২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আর্থিক খাতে দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধে গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হবে

বেসরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রেখে মুদ্রানীতি ঘোষণা
-

আর্থিক খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও বিদেশে অর্থপাচার রোধকল্পে গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আনুষ্ঠানিক মুদ্রানীতি ঘোষণার ১৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতিতে এমন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে। এর ব্যাখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবির লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, চলমান করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে সরেজমিন নিরীক্ষা কার্যক্রম অনেকটা শিথিল রয়েছে। এতে প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর কিছু অপব্যবহার হয়েছে, যে জন্য ইতোমধ্যে দেশের গণমাধ্যম ও বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরেজমিন পরিদর্শন/নিরীক্ষা কার্যক্রম কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও প্রযুক্তিনির্ভর অফ-সাইট নিরীক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর টাকা যে উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে তা বাদে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে যাতে ব্যবহৃত হতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নজরদারি বাড়িয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। একই সাথে করোনা পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতির সাথেসাথেই প্রণোদনা প্যাকেজগুলো যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে সরেজমিন নিরীক্ষা কার্যক্রম জোরদারকরণের পাশাপাশি এর ব্যবহার ও ফলাফল বিষয়ে বিশেষ সমীক্ষা পরিচালনার বিষয়টিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।
এ দিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রেখে চলতি অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলমান পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন না করে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় মুদ্রানীতি। প্রসঙ্গত, গত ২০০৬ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুদ্রানীতি ঘোষণা করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রণোদনার অর্থ নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিছু বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ প্রণোদনার অর্থ নিয়ে তা সঠিক কাজে ব্যবহার করেনি। বরং কেউ কেউ কাঁচামাল আমদানির নামে টাকা পাচার করেছেন। কেউবা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। কেউবা জমি কিনেছেন। আবার কেউবা কম সুদের এ ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ পরিশোধ করেছেন। আবার প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে ঋণই পাননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এমন অভিযোগ পাওয়ার পরেই ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। আর যারা ইতোমধ্যে প্রণোদনার অর্থ থেকে ঋণ পাননি, তাদেরকে এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১১ শতাংশ এবং জুন শেষে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ পুনঃনির্ধারণ করা হয়। গত অর্থবছরের মুদ্রানীতিতেও একই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বর শেষে সরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ, এবার তা কমিয়ে ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ করা হয়েছে। আর জুন শেষে গত বছরে যেখানে ছিল ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ, এবার তা কমিয়ে ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
গভর্নর বলেন, ব্যাংকিং খাতে ইতোমধ্যে সৃষ্ট উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য উৎপাদনশীল খাতগুলোর পরিবর্তে অনাকাক্সিক্ষতভাবে অনুৎপাদনশীল খাতগুলোয় ব্যবহৃত হয়ে সার্বিক মূল্য পরিস্থিতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতায় যাতে কোনোরূপ বিঘœ সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সদা সতর্ক রয়েছে। বার্ষিক ভিত্তিতে মুদ্রানীতি সম্বলিত ‘মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট’ প্রকাশিত হলেও দৈনিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখে প্রয়োজনে ‘ওপেন মার্কেট অপারেশন’ পরিচালনার পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থবছরের যেকোনো সময়ই মুদ্রানীতির নীতিগত দিক পরিবর্তন বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই বিবেচিত। তিনি বলেন, মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বিষয়টি আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বক্তব্যের শুরুতে ফজলে কবির বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর খোরশেদ আলমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, খোরশেদ আলম বাংলাদেশ ব্যাংকের পঞ্চম গভর্নর হিসেবে দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। এ ছাড়া চলমান করোনা পরিস্থিতিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১০ জনসহ যে ১৫৩ জন ব্যাংকার মৃত্যুবরণ করেছেন, তিনি তাদেরও রূহের মাগফিরাত কামনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement