২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ভার্চুয়াল আলোচনায় বিশিষ্টজনরা

সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনা অর্থহীন

-

সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনা একটি নাটক মঞ্চস্থের মতো। বাজেট প্রণয়ন অনেকটা আমলানির্ভর হয়ে গেছে। তাই সংসদে বাজেট আলোচনা অর্থহীন। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ নিয়ে তিন ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা নিছক সংখ্যার খেলা ছাড়া আর কিছু নয়। গতকাল সিপিডি-অক্সফাম-এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লø্যাটফর্ম ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘কোভিডকালীন এই বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের জন্য কী আছে’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, সংসদে বাজেট আলোচনা নাটক মঞ্চস্থের মতো। সংসদে বাজেট নিয়ে প্রতিনিধিত্বশীল আলোচনা হয় না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সামাজিক সুরক্ষার আওতায় অভীষ্ট মানুষেরা বাদ পড়ে যাচ্ছে, অন্যরা ঢুকে পড়েছে। আর কোভিডকালে নতুন গরিব বেড়েছে। নতুন গরিব ও পুরোনো গরিবÑ এই দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান একধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করে। মানুষ কতটা ঝুঁকিতে আছে, সেটিই বড় বিবেচ্য বিষয়।
এ সময় ভার্চুয়ালি উপস্থিত এমপি রাশেদ খান মেননের উদ্দেশে রেহমান সোবহান কিছু প্রশ্ন রাখেন। এর জবাবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বাজেট নাটক কি না, জানি না। একটি স্টেজ থাকে, সেখানে গিয়ে আমরা হাজির হই। তবে বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা অর্থহীন। আলোচনা করতে হয় বলেই করি। ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ থাকলে কী হয়, একটি পয়েন্ট আলোচনা করতেই ১০ মিনিট চলে যায়। প্রান্তিক মানুষের কথা বাজেটে না এলে বাজেট অর্থহীন। তার মতে, বাজেট অনেকটা আমলানির্ভর হয়ে গেছে।
সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও এমপি আলী আশরাফ মনে করেন, তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা করেই বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত। বাজেট আমলানির্ভর হয়ে গেলে তা ভালো লক্ষণ নয়।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, যদি এমন ব্যবস্থা করা হয় যে, করোনার সময় যেসব প্রতিষ্ঠান কোনো কর্মী ছাঁটাই করবে না, তারা আড়াই শতাংশ কর ছাড় পাবে। আর যারা ১০ শতাংশ নতুন কর্মী নিয়োগ দেবে, তাহলে কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সভাপতির বক্তব্যে সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তিন ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। এগুলো হলোÑ বরাদ্দ যা নয় তার চেয়ে বেশি করে বলা; দ্বিতীয়টি হচ্ছে, গরিবদের যে অনুপাতে পাওয়ার কথা, সেই অনুপাতে পাচ্ছে না। আর তৃতীয়টি হচ্ছে, বরাদ্দ যেটি দেয়া হয় সেটি যাদের পাওয়া উচিত, তারা পায় না।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেনÑ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেক মানুষ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের জন্য বেকারভাতা চালু করা প্রয়োজন। আরো বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের বরিশাল শাখার নেত্রী মনীষা চক্রবর্তীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
ভার্চুয়াল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোভিড পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। একই সঙ্গে কোভিড পরিস্থিতিতে সৃষ্ট ‘নতুন দরিদ্রজনগোষ্ঠী’কেও উপেক্ষা করা হয়েছে। পেনশনারদের বিষয়টি বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে জিডিপি’র মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দ বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ, টাকার অঙ্কে বেড়েছে ১১ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাতে ভর্তুকি হিসেবে ছয় হাজার ২৭০ কোটি টাকা (৫২.৬%), পেনশনারদের জন্য তিন হাজার ৬৯০ কোটি টাকা (৩০.৯%) ও সঞ্চয়পত্রের সুদ সহায়তা খাতে ৯৩ কোটি টাকা (০.৮%) ব্যয় হবে। অর্থাৎ বর্ধিত বরাদ্দের ৮৪ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যয় হবে উল্লেখিত তিন খাতে। সে হিসাবে প্রকৃত বরাদ্দ বেড়েছে এক হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা (২.৯%) শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষাবৃত্তি, কাবিখা, টেস্ট রিলিফ ও আশ্রয়ণ প্রকল্প সামাজিক নিরাত্তার এসব উপ খাতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দ কমেছে। অন্য দিকে করোনার মহামারীর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সাত হাজার ৩০০ কোটি টাকা এবং অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার দু’টি তহবিলের কথা বাজেটে বলা হলেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো কর্মসূচি নেই।
মূল প্রবন্ধে আরো বলা হয়, করোনার কারণে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তারা গড়ে ৯৫ দিনের মতো কাজ পাননি। পরে তাদের অনেকেই কাজ পেয়েছেন, তবে আয় কমেছে। এর পরিমাণ গড়ে ১২ শতাংশ। করোনার কারণে সেবা খাতে চাকরি কমেছে। আর কৃষিতে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ জেলার ২৬০০টি খানার ওপর এই জরিপ চালানো হয়।


আরো সংবাদ



premium cement