১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
প্রশাসনের কোনো তৎপরতা নেই

কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় ৭ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ হাস্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে

-

কুষ্টিয়ায় উদ্বেগজনক হারে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার রাত থেকে পৌর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে প্রশাসন। কিন্তু এই কঠোর বিধিনিষেধ পালন হচ্ছে একেবারেই ঢিলেঢালাভাবে। ঘোষণা দিয়ে প্রশাসন মাঠে না থাকায় কেউ মানছেন না এই বিধিনিষেধ। ফলে কঠোর বিধিনিষেধের পুরো বিষয়টিই পৌরবাসীর কাছে হাস্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ দিকে জেলায় বেড়েই চলেছে করোনা সংক্রমণ। বিশেষ করে ঈদের পর থেকে এই সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত জেলায় করোনায় মৃত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৭ জনে। তাদের মধ্যে সদরের বাসিন্দা ৩৫ জন। গত শুক্রবার জেলায় ২০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ৬১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা সংক্রমণের হার ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আক্রান্তের দিক দিয়ে অধিকাংশই কুষ্টিয়া শহর কেন্দ্রিক। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম করোনা সংক্রমণ রোধে শহরের পৌরসভা এলাকায় সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।
এতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আগামী ১৮ জুন পর্যন্ত অধিক সংক্রমিত এলাকা বিবেচনায় পৌরসভা এলাকার সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, দোকান, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। তবে কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে। বিধিনিষেধ চলাকালে পৌরসভা এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। সব পর্যটনস্থল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এমন সামাজিক (বিয়ে, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। জরুরি প্রয়োজনে চলাচলকারী সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। শুধু জরুরি সরকারি নির্মাণকাজ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলমান থাকবে এবং এ সংক্রান্ত পণ্য পরিবহন বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা যেমনÑ কৃষি উপকরণ, খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), সরকারের রাজস্ব আদায়ের সাথে সম্পৃক্ত সব দফতর বা সংস্থাগুলো জরুরি পরিষেবার আওতাভুক্ত হবে এবং তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। আগের মতো শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে।
জানা যায়, কুষ্টিয়ায় করোনা চিকিৎসার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। এতে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে নেই কোনো আইসিইউ শয্যা। করোনা ইউনিটে শয্যা মাত্র ৪১টি। নতুন করে আরো একটি ৩৬ শয্যার ওয়ার্ড প্রস্তত করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে ৬২ জনেরও বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, জেলায় অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ রয়েছে ৭০৬টি। এসব সিলিন্ডারের মধ্যে জেলা পর্যায়ে রয়েছে ৩৪৭টি। ৩৫৯টি রয়েছে বিভিন্ন উপজেলায়। এ ছাড়া অক্সিজেন তৈরির ৪২টি কনসেনট্রেটর রয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের ১০ বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে।
এ দিকে গতকাল ভোর থেকেই পৌর এলাকায় মানুষের চলাচল ছিল স্বাভাবিক। ভোর থেকে কোচিং সেন্টারগুলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস শুরু করে। শহরের সব সড়কেই ছিল রিকশা, অটো রিকশা আর ভ্যানের চলাচল। সারা দিনই ছিল একই চিত্র। ব্যস্ততম মজমপুরগেট এলাকা ছিল অন্য দিনগুলোর মতো। বাস চলাচল ছিল স্বাভাবিক। শহরের দোকানগুলো খুলে শার্টার নামিয়ে ক্রেতা সাধারণকে দোকানের ভেতরে নিয়ে বেচাকেনা হতে থাকে। মানুষের মুখে মাস্ক থাকলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোন বালাই ছিল না। কয়েকটি পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। জেলা প্রশাসনের কয়েকটি টিম ভ্রাম্যমাণ আদালতে মাঠে থাকলেও মানুষের চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে কঠোর বিধিনিষেধের ঘোষণাটি সাধারণ মানুষের কাছে হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement