রংপুর মেডিক্যালে মাকে ভর্তি করাতে গিয়ে মারধরের শিকার ২ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী
- রংপুর অফিস
- ১৩ জুন ২০২১, ০০:০০
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কিডনিজনিত গুরুতর অসুস্থ মাকে ভর্তি করানোর সময় দাবি করা অতিরিক্ত টাকার রসিদ চাওয়ায় রোকেয়া ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছেলেকে হাসপাতালের চতুর্থ ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক মারধরের প্রতিবাদে উত্তাল এখন রংপুর মহানগরী।
গতকাল শনিবার বিকেলে ক্যাম্পাসের সামনে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং নগরীতে জাতীয় ছাত্র সমাজ জেলা ও মহানগর শাখা বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেন কয়েক শ’ শিক্ষার্থী। ঘণ্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওমর ফারুক ছাড়াও শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তুষার কিবরিয়াসহ ছাত্রলীগের বিভিন্নপর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল একটি পরিচিত দালাল সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। এরা টাকা না দিলে লাশও বহন করতে দেয় না। এরই ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত টাকার রসিদ চাওয়ায় হাসপাতালের কর্মচারী উদয়, রাশেদুল ইসলাম লাজু ও আনারুল ইসলামের নেতৃত্বে রোকেয়া ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ছাত্রকে মারধর করেছে। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং হাসপাতালের দালাল সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, এরা চিহ্নিত। এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে তাদের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি যা দুঃখজনক। এছাড়াও তারা আহত দুই শিক্ষার্থীরও সুচিকিৎসা দাবি করেন।
অন্যদিকে একই দাবিতে বিকেলে নগরীর প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে জাতীয় ছাত্র সমাজ রংপুর জেলা ও মহানগর শাখা। এ সময় বক্তব্য রাখেন রংপুর জেলা সভাপতি আরিফুল ইসলাম আরিফ, মহানগর সভাপতি ইয়াসির আরাফাত আসিফ, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ছোট, জেলা সদস্য সচিব আলিউর রহমান সৈকত, যুগ্ম আহ্বায়ক আল আমিন সুমন, শাহ আলম প্রমুখ। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি এবং হাসপাতালটিকে রাহুমুক্ত করার দাবি জানান। নইলে ধারাবাহিক আন্দোলনের হুমকি দেন।
মারধরের শিকার রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রেজওয়ানুল করিম রিয়াদ জানান, আমার মা কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন। মার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আমার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ভাই রাশেদসহ মাকে নিয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাই। এ সময় ভর্তির ৩০ টাকার বদলে দায়িত্বরতরা ১০০ টাকা দাবি করেন। আমি ও আমার ভাই সে জন্য ১০০ টাকার রসিদ দাবি করি। কিন্তু তারা রসিদ না দিয়ে আমাদের সাথে বিতর্কে জড়ায়। একপর্যায়ে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ১৫-১৬ জন স্টাফ আমাকে এবং আমার ভাইকে ব্যাপক মারধর করে। এ সময় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিলে তারা আমাদের গুম করার হুমকি দেয়।
রিয়াদ জানান, আমাদেরকে যারা মারধরে নেতৃত্বে দিয়েছে তাদের মধ্যে উদয় মিয়া রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নওশাদ আলীর ছেলে। তিনিসহ তার সহযোগী রাশিদুল ইসলাম লাজু ও আনারুলের নেতৃত্বে আমাদের হত্যা করার উদ্দেশ্যেই মারধর করেছে। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ ব্যাপারে মেডিক্যালে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই আপেল জানান, ঘটনা শোনার পরপরই পুলিশের সহযোগিতায় ওই শিক্ষার্থীর মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। বিষয়টি থানার বড় অফিসারকে জানিয়েছি। তারা এসে বিষয়টি দেখবেন।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী জানান, ঘটনাটি শোনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার ছবি প্রকাশ হলে তীব্র সমালোচনা তৈরি হয় নগরীজুড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ও মাঠে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি লেখক ড. তুহিন ওয়াদুদ লেখেন, ‘রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিয়াদুল ইসলামকে প্রচুর মারা হয়েছে। তাকে এতটাই মারা হয়েছে যে তারই এখন জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। মায়ের জরুরি চিকিৎসার জন্য সে মাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল। ভর্তিতে ৫০ টাকার বদলে ১০০ টাকা নিয়েছে। শিক্ষার্থী ১০০ টাকার রসিদ চেয়েছিল। এটাই তার অপরাধ। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি সেবা বিভাগে বাড়তি টাকা ছাড়া একজনও সেবা পায় কি না সন্দেহ। ন্যায্য কথার কারণে শিক্ষার্থী মার খেয়েছে। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললেই এই অবস্থা। ফোন করলাম রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ড. রেজাউল করিমকে। তিনি জানালেন রাতেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। অপরাধীদের আগামীকাল শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।
জরুরি বিভাগের এই দুর্বৃত্তদের কথা কে না জানে? তারপরও কেন প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। জরুরি সেবা বিভাগে দুর্বৃত্তদের সিন্ডিকেট সমূলে উৎপাটন করতে হবে। এ রকম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নেট দুনিয়ায় অনেকেই।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: রেজাউল করিম জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা