২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ইআরএফ-বিসিসির কর্মশালা

ই-কমার্সের প্রতারণায় ভুক্তভোগী আমি নিজে : বাণিজ্যমন্ত্রী

-

ই-কমার্সের প্রতারনায় খোদ নিজেই ভুক্তভোগী বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, দু’বছর আগে একটি ই-কমার্স সাইটের উদ্বোধনীতে কোরবানির জন্য এক লাখ টাকায় গরুর অর্ডার দিয়ে কাক্সিক্ষত গরু তিনি পাননি। আমাকে যে গরুটি দেখিয়েছিল, আমি সেটি পায়নি। কিন্তু পাঁচ-ছয় দিন পর জানানো হলো আমাকে যে গরুটি দেখানো হয়েছিল তা বিক্রি হয়ে গেছে। পরে আমাকে কম দামে অন্য একটি গরু দিয়েছিল। সাথে একটি ছাগলও পেয়েছিলাম। তিনি বলেন, গরু পাওয়ার আগে টাকা পরিশোধ করে আমি তাদের কাছে বন্দী হয়ে গিয়েছিলাম। তাই পরে ওরা যে গরুটি দিয়েছে, তাই নিয়েছি। তিনি বলেন, ই-কমার্সের জন্য নীতিমালা করার উদ্যোগ নিয়ে দেখি এর পক্ষ-বিপক্ষ আছে।
ইস্কাটনস্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে গতকাল ‘প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) ভূমিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। কমিশনের চেয়ারপারসন মো: মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, কমিশনের সদস্য ড. এএফএম মনজুর কাদির, নাসরিন বেগম এবং জিএম সালেহ উদ্দিন, উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাফরুহ মুরফি, ইআরএফের সভাপতি শারভিন রিনভী, সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশেদুল ইসলাম।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ইভ্যালির প্রতারণা অনেক সময় বোঝাই যায়নি। আড়াই লাখ টাকার হোন্ডা দেড় বা দুই লাখ টাকায় কিভাবে দেয় তারা? উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে পণ্য দেয়ার অফার বাস্তবসম্মত নয়, এটা বুঝতে হবে। সাধারণ মানুষকে এ ধরনের প্রলোভন থেকে সরে আসতে হবে। তিনি বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইভ্যালি, যুবক, ডেসটিনির সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। যদি এ সুযোগটি পাওয়া যেত তাহলে হয়তো ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ গ্রাহকের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হতো। বিষয়টি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিদ্যমান আইনের ৪২০ ধারায় (প্রতারণা) মামলা সহজেই জামিনযোগ্য বলে ইকমার্স-ভিত্তিক আইনটি সংশোধনেরও দাবি উঠেছে। তবে সরকার ই-কমার্স বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে। আমরা ইভ্যালির বিষয়ের দায় এড়াচ্ছি না। আমরা এটিকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাই। আমরা ভাবছি কী করা যায়। কারণ ই-কমার্স নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বহুমত রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এটাও ঠিক দুর্নীতিও বেড়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মানুষকে প্রতারিত করার চেষ্টা করছে। ই-কমার্স বিষয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ইতোপূর্বে যেসব প্রতিষ্ঠান মানুষকে প্রতারিত করেছে, সেগুলোর অনেক সম্পদ আছে। সম্পদগুলো বিক্রয় করলে অনেকের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব। এগুলো বিষয় মাথায় রেখে সরকার কাজ করছে।
টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন বাণিজ্যি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি নতুন প্রতিষ্ঠান। বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এটি নির্দিষ্ট আইনের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। এ কমিশনের জনবল ও সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা আছে। এ কমিশনকে মক্তিশালী করতে সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, এ কমিশন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে স্বপ্রণোদিতভাবে অনেক বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই বাণিজ্য ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে প্রতিযোগিতা কমিশন কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন শক্তিশালী হবে।
মফিজুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বরে ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। মামলাটা আদালতে চলমান। শিগগিরই রায় হবে।


আরো সংবাদ



premium cement