২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেহাল সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো ব্যবসায়ী

চট্টগ্রামের পিসি রোড উন্নয়নকাজ শেষ হয়নি ৪৪ মাসেও; ব্যয় বাড়ছে ২৬ কোটি টাকা
-

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের লাইফ লাইন খ্যাত পোর্ট কানেকটিং রোড (পিসি রোড)। জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে এলজিইডি ‘সিটি গভর্ন্যান্স প্রকল্পের’ আওতায় সড়কটির উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারের সামান্য বেশি দৈর্ঘ্যরে এই সড়ক উন্নয়নকাজ শেষ হয়নি গত ৪৪ মাসেও। এরই মধ্যে ব্যবসা হারিয়ে পথে বসেছেন সড়কটির দুই পাশের কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। আগের ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করে নতুন করে দরপত্রের মাধ্যমে কাজ শুরুর উদ্যোগ নেয়া হলেও ১৬৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। পাশাপাশি সড়কের দুই ধারের ব্যবসায়ীদের বোবা কান্না আরো দীর্ঘ হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার ও পণ্যবাহী গাড়ি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পরিবহনের জন্য পোর্ট কানেকটিং রোডটি নির্মিত হয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫ হাজার পণ্যবাহী গাড়ি এই সড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা-যাওয়া করে। কিন্তু গত প্রায় চার বছর ধরে সড়কটির নাজুক অবস্থা। এতে এক দিকে গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে, অন্য দিকে অনেক যানবাহন সড়কে বিকল হয়ে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। উদ্ভূত হ১১ পৃ: ৫-এর কলামেপরিস্থিতিতে অনেক যানবাহন বিকল্প রুট বিশেষ করে কদমতলী এবং বন্দরের টোল সড়ক দিয়ে মালামাল পরিবহন করছে। এতে পণ্য পরিবহনে বাড়তি ব্যয় যেমনি গুনতে হচ্ছে, তেমনি অন্য সড়কগুলোতেও চাপ বাড়ছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটির সর্বত্র অসংখ্য খানাখন্দে প্রতিনিয়তই ছোট গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। সড়কটির বেহাল অবস্থায় হালিশহর এলাকার লাখ লাখ মানুষ বছরের পর বছর অনেকটাই অবরুদ্ধ জীবন যাপন করছে। সড়কের এক পাশ একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। আধা ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতেই কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। বিশেষ করে মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদের। আর বর্ষাকাল হলে তো কথাই নেই, সড়ক নয় যেন আস্ত ডোবা, এমন অবস্থা সড়কের একাংশের। আর পানিতে খানাখন্দ নির্ণয় করতে না পেরে অনেক যানবাহনই উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটে প্রায়ই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, লাখ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েও ব্যবসায় টিকতে না পেরে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে দেউলিয়া।
গত রোববার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিমতলা থেকে সাগরিকা মাজার পর্যন্ত সড়কটির বেশির ভাগ অংশে এক পাশের কাজ মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। তবে আরেক পাশের কোথাও মূল কাজ শেষ হলেও সেখানে মাটি, বালু ও পাথরের স্তূপ আবার কোথাও খানাখন্দে ভরা। মোট কথা সড়কটি ব্যবহার উপযোগী নয়। তা ছাড়া সড়কটির এক পাশ দিয়ে একমুখী গাড়ি চলাচলের কথা থাকলেও অপর পাশ চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় ডিভাইডারবিহীন এক পাশের সড়কে উভয়মুখী গাড়ি চলাচল করছে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকে অপেক্ষাকৃত ছোট যানবাহনগুলো। আর বৃষ্টি হলে তো ছোট গাড়িগুলো চলাচলই করতে পারে না বলে স্থানীয়রা জানায়।
সড়কটির সবচেয়ে করুণ দশা তাসফিয়া থেকে সাগরিকা মাজার পর্যন্ত। এই অংশের মধ্যে পড়েছে নয়াবাজার বিশ্বরোড জংশন। স্থানীয় বাসিন্দাদের বৃহৎ অংশ এই জংশনটি ব্যবহার করে মূল নগরে আসেন। সড়কের দুই দিকেই বিশাল গর্ত। বৃষ্টি হলে ডোবায় পরিণত হয় সড়ক। তখন গাড়ি উল্টে যায় কিংবা দুর্ঘটনাও বেড়ে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সড়কটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখভালের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়ব এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সড়কের এই অংশে কলকা সিএনজি স্টেশনের পাশের ১০০০ ফুট সড়ক দ্রুততম সময়ে প্রস্তুত করে লিংক করে দিলেই পুরো সড়কের পূর্ব পাশ সম্পূর্ণ চলাচল উপযোগী হয়ে যাবে।
নয়াবাজার জংশনের ব্যবসায়ী মেসার্স সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন নয়া দিগন্তকে বলেন, গত প্রায় চার বছর ধরে এই সড়কের যেন কোনো অভিভাবক নেই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উন্নয়নকাজ শেষ না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। মানুষের ব্যবসাবাণিজ্য লাটে উঠেছে। তার প্রতিষ্ঠানেরও ব্যবসা অস্বাভাবিক কমে গেছে। সড়কের কাজ দ্রুত শেষ হবে এমন আশায় কোনো রকমে ব্যবসা ধরে রেখেছেন বলে তিনি জানান।
হালিশহর এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী তওহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, কিভাবে যে এখানকার মানুষ দুর্বিষহ এক জীবন যাপন করছে তা বলে বুঝানো যাবে না। ওই এলাকার মানুষের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক করতেও অনেকে কয়েকবারভাবে। তা ছাড়া বৃষ্টির দিনে ধুলাবালু না থাকলেও অন্য সময়ে পুরো এলাকা ধুলায় আচ্ছন্ন থাকে বলে তিনি জানান। তিনি এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত পরিত্রাণ চান।
নতুন ঠিকাদার দিয়ে বর্ধিত ব্যয়ে শুরু হচ্ছে কাজ : এ দিকে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে সড়কটির অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কারণ জাইকা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে টাকা দেবে না এবং সিটি করপোরেশনের নিজস্ব টাকায় কাজ শেষ করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। তাই দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করতে অসমাপ্ত কাজকে তিনটি লটে ভাগ করে দু’টি লটের ঠিকাদার নিয়োগ চূড়ান্ত এবং অপর লটের জন্য যোগ্য ঠিকাদার চূড়ান্ত করে তা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে সিটি করপোরেশন। তবে নতুন রেটে কাজ দেয়ার কারণে অসম্পূর্ণ কাজের ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ২৬ কোটি টাকা। আসছে ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যে কপোরেশন আগাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়ব জানান, নিমতলা থেকে বড়পুল এবং বড়পুল থেকে তাসফিয়া পর্যন্ত সড়কের কাজের দরপত্র মূল্যায়ন হয়ে গেছে। প্রথম লটের কাজ পেয়েছে তাহের ব্রাদার্স এবং দ্বিতীয় লটের কাজ পেয়েছে কাশেম কনস্ট্রাকশন ও হোসাইন অ্যান্ড ব্রাদার্স (জেভি)। এই দুই লটের কাজ শুরু করার জন্য গত কোরবানির ঈদের আগেই ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়। এই দুই লটের প্রধানত কার্পেটিংয়ের কাজ বাকি আছে। রোদ উঠলেই তারা কাজ শুরু করবে।


আরো সংবাদ



premium cement