১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লিবিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী শত শত বাংলাদেশী

দুবাই-তিউনেশিয়া হয়ে বডি কন্ট্রাক্টে এখনো লোক যাচ্ছে
-

যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে শত শত বাংলাদেশী বন্দী অবস্থায় অনেকটা মানবেতর দিন যাপন করছেন। ইউরোপের দেশ ইতালিতে পাড়ি জমানোর স্বপ্ন দেখা এসব বাংলাদেশী মূলত সাগর পাড়ি দেয়ার সময় দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকতে থাকতে অনেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দূতাবাসের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মাধ্যমে মাঝে মধ্যে অনেকে মুক্তির পর দেশে ফেরত আসছেন।
এ দিকে আদালতের নির্দেশে দেশটিতে বাংলাদেশী শ্রমিক যাওয়া বন্ধ থাকলেও ‘বডি কন্ট্রাক্টের’ মাধ্যমে দালালদের হাত ধরে দুবাই-তিউনেশিয়া আবার কখনো দুবাই-মিসর হয়ে অনেকেই পাড়ি জমাচ্ছে অজানা গন্তব্যে। মাঝে মধ্যে সাগর পাড়ি দেয়ার সময় ট্রলারডুবিতে সলিল-সমাধির ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি গাদামেস শহরের নিকটবর্তী একটি ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশীদের সর্বশেষ অবস্থা সরেজমিন দেখতে যায় লিবিয়ার ত্রিপোলিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলরের (শ্রম) নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় দূতাবাসের পক্ষ থেকে আটক বাংলাদেশীদের কাউন্সেলিং করা হয়।
গত রোববার দুপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) আসাদুজ্জামান কবীর নয়া দিগন্তকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ৭০০ কিলোমিটার দূরের গাদামেস ডিটেনশন সেন্টারে আমরা গিয়েছিলাম। তাদের সাথে আমরা কথা বলে দেশে ফিরে যাওয়ার অফার দিয়ে এসেছি। তারাও আমাদের প্রস্তাবে দেশে ফিরতে রাজি হয়েছে। ছয় মাস ধরে তারা সেখানে আছে। আইওএমের সহযোগিতায় তাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করব জানিয়ে বলেন, মূলত এসব বাংলাদেশী দুবাই হয়ে বেনগাজি আসে দালালদের মাধ্যমে। এরপর সেখান থেকে ত্রিপোলি হয়ে ১১০ কিলোমিটার দূরের সাগরঘাট দিয়ে ট্রলারে ইতালি পাড়ি দেয়ার আগেই দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। ডিটেনশন ক্যাম্পে বর্তমানে ৭৮ জনের মতো আছেন। যারা আছেন তাদের খাবারের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। তা ছাড়া একজন বাংলাদেশী নার্স আছেন। কেউ অসুস্থ হলে সাথে সাথে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যারা অবৈধ পথে নানাভাবে আসছে তাদের বিষয়ে দূতাবাসের তেমন কিছু করার থাকে না। তারপরও মানবপাচার চক্রের নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত প্রতিবেদন আমরা ঢাকায় পাঠাচ্ছি। পুরো লিবিয়াতে কতগুলো ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে এবং সেখানে কী পরিমাণ বাংলাদেশী আটক আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ দেশে তো ডিটেনশন ক্যাম্পের সংখ্যা অনেক। তবে সেখানে কী পরিমাণ বাংলাদেশী আছে সেটি বলা সম্ভব নয়। কারণ প্রতিনিয়ত লোক বাড়ে ও কমে।
লিবিয়ার ত্রিপোলি দূতাবাস ও স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটি-সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ার জীবনযাত্রা এখনো অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যেই রয়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চল শহরটি এখনো হাফতার খলিফা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্য দিকে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিসহ পশ্চিমাঞ্চল জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক লিবিয়ানদের নিয়ে গঠিত সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
তারা বলছেন, ২০১৫ সাল থেকে লিবিয়ায় বৈধভাবে বাংলাদেশী শ্রমিক আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঢাকা থেকে প্রতিনিয়ত বডি কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে ভিজিট ভিসায় দুবাই, এরপর তিউনেশিয়া হয়ে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চল বেনগাজি আসছে। কিছু দিন অবস্থান করার পর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ত্রিপোলি হয়ে স্বপ্নের ইউরোপের পথে পাড়ি জমাতে তাদেরকে সাগরপথে ট্রলারে তুলে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু লোক যেতে পারলেও পথ্যে অনেকে ধরা পড়ছে। এসব মানুষের শেষমেশ ঠাঁই হয় ডিটেনশন ক্যাম্পে। আবার অনেকে মাফিয়া গ্রুপের হাতে আটক হয়। সেখানেও তারা নির্যাতিত হয়। একপর্যায়ে তাদেরকে মুক্ত করাতে দেশ থেকে স্বজনদের মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে হয়। সর্বশেষ লিবিয়ার গ্যাংস্টার বাহিনীর হাতে মিশকাতে আটক হওয়ার পর একজন লিবিয়ানকে গুলি করে খুন করার ঘটনার জের ধরে ২৬ বাংলাদেশীসহ মোট ৩০ জনকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। লিবিয়ার এই ঘটনা সারা বিশ্বে তোলপাড় হয়। তার পরও থামেনি অবৈধ পথে দেশ থেকে মানবপাচারের ঘটনা। লিবিয়ার বেনগাজির চি?িহ্নত দালালরা এখনো বাংলাদেশ থেকে বডি কন্ট্রাক্টে লোক এনে ইতালিতে পাঠানোর ধান্ধা চালাচ্ছে; তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গোলাম কিবরিয়া হেলাল, ওমর ফারুক, সাবিত আলম তুষার, মাহবুব পাঠান, ফয়সাল, খোরশেদ আলম, খোরশেদ খান, মোস্তফা ও মো: শাকিল খান। এদের কর্মকা সম্পর্কে ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস অবহিত রয়েছে বলে জানা গেছে।
লিবিয়ার স্থানীয় কমিউনিটি-সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, ডিটেনশন ক্যাম্পে বাংলাদেশীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। ক্যাম্প থেকে মুক্তি পেতে তাদেরকে মাথাপিছু দুই লাখ টাকা করে দিতে হয়। নতুবা বন্দিদশা থেকে মুক্তি মেলে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে আইসিসি! ঢাকায় কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইসফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’

সকল