২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভোলাহাটে নির্মাণশ্রমিককে পেটালেন ইউএনও

-

প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভূমিহীনদের গৃহ নির্মাণকালে একাধিক নির্মাণশ্রমিককে পেটালেন ভোলাহাটের ইউএনও সমর কুমার পাল। ভোলাহাট উপজেলার চরধরমপুর বিন্দুপাড়ায় ১০০টি ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার বাড়ি নির্মাণকাজ চলছে। ভুক্তভোগী আহত নির্মাণশ্রমিকেরা অভিযোগ করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পাল। সাথে ছিলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেহেদী ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: কাউসার আলম সরকার, স্থানীয় ভোলাহাট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো: মোয়াজ্জেম হোসেন ভুটু, মো: আফজাল হোসেন হিরো।
বাড়ির নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে কাজের ত্রুটি হয়েছে এমন অভিযোগ এনে নির্মাণ শ্রমিকদের পেটাতে তার বডিগার্ড আনসারদের নির্দেশ দেন ইউএনও। নির্দেশ পেয়ে আনসার সদস্যরা নির্মাণশ্রমিকদের বেধড়ক পেটাতে থাকে। নির্মাণ মিস্ত্রি মো: বল্টু (৫০), মো: আনোয়ার (৩৫), মো: সামাউন, মো: কাবিরুল (৩০), মো: রবিউলকে (৪০) বেধড়ক পেটাতে থাকলে বাকি ৪০-৫০ জন নির্মাণশ্রমিক কাজ ছেড়ে বিভিন্ন দিকে পালিয়ে নিজেদের রক্ষা করেন।
ভুক্তভোগী নির্মাণশ্রমিক মো: বল্টু বলেন, আমরা কাজ করছিলাম। এমন সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সহকারী কমিশনার (ভূমি), পিআইও, মেম্বার পরিদর্শনে গিয়ে কাজের ভুল হয়েছে বলে আমাদের পেটাতে বলেন। আনসাররা আমাদের পাঁচজনকে পেটাতে থাকলে বাকি নির্মাণশ্রমিকেরা বিভিন্ন দিকে পালিয়ে যান। অপর ভুক্তভোগী মো: কাবিরুল বলেন, ইউএনও স্যার কাজের কাছে গিয়ে ভুল ধরে আমাদের পেটাতে বলেন আনসারকে। আনসার সদস্যকে ইউএনও স্যার বলছেন, এক একজনকে মেরে ফেলে দাও, জেলে দিলে বৌ-বাচ্চা কষ্ট পাবে। দু’হাত জোড় করে মাফ চেয়েও আমরা রেহাই পাইনি। আনসার সদস্যের পা ধরতে গেলে তিনি ইউএনও স্যারের পা ধরতে বলেন। পা ধরেও পিটুনি থেকে রক্ষা হয়নি নির্মাণশ্রমিকের।
ভুক্তভোগী নির্মাণশ্রমিক মো: আনোয়ার একই অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগীরা বলেন, আমরা ভোলাহাট সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে বিষয়টি বলেছি। অন্যায়ভাবে মারার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কাজ করবেন না বলে জানান তারা।
নির্মাণশ্রমিকদের বেধড়ক পেটানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিদর্শনকালে সাথে থাকা ভোলাহাট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো: মোয়াজ্জেম হোসেন ভুটু, মো: আফজাল হোসেন হিরো। ভোলাহাট সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইয়াজদানী জর্জ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নির্মাণশ্রমিকেরা আমাকে বলেছেন, এ ঘটনার সমাধান না করা হলে নির্মাণকাজে যোগ দেবেন না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পালকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: রাব্বুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ দিন বাইরে থাকায় বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: জাকিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দফতরে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করলে অভিযোগকারীকে অফিসে ডেকে দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে বিষয়টি ভাইরাল হলে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি দিয়ে মুক্তি দেন। এ দিকে নামোমুশরীভূজা গ্রামের এক নির্মাণশ্রমিককে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তার নিজ অফিসে ডেকে বেধড়ক পেটান। ২৫ জুলাই রাতে নতুন হাজিপাড়া গ্রামে বাল্যবিয়ে অভিযানে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সামনে তার আনসার সদস্য দিয়ে মো: তোফজুল হক (৬৫), মো: গোলাম আজম (৩৯) ও মো: সারোয়ারকে (২১) পেটান।


আরো সংবাদ



premium cement