২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দেশে ই-পেমেন্টে লেনদেন বেড়ে দ্বিগুণ

ঢাকায় এক বছরে রাইড শেয়ারিং লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকা

সিপিডির ওয়েবিনার
-

দেশে এক বছরের ব্যবধানে ইলেকট্রনিক পেমেন্টের (ই-পেমেন্ট) পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে যেখানে ই-পেমেন্টের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা, সেখানে গত বছর (২০২০ সালে) তা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। মূলত করোনাকালীন ই-প্ল্যাটফর্মের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় এটি হয়েছে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। তারা বলেছে, আগামী এক বছরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু ঢাকা শহরে রাইড শেয়ারিং করে বছরে লেনদেন দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে এরপরও প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, ডিজিটাল অবকাঠামো ও নীতি পরিবেশকে দেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মনির্ভর অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে হবে।
গতকাল সোমবার ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ইকোনমি’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এবং ফ্রেডরিখ-ইবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস)। সেখানেই মূল প্রবন্ধে এ কথাগুলো বলা হয়। সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বের অনলাইনভিত্তিক শ্রমবাজারের ১৬ শতাংশ এখন বাংলাদেশের দখলে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইনভিত্তিক শ্রম সরবরাহকারী দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশে ২ হাজার ওয়েবভিত্তিক এবং প্রায় পঞ্চাশ হাজার ফেসবুকনির্ভর উদ্যোক্তা রয়েছেন। বিশেষত চলমান কোভিড অতিমারীর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়ের সুযোগ বেড়েছে। আগামী এক বছরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ মাল্টিপল ইন্ডেকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে মাত্র ৫.৬ শতাংশ পরিবারে কম্পিউটার আছে, ইন্টারনেট সংযোগ আছে ৩৭.৬ শতাংশ পরিবারে। ফেসবুক ইউজার সংখ্যা তিন কোটি ৯০ লাখ মানুষ।
রাইড শেয়ারিং মার্কেটে সারা দেশে মাসে লেনদেন ২৬ কোটি ডলার। এতে ৬০ লাখ মানুষ চলাচল করে। শুধু ঢাকা শহরে বছরে লেনদেন ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বলা হয়, ইন্টারনেটের বিস্তার এবং স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তার কারণে যদিও অনেক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) বাজারে আসছে, কিন্তু সেই অ্যাপগুলোর বিষয়ে এখনো কোনো যথাযথ নীতিমালা তৈরি হয়নি। এ ছাড়া গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য অনেক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকেই নিজেদের কৌশলগত পন্থায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং গ্রাহক সেবার গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে। উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এ মূল্যায়নগুলো তুলে ধরা হয়। এ মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মভিত্তিক অর্থনীতি প্রসারের কৌশল হিসেবে বলা হয়, পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা, সময়মতো পরিষেবা সরবরাহ করা, ই-শপের জন্য দক্ষ ইনভেন্টরি পরিচালনা, নমনীয় রিটার্ন পলিসি, সার্বিক স্বচ্ছতা প্রভৃতি বিষয় নিশ্চিত করা জরুরি। এর ফলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মনির্ভর অর্থনীতির বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং সংশ্লিষ্ট নানামুখী চ্যালেঞ্জের ওপরে জোর দিয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং এফইএস বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফেলিক্স কোলবিৎজ সংলাপে সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন। ফাহমিদা খাতুন বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে হলে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়ানো, আর্থিক সুবিধা এবং নীতিমালা তৈরি করে এই খাত থেকে আমরা লাভবান হতে পারব। উদ্যোক্তা ও ভোক্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ফেলিক্স কোলবিৎজ বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মভিত্তিক অর্থনীতি একটি সম্ভাবনাময় খাত। তিনি মনে করেন, প্রভাবশালী স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এ ধরনের গবেষণা ও আলোচনা এই নতুন খাতগুলোর প্রসারের একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, এই খাতে ক্রমাগত প্রযুক্তিগত অভিযোজনের ব্যাপার থাকে, সে কারণে প্রশিক্ষিত ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল অপরিহার্য। এই খাতে বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিংয়ে রেমিট্যান্স নিয়ে আসার বিষয়টিকে সহজ করার জন্য যথেষ্ট নীতি সহায়তা বা পলিসি সাপোর্ট প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) সিনিয়র সহসভাপতি ফারহানা এ রহমান। সংলাপে বক্তব্য রেখে পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুসেইন মো: ইলিয়াস উচ্চমানের প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনবল, নীতিমালা নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ইত্যাদির অভাবকে এই খাতের চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কোয়ালিটি সেনসেটিভ না হয়ে প্রাইস সেনসেটিভ হয়ে যাচ্ছে।
সেবা এক্সওয়াইজেডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ অপারেশনস অফিসার ইলমুল হক সজীব বলেন, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের একটা বড় অংশ রয়েছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে, যাদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ অনেক। তাই ই-কমার্স খাতে ব্যবসায় প্রক্রিয়াকে আরো সহজ ও ব্যবহারবান্ধব করা প্রয়োজন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন অথোরিটির মধ্যে সিনক্রোনাইজেশন এবং পণ্য শোকেসিং বা উপস্থাপনা সুবিধার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
এ ছাড়াও সংলাপে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন গারবেজম্যানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম উদ্দিন শুভ, আইফার্মারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ ইফাজ এবং ডক্টোরোলা লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও পালস হেলথকেয়ার সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মতিন ইমন। তাদের বক্তব্যে একটি রেগুলেটরি বা নিয়ন্ত্রক স্যান্ডবক্স তৈরি, ব্লকচেইন প্রযুক্তি, মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার প্রতিযোগিতা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আবার দেশের অর্থনীতিকে আগামীতে এগিয়ে নেয়া বিশেষ করে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ইকোনমির গুরুত্ব তুলে ধরেন। আর এজন্য বিদ্যমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্মিলিতিভাবে কাজ করতে হবে বলে মত দেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement