২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজবাড়ীতে পদ্মায় ভাঙন হুমকিতে দৌলতদিয়ার শত শত বসতবাড়ি

রাজবাড়ীর পদ্মার ভাঙনে বিলীন স্থাপনা: নয়া দিগন্ত -

রাজবাড়ীর সদর উপজেলার মিজানপুর ও বরাট ইউনিয়নের গোদারবাজার অংশে কংক্রিট দিয়ে নির্মিত সিসি ব্লকের ১৫০ মিটার অংশে ব্যাপক ভাঙনের পর শুক্রবার সকালে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ফেরিঘাট এলাকায় দ্বিতীয় দফায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে নদী তীরবর্তী প্রায় ৩০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে শতশত বসতবাড়ী। ভাঙন আতঙ্কে নদীপার থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে তাদের ঘরবাড়ী।
ভাঙন প্রতিরোধে অনেক আকুতি, মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হলেও কার্যত ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, পদ্মার ভাঙন রোধে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নতুন করে যে ভাঙন শুরু হয়েছে সেই ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হবে। পদ্মা নদী ভাঙন রক্ষার কাজ শেষ হতে না হতেই রাজবাড়ীতে ৩৭৬ কোটি টাকার প্রকল্পে গত দুই দিনে কয়েক দফা ভাঙনে প্রায় আড়াই শত মিটার এলাকার সিসি ব্লক ধসে গিয়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে শহর রক্ষা বাঁধটি এখন হুমকির মুখে রয়েছে। এই বাঁধের ভেতরে রয়েছে কয়েক শত বসতবাড়ি। যাদের বসতভিটে নিশ্চিহ্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে ত্রুটিপূর্ণ নকশার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। তবে আর যাতে ভাঙন না হয় সে বিষয়ে দ্রুত বালুভর্তি দুই হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। অন্য দিকে স্থানীয়দের দাবি নিম্নমানের কাজ হওয়াতে বারবার ভাঙছে।
গত মঙ্গলবার থেকে রাজবাড়ী গোদারবাজার এলাকার এনজিএল ইট ভাটার কাছে প্রায় ১০০ মিটার বাঁধ ধসে যায়। স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার রাতে ওই এলাকার প্রায় ১৫০ মিটার এলাকাজুড়ে ঘূর্ণায়মান স্্েরাতে ব্লকসহ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে রাজবাড়ী শহর রক্ষাবাঁধের ও ভাঙন ঠেকাতে ২০১৮ সালে সাড়ে চার কিলোমিটারে ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ গত মে মাসে শেষ হয়।
গোয়ালন্দ ও বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, পদ্মা নদীর তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতে শুক্রবার সকাল থেকে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে নদী তীরবর্তী প্রায় ৩০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে ফেরিঘাট ও শত শত বসতবাড়ি। ভাঙন আতঙ্কে বহু পরিবার তাদের ঘরবাড়ি নদী পাড় থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ- ভাঙন প্রতিরোধে অনেক আকুতি, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হলেও কার্যত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
সরেজমিনে শুক্রবার সকালে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দেখা যায়, দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ও ১নং ফেরিঘাটের মাঝামাঝি মজিদ শেখের পাড়া এলাকার ৩০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। সকাল সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হওয়া ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে দৌলতদিয়া স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য বাবু মোল্লা, দেলোয়ার প্রামাণিক ও মোকসেদ মুন্সীর বসত ভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে আবুল মণ্ডল, মিলন শেখ, হারুন মুন্সী, টোকন মণ্ডল, উজ্জল মণ্ডল, রেজাউল, চান্দু মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। তারা সবাই বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। ক্ষোভের সাথে ভুক্তভোগী কয়েকজন বলেন, ভাঙন রোধে কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। কয়েক দিন আগে এখানে প্রথম দফার ভাঙনে অর্ধশত পরিবার গৃহহীন হয়। এরপর সেখানে প্রায় কোটি টাকার প্রকল্পে চারটি প্যাকেজে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে গত বুধবার থেকে তাও বন্ধ হয়ে যায়। তারা বলেন, আগে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজ না করার কারণে এখন তার মাশুল দিতে হচ্ছে আমাদের মতো অসহায়দের। আর এখন ফায়দা লুটছে ঠিকাদারসহ কিছু মানুষ।
চান্দু মোল্লা, হানিফ মণ্ডলসহ কয়েকজন বলেন, কয়েক বছর আগে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে ছিল পদ্মা নদী। তখন থেকেই শুনে আসছি ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে ভাঙন শুরু হলে কিছু বালুর বস্তা ফেলা ছাড়া এখানে কোনো কাজই হয়নি। গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: মোস্তফা মুন্সী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আজিজুল হক খান মামুন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: রফিকুল ইসলাম ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মোস্তফা মুন্সী বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই দৌলতদিয়া ঘাট এবং সংলগ্ন এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চলমান ভাঙন প্রতিরোধের কাজও যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে না। এর মাশুল দিচ্ছে এলাকার অসহায় সাধারণ মানুষ। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (গোয়ালন্দ) ইকবাল সরদার দাবি করেন, তারা কাজ বন্ধ রাখেননি। তবে মাঝে দুই দিন লেবার সংখ্যা একটু কম ছিল। ভাঙন প্রতিরোধের কাজ চলমান আছে।
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জে পদ্মার ভাঙনে জমিসহ ৮ বসতঘর বিলীন, আতঙ্কে রয়েছে শতাধিক পরিবার। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাসাইল এলাকাসংলগ্ন পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতে হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ভাঙন শুরু হলে নদীসংলগ্ন কয়েক শ’ মিটার এলাকার জমি ও আটটি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে হুমকিতে রয়েছে স্থানীয় শত শত পরিবারের বসতভিটা, মসজিদ, কবরস্থান, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা স্থাপনা। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতে কয়েক ঘণ্টায় ভাঙন কয়েক শ’ মিটার এলাকায় ছড়িয়ে পরে। এতে একে একে বিলীন হয়ে যায় স্থানীয় চারটি পরিবারের আটটি বসতঘর। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে স্থানীয় আলম শেখের তিনটি, জিয়াসমিন বেগমের একটি, খোরশেদের দু’টি ও নুর মোহাম্মদ দেওয়ানের দু’টি ঘর ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে।
টংগীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন জানান, নদী ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে যাতে আর কোনো পরিবার নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য

সকল