২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১৫ মাস ধরে বিমানের ৫ হাজার কর্মীর চিকিৎসাখরচ বন্ধ

-

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট- কেবিন ক্রুসহ পাঁচ হাজারের বেশি কর্মকর্তা- কর্মচারীর চিকিৎসাখরচ প্রায় ১৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। করোনার সময়ে তাদের মাসিক বেতন থেকে টাকা কর্তনের পাশাপাশি চিকিৎসা বিল বন্ধ থাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও অন্যান্য অসুস্থতার পরও অনেকেই অর্থাভাবে হাসপাতালে গিয়ে সঠিক চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তারা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ার পর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত পাইলট কেবিন ক্রুসহ অন্যান্য বিভাগের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন মারাও গেছেন। তবে অফিসিয়ালি কতজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তা জানা সম্ভব হয়নি।
বলাকা ভবন সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে বিমানের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের পাঁচজন কর্মী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে তারা সবাই বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি, নানান পরীক্ষা করাসহ চিকিৎসাবাবদ লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। এখন এই চিকিৎসা বিলের টাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের দেয়ার কথা। কিন্তু আদৌ তারা চিকিৎসার টাকা পাবেন কি না তা নিয়ে তাদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এখন দাবি জানানো হয়েছে, এই ক্রান্তিকালে বিমানের (এসেনসিয়াল সার্ভিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ফ্লাইট চলাচল যেহেতু চালু রয়েছে, তাই কর্তৃপক্ষ যেনো অন্তত তাদের চিকিৎসার খরচের বিলটা দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের সাথে যোগাযোগ করে বক্তব্য নিতে চাইলেও তিনি টেলিফোন ধরেননি। তবে বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসা বিল দেয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি প্রতিবেদককে গত সপ্তাহে বলেছিলেন, আমরা মহামারী করোনা সঙ্কট কাটিয়ে উঠলে ধীরে ধীরে বিমানের এমপ্লয়ি সবার সমস্যাগুলোই সমাধানের চেষ্টা করব। ইতোমধ্যে অনেককে দেয়া শুরু হয়েছে। আর পরিচালনা পর্ষদও এসব ব্যাপারে অনেক আন্তরিক বলে জানান তিনি।
গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের পাইলটদের মেডিক্যাল বিলটাও বিমান কর্তৃপক্ষ দিতে চাচ্ছেন না। অথচ ফ্লাইট চালাতে গিয়েই কিন্তু আমরা এবং আমাদের পরিবার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছি। আমি নিজেও কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। পরবর্তীতে অসুস্থ হওয়ার মেডিক্যাল বিল বিমান অফিসে জমা দিলেও সেগুলো সেখান থেকে ফেরত দেয়া হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে চিকিৎসা বিল প্রদান বন্ধ রয়েছে। মানবিক কারণে মেডিক্যাল বিলটা বিমান ম্যানেজমেন্টের দিয়ে দেয়া উচিত ছিল বলে তিনি মনে করেন।
গতকাল বিমানের একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ককপিট ক্রু, কেবিন ক্রু, অপারেশন, ট্রাফিক, প্রকৌশল বিভাগ, বিএফসিসি, গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট (জিএসি), মোটর ট্রান্সপোর্ট বিভাগ ও অ্যাডমিনসহ সব মিলিয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি কর্মী নিষ্ঠার সাথেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে অদ্যাবধি করোনাভাইরাসে আমাদের শতাধিক কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন মারাও গেছেন। কিন্তু বিমান থেকে চিকিৎসার যে খরচ দেয়া হতো আগে, সেটি বন্ধ করায় নিজের পকেটের টাকা খরচ করে আমাদের এবং পরিবারের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। এতে তাদের লাখ লাখ টাকা হাসপাতালের বিল বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে। এই টাকা বিমান থেকে দেয়ার কথা। এখন আমরা যারা চিকিৎসা বাবদ টাকা খরচ করেছি তারা কী এই টাকাগুলো পাবো কিনা, তা কোনোভাবে জানতে পারছি না। তারপরও আমরা চাচ্ছি আমাদের চিকিৎসার বিলটা যেন দ্রুত দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়। একই সাথে নতুন করে বিমান ম্যানেজমেন্ট যেন চিকিৎসা বিল চালু করেন। তাহলে আমরা আর্থিক সঙ্কট থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবো। এখনো আমাদের বেতন থেকে বিমান ম্যানেজমেন্ট প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে রাখছেন।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, আমাদের চাকরিটা এসেনসিয়াল সার্ভিস বিধায় আমরা লকডাউনের অন্তর্ভুক্ত নই। অর্র্থাৎ ডিউটি একদিনও বাদ দেয়া যাবে না। সেই অর্থে ঝুঁকি নিয়েই আমাদের প্রতিদিন চাকরি করতে হচ্ছে। শুনেছি নতুন করে এক সপ্তাহে ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের ১৭ জনের মধ্যে পাঁচজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা উপায় না পেয়ে এখন বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। নিয়ম হচ্ছে মেডিক্যাল ভাতার বাইরে ডাক্তার দেখানো, টেস্ট, মেডিসিনসহ সব খরচ বিমান কর্তৃপক্ষ দেবেন। করোনার আগে তো সেই নিয়মই ছিল। অথচ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ভয়াবহ সময়ে মেডিক্যাল বিল বন্ধ রাখাটা কতটুকু যৌক্তিক হয়েছে তা কর্তৃপক্ষকে আরো একবার ভেবে দেখার অনুরোধ জানান তারা।


আরো সংবাদ



premium cement