১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুনাফার হার সর্বনিম্নে, পড়ে আছে ৬২ হাজার কোটি টাকা

ব্যাংক আমানত ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগের আশঙ্কা
-

করোনাভাইরাসের প্রভাবে ব্যাংকগুলো নতুন কোনো বিনিয়োগে যাচ্ছে না। যেটুকু বিনিয়োগ করা হচ্ছে তা প্রণোদনা কর্মসূচির আওতার মধ্যেই সীমিত রাখছে। এতে ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড় জমে গেছে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতমালা শিথিলতার কারণে গত প্রায় দেড় বছর ব্যাংকগুলো ঋণও আদায় করতে পারেনি। অপর দিকে বাড়তি মুনাফা অর্জনের চাপ রয়েছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর। বাধ্য হয়ে পরিচালন ব্যয় কমিয়ে বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য আমানতকারীদের ওপরই হাত দিচ্ছে বেশির ভাগ ব্যাংক। জুন শেষে আমানতের গড় সুদের হার ৪ দশমিক ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে। দেশের ইতিহাসে আর কখনো আমানতের সুদহার এত নিচে নামেনি। অন্য দিকে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরে ব্যাংকে রাখা টাকার ক্রয়ক্ষমতা যতটুকু কমছে সে পরিমাণ সুদও পাচ্ছেন না আমানতকারী। এতে লোকসানে পড়ছেন তারা। এর ওপরে এক্সসাইজ ডিউটি (আবগারি শুল্ক) ও অন্যান্য চার্জের খড়গ তো আছেই। এমনি পরিস্থিতিতে সাধারণ গ্রাহকের আমানত পুঁজিবাজারসহ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, মূল্যস্ফীতিরে নিচে নেমে আসায় প্রকৃতপক্ষে আমানতকারীরা ব্যাংকে অর্থ রেখে মূলধন হারাচ্ছেন। তারা বাড়তি মুনাফার আশায় ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করলে অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, জুন শেষে আমানতের গড় সুদহার ৪ দশমিক ১৩ শতাংশে নেমে গেছে, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক শূণ্য ২ শতাংশ। যেখানে মূল্যস্ফীতির হার (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) গত এপ্রিলে ছিল ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতেই মূলত আমানতের সুদহার কমিয়ে দিচ্ছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমানতের সুদের হার শুধু নিচে নেমেছে তাই নয়, মূল্যস্ফীতির থেকেও নিচে নেমে গেছে। যা খুবই বিপজ্জনক। এতে আমানতকারীরা ব্যাংকের আমানত রাখার ক্ষেত্রে বিমুখ হবেন। যা ব্যাংকিং খাতের জন্য ভালো নয়। আর মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারালে পুরো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমানতের সুদের হার অনেক কম হলেও তাদের ওখানে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চলে। অর্থনীতি সচল রাখতে বিভিন্ন পথ (টুলস) তারা ব্যবহার করে। কিন্তু আমাদের এখানে সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে এখানে আমানতের সুদের হার কমে গেলে তাতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। এ পরিস্থিতির উন্নতি করতে না পারলে মানুষ বাড়িঘর কেনার মতো খাতে বিনিয়োগ করবে কেউ ব্যাংকে আমানত রাখবে না। এজন্য নতুন নতুন বিনিয়োগের জায়গা খুঁজে বের করার পরামর্শ তাদের।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর কাছে অনেক অলস টাকা পড়ে আছে। বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণও নিচ্ছে না। আবার খেলাপি ঋণও বিশাল। অন্য দিকে সরকারও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ না করে উল্টো ধার শোধ করছে। ব্যাংকগুলোর হাতে গত জুন শেষে অলস অর্থ রয়েছে (আমানতের বিপরীতে বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার বা সিআরআর অতিরিক্ত) ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর উদ্বৃত্ত তহবিল রয়েছে প্রায় পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ব্যয় নির্বাহ করাই কঠিন হয়ে পড়ছে। এত সমস্যার পরও ব্যাংকগুলোকে বছর শেষে মুনাফা অর্জন করতে হবে। ব্যাংকের যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যত বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারে সে এমডি ভালো হিসেবে ধরা হয়। ফলে সবকিছু মেনে নিয়ে বছর শেষে মুনাফা অর্জনই ব্যাংকগুলোর প্রধান লক্ষ্য থাকছে। এতে আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেদিকে খেয়াল করছে না ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতে বর্তমান অবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরো কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। কারণ, ব্যাংকগুলোর ঋণ একদিকে কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। তারা আবার ঋণ পরিশোধ করছেন না। অপর দিকে ব্যাংকগুলো ব্যয় কমাতে আমানতের সুদহার কমিয়ে দিচ্ছে। এতে আমানতকারীরা নিরুপায় হয়ে ব্যাংক থেকে বিমুখ হতে পারে। তাদের কষ্টার্জিত আমানত পুঁজিবাজারসহ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। ফলে অনেকেই পুঁজি হারাবেন। এটা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো ফল বয়ে আনবে না।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, যে হারে আমানতের সুদহার কমছে তাতে আমানতকারীদের অবস্থা খারাপ হবে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারাতে পারেন। অর্থনীতির স্বার্থেই এটা ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
প্রসঙ্গত, করোনার প্রভাবে গত প্রায় দেড় বছর যাবৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা শিথিলের কারণে ব্যাংকগুলোতে ঋণ আদায় ভাটা পড়ে গেছে। নীতিমালায় বলা হয়েছিল, কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলে তাকে খেলাপি করা যাবে না। এ সুযোগ গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ঋণ আদায় পরিস্থিতি তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আবার করোনার প্রভাবে ব্যাংকগুলো নতুন কোনো বিনিয়োগে যাচ্ছে না। যেটুকু বিনিয়োগ করা হচ্ছে তার বেশির ভাগই বিদ্যমান উদ্যোক্তাদের মধ্যে চলতি মূলধনের জোগান দেয়া হচ্ছে। এতে অলস অর্থের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবেই আমানতের সুদহার কমিয়ে দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।


আরো সংবাদ



premium cement
নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে আইসিসি! ঢাকায় কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইসফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’

সকল