২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

২০ দিনে ঢামেকে দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী

-

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ২০ দিনে প্রায় ১ হাজার ৫০০ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। এর মধ্যে পুরুষ ও মহিলা মিলে ৩৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি নেয়। তাদের অবস্থা অতিরিক্ত খারাপে কারণে। পাশাপাশি শিশুরাও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পর্যাপ্ত না থাকার কারণে রোগী ভর্তি নিচ্ছে না। হাসপাতালে আগত ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও আক্রান্ত হয়ে আসছে। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ নিয়ে গত ২০ দিনে প্রায় ১ হাজার ৫০০ রোগী ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে কারো কারো অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ৩৫ জনকে ভর্তি রাখেন। রোগী ভর্তি রাখার জন্য বিছানা মাত্র ৪০টি। অন্য রোগীদের মিটফোর্ড ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নারে পাঠানো হচ্ছে। যাদের শারীরিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো তাদের কেউ কেউ ঢাকা মেডিক্যালেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা: মোহাম্মদ শাইখ আব্দুল্লাহর সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। তিনি এ প্রতিবেদককে আরো বলেন, দেশে মহামারী করোনাভাইরাসে পাশাপাশি আবার ডেঙ্গু রোগীও প্রতিদিনই বাড়ছে। ঢামেক হাসপাতালে গত ২০ দিনে প্রায় ১ হাজার ৫ ০০ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতালে অতিরিক্ত বিছানা না থাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের পাঠানো হচ্ছে। আবার অনেকেই হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো ঘুরে দেখা যায়, ৩৫ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে শিশু সাতজন, নারী ১১ জন ও পুরুষ ১৭ জন। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত পাপিয়া আক্তার (৯)। তার বাবা আব্দুল করিম জানান, তাদের বাড়ি কদমতলী বড় মসজিদ এলাকায়। আমার মেয়েটা দুই সপ্তাহ জ্বরে ভুগছে। অনেক ওষুধ খাওয়ানো পরও জ্বর কমছে না। পরে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তারা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, মেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা চলছে। তিন বছর বয়সী আকলিমা। তাকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন মা আম্বিয়া বেগম।
তিনি জানান, তাদের বাড়ি কামরাঙ্গীচর জাওল্লাহাটি এলাকায়। শিশুটির বাবা মনির হোসেন রিকশা চালায়। গত ২৯ জুলাই হঠাৎ করে জ্বর আসে আকলিমার। ৩০ জুলাই ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয় তাকে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেয়ের ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর আকলিমাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। তবে ডাক্তার বলে মেয়ে অবস্থা গুরুতর। মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় চিন্তায় দিন কাটছে।
ঢামেক হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সাকিবুল হোসেন (১০) এক শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তার পরিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করছেন।
তার বাবা ঢামেক হাসপাতালের স্টাফ মো: শাহ আলম জানান, তাদের বাসা এলিফ্যান্ট রোডের মেডিক্যাল স্টাফ কোয়ার্টারে। গত ২৭ জুলাই জ্বর আসে সাকিবের। বাসাতেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু থেমে থেমে জ্বর আসায় তার ডেঙ্গু হয়েছে বলে ধারণা করছেন।
তিনি বলেন, সাকিবকে হাসপাতালে নিয়ে আসি এবং ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়। সাকিবের ডেঙ্গু পজিটিভ রিপোর্ট আসে।’
ডেঙ্গুর বিষয় নিয়ে আলাপ হয় বহির্বিভাগের শিশু বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা: রাজেশ মজুমদারের সাথে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালের ওয়ার্ডে সাত শিশু ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে আসা শুরু করেছে। এর মধ্যে সবই ঢাকা থেকে এসেছে। গত সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ জন শিশু পজিটিভ পেয়েছি। এদের মধ্যে যাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ, র্যাশ আছ, রক্তের প্লাটিলেট অনেক কম, ভবিষ্যতে খারাপ হতে পারে। সেই সব শিশুকে ভর্তি দেয়া হচ্ছে।’
‘ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ অনেকেরই জানা, যেমন প্রস্রাব লাল, শরীরে লাল র্যাশ ওঠে, দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত বের হওয়া, পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হওয়া। এমনকি জ্বর আসার সাথে সাথে ডেঙ্গু পরীক্ষা করালে পজেটিভ নাও আসতে পারে। আবার মশা কামড়ানোর তিন থেকে সাত দিন পরেও পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু পজেটিভ আসতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে জ্বর আসার পর নাপার অতিরিক্ত কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। জ্বর কয়েক দিন থাকলে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হবে। একটি নির্দেশনা পেয়েছি, যারা জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসে, সব পরীক্ষার সাথে ডেঙ্গু পরীক্ষাটাও করা দরকার।
ডেঙ্গু পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন যাত্রাবাড়ী দনিয়া এলাকা থেকে রুহুল আমিন (৬০)। তিনি জানান, কুমিল্লা হোমনা উপজেলায় ফ্যামিলি প্ল্যানিং অফিসার। ঢাকার বাসায় থাকাকালীন গত ২৫ জুলাই জ্বর আসে তার। ২৭ জুলাই মুগদা হাসপাতালে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সেদিনই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হই।
ঢাকায় এসে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় প্রকাশ হালদার (৫০) তার বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়। তিনি বাড়িতে কৃষি কাজ করেন। গত ৬ জুলাই গ্রামের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে পড়ে মাথায় আঘাত পান। পরে তাকে ঢাকায় তার বোন জামাই অশোক সরকারের ফার্মগেট গ্রিন রোডের বাসায় নিয়ে আসেন। পরে তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অশোক সরকার জানান, হাসপাতালেই গত ২১ জুলাই হঠাৎ তার জ্বর আসে। পরে ধানমন্ডি গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তার পরীক্ষা করা পর ডেঙ্গুজ্বর ধরা পড়ে। আবার ঢামেকে নিয়ে আসি। আবারো মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা: মোহাম্মদ শাইখ আব্দুল্লাহর কাছে ডেঙ্গু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গু রোগী বেশি পাচ্ছি। হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডগুলো করোনা ইউনিট বানানো হয়েছে। তার জন্য ডেঙ্গু রোগী বেশি ভর্তি রাখা যাচ্ছে না। তবে যেসব রোগীর অবস্থা খারাপ থাকে তাদের ভর্তি দেয়া হচ্ছে। বেশ কয়েকজন রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে অনেক রোগী জ্বর নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসে। এর মধ্যে যাদের সমস্যা বেশি তাদেরই ভর্তি দেয়া হচ্ছে।’
দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৬৪ জন রোগী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো: নাজমুল হক বলেন, আমরা উভয় দিকের রোগীদের সামাল দিতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। হঠাৎ করে আবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগী চাপ বাড়ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement