১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পেঁপে পাতার ওষুধ ডেঙ্গু রোগীদের দ্রুত সুস্থ করে

-

ইবনে সিনা ন্যাচারাল মেডিসিনের পেঁপে পাতা থেকে তৈরি ওষুধ পেপায়া ক্যাপসুল ডেঙ্গু রোগীদের দ্রুত সুস্থ করে। পেঁপে পাতার নির্যাস বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশেষভাবে সংগ্রহ করে আধুনিক মেশিনে ক্যাপসুল আকারে বাজারজাত করছে কোম্পানিটি।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে প্লাটিলেট কমে যায় এবং এক সময় প্লাটিলেট না বাড়লে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুও হতে পারে। অবশ্য শুধু ডেঙ্গু নয় কেমোথেরাপি দেয়া হলে, বোনম্যারোতে কোনো সমস্যা হলে, লিউকেমিয়া হলেও আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে প্লাটিলেট কমে যায়। পেঁপে পাতার নির্যাস থেকে তৈরি ওষুধ রোগীকে খাওয়ানো হলে দ্রুত দেহে প্লাটিলেট বেড়ে যায় এবং পাঁচ দিনের মধ্যেই প্লাটিলেটের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে আসে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমেস্ট্রি বিভাগ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) বা সায়েন্স ল্যাব এবং সিলেটের নর্থ ইস্ট মেডিক্যাল কলেজে পেঁপে পাতার ওষুধ নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত কেমোথেরাপি দেয়া হয়েছে, এমন ২৮ থেকে ৮০ বছরের ৬০ জন পুরুষ-মহিলা রোগীর (৩০ জন স্টাডি ও ৩০ জন প্লাসিবো কনট্রোল) উপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, পাঁচ দিনের মধ্যে ৮২.১৪ শতাংশ রোগীর প্লাটিলেট কাউন্ট স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এই রোগীদের গড় প্লাটিলেট কাউন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে ৭০.৪৬ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে, চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া কারো মধ্যে ছিল না। আর কেমোথেরাপি নেয়া রোগীদের প্লাটিলেট বৃদ্ধিতে পেঁপে ক্যাপসুল অধিকতর নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
মাল্টিসেন্ট্রিক, ডাবল ব্লাইন্ড, প্লাসিবো কনট্রোলড, রেন্ডোমাইজড, প্রসপেক্টিভ পদ্ধতিতে ৩০০ ডেঙ্গু রোগীর ওপর পেঁপে পাতা থেকে তৈরি ক্যাপসুল প্রয়োগ করে আরেকটি গবেষণা করা হয়। এই ৩০০ জনের মধ্যে দেড় শ’ জন ছিলেন প্লাসিবো কনট্রোল্ড। অবশিষ্ট দেড় শ’ জনকে স্টাডির আওতায় রাখা হয়। এরা সবাই ছিলেন ১৮ থেকে ৬৫ বছরের পুরুষ ও মহিলা। দেখা গেছে, পেপায়া ক্যাপসুল দেয়া হয়েছে এমন ৯৮ শতাংশ রোগীদের প্লাটিলেট কাউন্ট পাঁচ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। পাঁচ দিনের মধ্যে প্লাটিলেট ৫২ হাজার ৫৪৩ থেকে এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৮৬ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। পেপায়া ক্যাপসুল পাওয়া রোগীর ডব্লিউবিসি (হোয়াইট ব্লাড কাউন্ট) ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিভাবে পেপে পাতা থেকে ওষুধ তৈরি করা হয়? এ প্রশ্নের জবাবে ইবনে সিনা ফার্মার সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো: নুরউল্যাহ নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, প্রথমে সতেজ পেঁপে পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেয়া হয়। এরপর মেশিনে ব্লেন্ডিং করে এর উপাদান সংবলিত নির্যাসটুকু নেয়া হয়। এই নির্যাসকে ফ্রিজ ড্রাইং পদ্ধতিতে লায়োফিলাইজ করে পাউডার করা হয় এবং ক্যাপসুলে রূপ দেয়া হয়। তিনি বলেন, শুধু পেঁপে পাতার রস পান করলে একই রেজাল্ট পাওয়া যায় না। আমরা মেশিনের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক উপায়ে নির্যাসটুকু সংগ্রহ করি। এটাকে বলা হয় নন-থার্মাল অ্যাক্সট্র্যাকশন পদ্ধতি। এভাবে সংগ্রহ করা হলে পাতার উপাদানের প্রাকৃতিক গুণাগুণ অক্ষুণœ থাকে।
মো: নুর উল্লাহ আরো বলেন, শুধু প্লাটিলেট বৃদ্ধি নয়, পেপায়া ক্যাপসুল হজমে সহায়তা করে। পাকস্থলী ও কোলনের জ্বালা-পোড়া বন্ধ করে, পেঁপে পাতার আঁশ (ফাইবার) কোষ্ঠ কাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং কোলন পরিষ্কার রাখে। এই ওষুধ যকৃতে ক্লিনজিং এজেন্ট হিসেবেও কাজ করে। এ কারণে সিরোসিস ও জন্ডিস রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধটি ক্ষুধামন্দা দূর করে। নুর উল্লাহ বলেন, পেঁপে পাতায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-এ। এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় ত্বককে উজ্জ্বল করে ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এমনকি এ পাতা ঋতুস্রাবের ব্যথাও কমাতে সাহায্য করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement