২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কথিত হাই-সোসাইটিতে মাদকের ছড়াছড়ি

নিজেদের সেবনের চেয়ে বেশি ব্যবহার অতিথি আপ্যায়নে

-

যে বাড়িতে অভিযান সেই বাড়িতেই কেবল মদ আর মদ। শুধু মদ-বিয়ার নয়, নেশাজাতীয় অন্যান্য দ্রব্যেরও সন্ধান মিলছে ওই সব বাড়িতে। এর মধ্যে রাজনৈতিক নেত্রী, নায়িকা, মডেল ও কথিত সোসাইটি গার্লরা রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলেছেন, এসব মাদকদ্রব্যের যতটা না তারা নিজেরা ভোগ করেন; তার চেয়ে বেশি দরকার অতিথি আপ্যায়নে। তাদের এই মদ্যশালার অতিথিরা হলেন কথিত হাই-সোসাইটির রাঘববোয়ালরা। তাদের অনেকেই রাতভর পড়ে থাকেন ওই সব সোসাইটি গার্লদের ঘরবাড়িতে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলেছে, করোনাকালে অনেক অভিজাত হোটেল ও বারে মদ-বিয়ার সাপ্লাই বন্ধ। এ সুযোগে সোসাইটি গার্লরা ঘরে ঘরে মদ্যশালা গড়ে তুলেছে। সেখানে সেবনের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক অন্যান্য আয়োজনও থাকে হাতের নাগালে; যে কারণে কথিত প্রভাবশালী ও ধনাঢ্যরা ওই সব সোসাইটি গার্লদের ডেরাই ভিড় করছে।
অতিসম্প্রতি পুলিশ-র্যাব যে ক’টি অভিযান করেছে তার প্রতিটিতেই উদ্ধার হয়েছে বিপুলসংখ্যক মদ-বিয়ারসহ নানা মাদকদ্রব্য। এসব দামি দামি মদের মজুদ দেখে হতবাক হয়েছেন সাধারণ মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব মদের যতটা না তারা নিজেরা সেবন করতেন; তার চেয়ে অতিথি আপ্যায়নের জন্যই বেশি প্রয়োজন হতো।
গত ২৯ জুলাই রাত ৮টার দিকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। প্রায় সোয়া চার ঘণ্টার অভিযানে ওই বাসা থেকে বিদেশী মদ, বিদেশী মুদ্রা, হরিণ ও ক্যাঙ্গারুর চামড়া, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম ও ওয়াকিটকি সেট উদ্ধার করা হয়। রাত সোয়া ১২টার দিকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র্যাবের সদর দফতরে নেয়া হয়। এরপর রাত ২টার দিকে র্যাবের একটি দল মিরপুরে হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানাধীন জয়যাত্রা টেলিভিশন ও জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন ভবনে অভিযান চালায়। রাতভর ওই অভিযান চলে। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেয়া হয়। আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও টেলিযোগাযোগ আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে। নায়িকা একাকে গ্রেফতার করা হয় গত ৩১ জুলাই রাতে। হাতিরঝিল থানা পুলিশ রামপুরার উলনের বাসা থেকে গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের অভিযোগে একাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ মদ ও ইয়াবাসহ নেশার নানা সরঞ্জাম।
গত রোববার রাতে রাজধানীর বারিধারার ৯ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যসহ ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পিয়াসার ঘর থেকে বিপুল পরিমাণ মদ-বিয়ার, ইয়াবা, সিসাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। পরে পিয়াসার দেয়া তথ্যে আরেক মডেল মরিয়ম আক্তার মৌয়ের রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। তার বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ মদ উদ্ধার করা হয়। এ বাসায় রীতিমতো মদের বার পাওয়া যায়।
পিয়াসা ও মৌ দীর্ঘ দিন ধরেই কথিত হাই-সোসাইটির বালিকা হিসেবে পরিচিত। পিয়াসা আমিন জুয়েলার্সের মালিক দিলদারের ছেলে সাফাতের স্ত্রী ছিলেন। এই সাফাত ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। এ ঘটনার আগেই পিয়াসার সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিয়াসা ও মৌয়ের বাসায় নিয়মিত সমাজের উঁচু স্তরের কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আড্ডা বসত। টাকা ওড়ানোর জন্যই ধনাঢ্য ওই সব ব্যক্তি পিয়াসা ও মৌয়ের কাছে যেতেন। এ তালিকায় দেশের শীর্ষ সারির বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররাও রয়েছেন। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য পিয়াসা ও মৌয়ের বাসায় সব ব্যবস্থাই ছিল। দামি দামি ওই মদ-বিয়ার ওই সব উঁচুস্তরের অতিথিদের আপ্যায়নের জন্যই রাখা ছিল বলে একাধিক সূত্র জানায়।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার একটি বারের ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পিয়াসা ও মৌদের মতো অনেক সোসাইটি গার্লই এখন নিজ নিজ বাড়িতে মিনি বার বসিয়েছে। আগে যারা রাজধানীর বিভিন্ন মদের বারে গিয়ে আসর জমাতেন তারা এখন পিয়াসা-মৌদের আস্তানায় যাচ্ছেন। সেখানে বাড়তি মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা রয়েছে। যেটি সাধারণ বারগুলোতে নেই। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, মডেল পিয়াসা ও মৌ একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা বাসায় বিভিন্ন নামে পার্টি করে মদের আসর বসাত।


আরো সংবাদ



premium cement