২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এলজিইডির মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব

বগুড়া পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকায় এখন নেই পৌর সুবিধা

-

বগুড়া পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকায় এখনো গ্রামীণ পরিবেশ। গত ১৫ বছর আগে শহরতলির বিশাল এলাকা পৌরসভা ঘোষণা করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করলেও এসব এলাকার লোকজন আজো পায়নি পুরো শহরের সুবিধা। পৌর কর্তৃপক্ষ বলেছে, সরকারের বিশেষ অর্থ বরাদ্দ না থাকায় নাগরিক সুবিধা পুরোপুরি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। নিজস্ব তহবিল দ্বারা রাস্তা, ড্রেন, লাইটিংসহ অন্যান্য সুবিধা দিতে চেষ্টা করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) পৌর এলাকায় উন্নয়ন কাজ করতে একটি প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে। সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এসব সমস্যা দূর হবে বলে জানিয়েছে এলজিইডি।
পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে বগুড়া পৌরসভার আয়তন প্রায় ১৪ বর্গকিলোমিটার থেকে বৃদ্ধি করে প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটারে উন্নীত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। পৌর এলাকা সম্প্রসারণের আগে সাধারণ ওয়ার্ড ছিল ১২টি। নতুন এলাকা যোগ হওয়ার পর বগুড়া পৌরসভার সাধারণ ওয়ার্ড দাঁড়ায় ২১টিতে, জনসংখ্যা ৯ লাখ এবং ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। পৌর এলাকা সম্প্রসারণের আগে বগুড়া শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৎকালীন ১২টি ওয়ার্ডের আনাচে কানাচে রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। পৌরসভা সম্প্রসারণের পরই বিএনপি জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু ’বছর এবং আওয়ামী লীগ সরকারের একটানা ১৩ বছরে বিশেষ কোনো অর্থ বরাদ্দ মেলেনি। ফলে নতুন এলাকা শহরে অন্তর্ভুক্তির পর তেমন কোনো অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ হয়নি। এ সময় পৌরসভার নিজস্ব তহবিল দ্বারা সামান্য কিছু রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ কাজ হয়েছে। ফলে বিশাল জনগোষ্ঠী আজো তেমন পৌর সেবা পাচ্ছে না। বর্ধিত এলাকায় সড়ক বাতি দেয়া হলেও পাকা রাস্তা বা ড্রেন তেমন একটা নেই। তবে সব সেবা দিতে না পারায় পৌর কর্তৃপক্ষ বর্ধিত এলাকায় পৌরকরও কম ধার্য করে। তাই বিগত ১৫ বছর ধরে সম্প্রসারিত এলাকা ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ২১ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত ৯টি ওয়ার্ডের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পালশা উত্তরপাড়া গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার বেহাল অবস্থা। ওই রাস্তাটি আজো কাঁচা রয়েছে। সেই কর্দমাক্ত রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান, গণমাধ্যম কর্মী ফেরদৌসুর রহমানসহ গ্রামবাসী জানান, আমরা নামেই শহরের বাসিন্দা। এখানে রাস্তার বাতি ছাড়া আর কোনো সুবিধা নেই। কাঁচা রাস্তায় চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে কষ্ট করতে হয়। বৃষ্টি হলে কাদা পানিতে নাস্তানাবুদ হতে হয়। এ ব্যাপারে বারবার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে বলেও কাজ হচ্ছে না। একই রকম অবস্থা সম্প্রসারিত এলাকা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ধরমপুর, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছিলিমপুর, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেতগাড়ী, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের নিশ্চিন্তপুর, বাঁশবাড়িয়ার।
পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, আমার এলাকার অনেক রাস্তা এখনো কাঁচা, আধাপাকা ও খানাখন্দকে ভরা। অনেক জায়গায় ড্রেন নেই। নতুন অর্থ বছরে এসব উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে।
পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-৩ শিরিন আক্তার বলেন, আমার বাসা ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরান বগুড়া এলাকায়। সেখানে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে আমার বাসায় পানি উঠলে দুর্ভোগে পড়তে হয়।
এলজিইডি বগুড়া জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ বলেছেন, পৌর এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ করতে এলজিইডি একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এটি সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে আর পৌর নাগরিকদের সমস্যা হবে না।
বগুড়া পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মো: রেজাউল করিম বাদশাহ বলেন, সমস্যা সম্পর্কে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে লিখিতভাবে জানাতে বলেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দাতা সংস্থা, উন্নয়ন সংস্থাসহ বিভিন্ন মহলে অর্থায়নের জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। তিনি আরো বলেন, সরকারের উচিত জনসংখ্যার ভিত্তিতে উন্নয়ন সহায়তা দেয়া। কারণ প্রথম শ্রেণীর অন্য সকল পৌরসভার মতোই বগুড়া পৌরসভায় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। তাই নিজস্ব তহবিলের দ্বারা সব সমস্যা এক দিনে সমাধান সম্ভব না। সরকারের বিশেষ বরাদ্দ না মেলায় বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া যায় না।


আরো সংবাদ



premium cement