২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

রাজনৈতিক দৃঢ়তা থাকলে পরিবেশ ঠিক রেখে উন্নয়ন সম্ভব

নগর পরিকল্পনাবিদদের সংলাপে অভিমত
-

সুষ্ঠু পরিকল্পনার সাথে রাজনৈতিক দৃঢ়তা থাকলে পরিবেশ-প্রতিবেশকে সমুন্নত রেখে উন্নয়ন কর্মকা পরিচালনা করা সম্ভব।
গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) আয়োজিত ‘বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারে পরিকল্পনা’ শীর্ষক একটি পরিকল্পনা সংলাপে বিশেষজ্ঞরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে অনলাইন প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো: মাকসুদ হাশেম, খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির-উল-জব্বার, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের টাউন প্লানার আজমেরী আশরাফী, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মো: মঈনুল ইসলাম, কক্সবাজার নগর উন্নয়ন অধিদফতরের নগর পরিকল্পনাবিদ নাজিম উদ্দীন, লাকসাম পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, রংপুর সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মো: নজরুল ইসলাম, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ আবু সাঈদ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী অথোরাইজড অফিসার পরিকল্পনাবিদ তামান্না বিনতে রহমান, সিলেট সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ তানভীর রহমান প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সাম্প্রতিককালে মানব সভ্যতার উন্নয়নের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্রমাবনতি সকল প্রাণের অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন, প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার, পরিবেশ সম্পর্কিত অসচেতনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন নগর-গ্রামীণ ও আঞ্চলিক এলাকায় বিপন্ন হচ্ছে প্রাণ-প্রকৃতি এবং ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশকে ধ্বংস করে উন্নয়ন টেকসই হতে পারে না, সুষ্ঠু পরিকল্পনা থাকলে ও রাজনৈতিক দৃঢ়তা থাকলে পরিবেশ-প্রতিবেশকে সমুন্নত রেখে উন্নয়ন কর্মকা পরিচালনা করা সম্ভব। প্রবন্ধে তিনি আরো বলেন, বিআইপির গবেষণায় জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান ধবংসের কারণ বিশ্লেষণের জন্য পরিবেশগত বিপর্যয়ের ১০০টি কেস স্ট্যাডি সমীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে পানি দূষণ (৪২), বায়ুদূষণ (২৯), মাটি দূষণ, বৃক্ষ নিধন (১৭), প্লাস্টিক দূষণ (৮) ও অন্যান্য দূষণ (৮) নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঘটনাগুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে বিআইপির সমীক্ষায় পরিলক্ষিত হয়, পরিবেশ ও প্রতিবেশ দূষণের শতকরা ৭০ ভাগ ঘটনার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতরের দায় আছে, শতকরা ৫০ ভাগ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের দায় পরিলক্ষিত হয়। অনুরূপভাবে এ ধরনের পরিবেশ দূষণের ঘটনা বিশ্লেষণে নগর কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে ৫০%, শিল্প কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ৫০%, বনবিভাগ ৩০%, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ৬০% ও জনগণের উদাসীনতার ৪০% ক্ষেত্রেই দায় রয়েছে।
পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, পরিবেশের প্রতি আমাদের সংবেদনশীল হতে হবে এবং পরিবেশের প্রতি যতœশীল থেকে উন্নয়ন কর্মকা চালাতে হবে। তিনি আরো বলেন, উন্নয়ন সংক্রান্ত সকল নীতিমালায় পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে এবং পরিবেশ নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখেই আমাদের পরিকল্পনা ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
পরিকল্পনা সংলাপে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় বিআইপির পক্ষ থেকে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলোÑ ১.পরিবেশ দূষণ রোধে আবর্জনা সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পুনর্ব্যবহার এবং নিষ্কাশনের সমন্বিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা করা, ২ শিল্প-কারখানায় ইটিপি বা শোধনাগার ব্যবহার না করায় জীববৈচিত্র্য (বায়ু, পানি, শব্দ) ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ছে, ইটিপিবিহীন শিল্প কারখানা বন্ধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া, ৩. ভূমি পরিকল্পনার মাধ্যমে শিল্পকারখানার জন্য জায়গা বরাদ্দ করা, ৪. বাস্তুসংস্থান জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ও উন্নয়নের স্বার্থে প্রদত্ত সব আইন, নীতি অনুসরণ ও প্রয়োগ করা, ৫. পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করা, ৬. সকল প্রকার দূষণ ও পরিবেশ অবক্ষয়মূলক কর্মকা শনাক্তকরণ ও নিয়ন্ত্রণ করা এবং দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা, ৭. নতুন প্রকল্প গ্রহণের আগে পরিবেশের অবক্ষয়মূলক দিকগুলো সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নেয়া ৮. জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, ৯. প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মানুষের চাপ কমিয়ে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সমগ্র বাংলাদেশকে নিয়ে ভৌত পরিকল্পনা করা এবং পরিবেশ-প্রতিবেশকে প্রাধান্য দিয়ে নগর, গ্রামীণ ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল