচ জাতিসঙ্ঘ ধনী দেশ গুলোকে বারবার নিবেদন করছে এই বলে যে, যেখানে পৃথিবীর বিশাল অংশের জনগণ এখনো পর্যন্ত একটি ডোজ না পেয়ে করোনা ঝুঁকিতে দিনাতিপাত করছে, সেখানে ধনী দেশ গুলোর বুস্টার ডোজ প্রোগ্রামে যাওয়া আফ্রিকা তথা নি¤œ আয়ের মানুষগুলোর সাথে চরম ও নির্লজ্জ রসিকতা ছাড়া আর কিছুই না।

 


আরো সংবাদ



premium cement