২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে

পলাশী ট্র্যাজেডি দিবসের আলোচনায় বক্তারা
-

পলাশী ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, পলাশীর মতো এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং পলাশী থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। গতকাল বুধবার বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পৃথক আলোচনা সভায় নেতারা এ কথা বলেন।
লেবার পার্টি : পলাশীর প্রান্তরের বিশ^াস ঘাতক মীর জাফর ও ঘষেটি বেগমরা বেঁচে না থাকলেও আজ তাদের বংশধর কুশিলবরা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও মানচিত্রকে আধিপত্যবাদীদের পদতলে সমর্পণ করেছে। দেশ এখন আধিপত্যবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেছেন, পলাশী থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশবিরোধী শক্তিকে রুখে দাঁড়াতে হবে। ১৯৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বিশ্বাসঘাতকদের কারণে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল ১৯০ বছরের জন্য। ইস্ট ইন্ডিয়ার ফাঁদে পড়ে বিশ্বাসঘাতক চক্র শুধু দেশের স্বাধীনতাই বিকিয়ে দেয়নি, ভারতে ইংরেজ শাসনের পটভূমিও সৃষ্টি করেছিল। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে সন্ধি ও চুক্তি করলে যে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে পলাশী আমাদের সামনে সেই শিক্ষা হয়ে আছে। বিশ্বাসঘাতকদের প্রতি ক্ষমা যে বিপদ ডেকে আনে, তারও শিক্ষা রয়েছে পলাশী ট্র্যাজেডির মধ্যে।
গতকাল নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ লেবার পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত ২৩ জুন ঐতিহাসিক পলাশী ট্র্যাজেডি দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা দক্ষিণ লেবার পার্টির সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব লায়ন ফারুক রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন, উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম চৌধুরী মিলন, লেবার পার্টির মহিলা সম্পাদিকা নাছিমা নাজনিন সরকার, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা জাকির হোসেন, ছাত্রমিশন সভাপতি সৈয়দ মো: মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
মুসলিম লীগ : ঐতিহাসিক পলাশী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মুসলিম শাসনের অবসান ঘটাতেই হয়েছিল পলাশীর যুদ্ধ। নবাবদের অনুগ্রহ পাওয়া জগৎশেঠ, রাজা রায় দুর্লভ, উমি চাঁদ প্রমুখ হিন্দু সমাজপতি নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে অপসারণ করার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্ণধার লর্ড ক্লাইভের সাথে আঁতাত করেন। নবাব করার জন্য প্রস্তাব দিয়ে তারা মীর জাফর আলী খানকে দলে টানেন। বাংলা থেকে ৫৫৪ বছরের মুসলিম শাসনের অবসান ঘটানোর জন্য বর্ণবাদী হিন্দু নেতারা ইংরেজদের শরণাপন্ন হয়ে সাহায্য কামনা করেন।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল বুধবার বাদ জোহর স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন। ঢাকা দক্ষিণ মহানগর কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো: ওসমান গণির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান বক্তা ছিলেন মুসলিম লীগ মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের। আলোচনায় অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন আবুড়ী, মরতুজা আলী চৌধুরী, সহসভাপতি মো: নজরুল ইসলাম, সাংগাঠনিক সম্পাদক খান আসাদ, প্রচার সম্পাদক আবদুস সবুর, সমাজকল্যাণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: হাবিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব মামুন আর রশিদ ও ছাত্রনেতা মো: নুরুল আলম।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে সংগঠিত যুদ্ধটি ছিল মূলত যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। ৩ জুলাই বাংলার স্বাধীন শাসক নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রকারীরা মুসলিম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ফলে স্বাধীনতা হারিয়ে ১৯০ বছর বাংলা ছিল ব্রিটিশদের শাসনাধীন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: সংগঠনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেছেন, পলাশীর ট্র্যাজেডি আমাদের জাতীয় জীবনে এক ন্যক্কারজনক ঘটনা। দেশীয় গাদ্দারদের বিশ্বাসঘাতকতা, ইংরেজ বেনিয়াদের চক্রান্ত ও জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতার অভাবে ২০০ বছরের জন্য বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। এর মাধ্যমে সোনার বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করা হয়েছে। পলাশীর ঘটনা আমাদের জাতিসত্তার বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র এখনো চলমান আছে। পলাশী থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের জাতিসত্তার বিরুদ্ধে চলমান সব ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে।
গতকাল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে ‘ঐতিহাসিক পলাশী দিবস : শিক্ষা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সংগঠনের সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে এবং জয়েন্ট সেক্রেটারি ডা: শহিদুল ইসলামের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবুল কাশেম, নগর দক্ষিণ সেক্রেটারি আলহাজ আব্দুল আউয়াল মজুমদার প্রমুখ।
জাগপা : পলাশীর মতো এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষনেতা ও জাগপা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান।
গতকাল নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ঐতিহাসিক পলাশী দিবস উপলক্ষে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, জনগণের ভোটাধিকার পদদলিত। এ পরিস্থিতিতে সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তি বাংলাদেশকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। আর শাসকগোষ্ঠী সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতেই দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। লুৎফর রহমান বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে না পারলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় ঐতিহাসিক পলাশীর ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, পতাকা-মানচিত্র, স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষায় সব দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যে গড়ে তুলতে হবে।
সভায় আরো আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাগপা যুগ্ম সম্পাদক ডা: আওলাদ হোসেন শিল্পী, সাইফুল আলম, ঢাকা মহানগর সভাপতি হোসেন মোবারক, যুব জাগপা আহ্বায়ক মীর আমুর হোসেন আমু, সদস্যসচিব মীর মো: ইসহাক, যুব নেতা মাহবুব হোসেন বাবু, মো: শেখ সোহেল প্রমুখ।
জাতীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন : পলাশীর বিপর্যয় তখনই ঘটেছিল যখন অর্থনীতির ওপর থেকে তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে চলে গিয়েছিল। এ মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, পলাশীর ট্র্যাজেডির জন্য যতটা ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি দায়ি ঠিক ততটাই নবাবের কাছের লোকেরাও দায়ী। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্যের নামে এ দেশে প্রবেশ করে অবশেষে দেশের স্বাধীনতা হরণ করেছিল। বাণিজ্যের নামে কেউ যেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে ব্যাপারে বর্তমান সরকারসহ সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সজাগ থাকতে হবে।
গতকাল নয়াপল্টনের যাদু মিয়া মিলনায়তনে ঐতিহাসিক পলাশী দিবসের ২৬৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এব কথা বলেন।
জাতীয় সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সমন্বয়ক সোলায়মান সোহেলের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন এনডিপি মহাসচিব মো: মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ ন্যাপ ভাইস চেয়ারম্যান স্বপন কুমার সাহা, যুগ্ম মহাসচিব এহসানুল হক জসীম, কৃষক মো: মহসীন ভূইয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মতিয়ারা চৌধুরী, সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়কারী সালমা আক্তার, নির্বাহী সদস্য মাহবুবুল আলম, ছাইদুর রহমান, বেলাল হোসেন প্রমুখ।
খুলনা ছাত্রশিবির : ২৬৪ বছর পূর্বে ২৩ জুন পলাশীর আমবাগানে নবাব সিরাজ উদ্দৌলা বনাম ইংরেজিদের যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত নেমেছিল। সে দিন অস্ত নেমেছিল যে স্বাধীনতা, তাকে আবার ফিরে পেতে ২০০ বছরের বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে বাঙালিদের। পলাশী উপলক্ষে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির খুলনা মহানগরের আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী খুলনা মহানগর সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম।
মহানগর সেক্রেটারি আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান নাঈমের সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন আব্দুর রহমান, মুহাইমিনুন ইসলাম, আলি হামজা, আমিরুল ইসলামসহ নেতৃবৃন্দ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বলেন, পলাশীর প্রান্তে নবাবের পরাজয় আমাদের গোটা জাতির জন্য বিরাট বড় শিক্ষা। হতাশাজনক হলেও সত্য, পলাশী যুদ্ধের পরাজয় থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা আজো আমরা কাজে লাগাতে পারিনি।
আমাদেরকে অর্জন করতে হবে জাতীয় ঐক্যের শক্তি। নিজেদের মধ্যে সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ ও ভেদাভেদকে ভুলে দেশের জন্য কাজ করতে হবে আমাদের।
আলোচনার সমাপনীতে সভাপতি বলেন, সদাসর্বদা আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত রাখতে হবে। প্রিয় জন্মভূমিকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন থেকে মুক্ত রাখতে হলে সৎ, যোগ্য ও আদর্শবাদী দেশপ্রেমিক নাগরিক গঠনের লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাহলে আর কখনো পলাশীর পটভূমি রচিত হবে না এ সোনার বাংলায়।


আরো সংবাদ



premium cement