২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা শিথিল করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

গ্যারান্টি ছাড়াই চিকিৎসাসামগ্রী আমদানি-দায় অগ্রিমের সুযোগ

গ্যারান্টি ছাড়াই চিকিৎসাসামগ্রী আমদানি-দায় অগ্রিমের সুযোগ - ছবি- সংগৃহীত

গ্যারান্টি ছাড়াই জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী আমদানির দায় ৫ লাখ ডলার পর্যন্ত অগ্রিম পরিশোধের সুযোগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে শিল্পের কাঁচামাল, কৃষি যন্ত্রপাতি ও সার আমদানির দায় পরিশোধের মেয়াদ ৬ মাস বাড়িয়ে এক বছর করা হয়েছে। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রার নীতিমালা শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে দেরিতে আমদানির দায় পরিশোধের সুযোগ দেয়ায় একই পণ্যের ব্যয় বেড়ে যাবে। কারণ এতে ব্যবসায়ীদের বৈদেশিক মুদ্রায় বাড়তি ব্যয় গুনতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে কেবল বৈদেশিক ব্যাংকের গ্যারান্টি সাপেক্ষে পণ্য আমদানির অগ্রিম দায় পরিশোধ করা যেতো। যেমন, যুক্তরাজ্য থেকে কোনো পণ্য আমদানির জন্য স্থানীয় আমদানিকারক অগ্রিম মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট দেশের সরবরাহকারীর সাথে চুক্তি করল। এ চুক্তির আওতায় পণ্য দেশে আসার আগেই মূল্য পরিশোধ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালায় এ বিষয়ে শর্ত সাপেক্ষে অনুমোদন দেয়ার বিধান ছিল। আর সেই শর্ত ছিল পণ্য সরবরাহকারীর বিদেশী কোনো ব্যাংকের এ জন্য গ্যারান্টার হতে হবে। অর্থাৎ সরবরাহকারী নির্ধারিত সময়ে কোনো কারণে পণ্য সরবরাহ না করলে সরবরাহকারীর সাথে চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বিদেশী ব্যাংক দেশীয় আমদানিকারকের অগ্রিম মূল্য ফেরত দিতে হবে। এর ফলে কোনো পণ্য আমদানির আগে অগ্রিম দায় পরিশোধ করা হলেও গ্যারান্টি থাকার কারণে ঝুঁকি কম ছিল।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর আমদানি জরুরি হয়ে পড়ে। এদিকে, সরবরাহকারী বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অগ্রিম দায় পরিশোধ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ কারণে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধপত্র ও চিকিৎসাসামগ্রী আমদানির জন্য গ্যারান্টি ছাড়াই ৫ লাখ ডলার পর্যন্ত আমদানি দায় পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রথমে ৬ মাসের জন্য এ সুযোগ দেয়া হয়েছিল। গতকাল এ সুযোগ আরো ৬ মাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এদিকে, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাদের অনেক পণ্য রফতানি করা হয়েছে। কিন্তু বিদেশী ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সময় মতো রফতানি বিল দেশে আসছে না। আবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে স্থানীয় বাজারেও পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। এতে প্রায় প্রতিটি খাতেই শিল্পের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে সামগ্রিক আয় কমে গেছে। এদিকে বিদেশ থেকে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু অর্থের সঙ্কটে অনেকেই আমদানি দায় পরিশোধ করতে পারছে না। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি দায় পরিশোধের সময় প্রথমে ১২০ দিন অর্থাৎ চার মাস থেকে বাড়িয়ে ১৮০ দিন অর্থাৎ ৬ মাস করা হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও অনেকেই অর্থের সংস্থান করতে না পারায় আমদানি দায় পরিশোধ করতে পারছেন না। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পের কাঁচামাল, কৃষি যন্ত্রপাতি ও সার আমদানির দায় পরিশোধের সময় একসাথে ৬ মাস বাড়িয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ এক বছর পর্যন্ত আমদানি দায় পরিশোধের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেরিতে আমদানি দায় পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দেয়ার ফলে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। কারণ, চুক্তি অনুযায়ী বিদেশী সরবরাহকারীদের পণ্যের মূল্য পরিশোধের সময় পার হলেই অতিরিক্ত সুদ গুনতে হয়। জানা গেছে, ৬ মাস সময় বাড়িয়ে দেয়ায় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত সাড়ে তিন শতাংশ থেকে চার শতাংশ সুদ গুনতে হবে। এর ফলে কোনো পণ্যের একক মূল্য ১০০ টাকা হলে চার শতাংশ বাড়তি সুদ যুক্ত হওয়ায় এখন পরিশোধ করতে হবে ১০৪ টাকা। এভাবেই আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। আর আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বেড়ে গেলে সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যও বেড়ে যাবে। এর প্রভাব পড়বে মূল্যস্ফীতিতে। কিন্তু এর পরেও ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নীতিমালা শিথিল করে দেয়া হয়েছে। এ শিথিলতা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত ব্যবস্থা আমদানি-বাণিজ্যে স্বস্তি প্রদান করবে। এতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সমস্যা কটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে বলে তারা মনে করেন।
প্রসঙ্গত চলতি সপ্তাহের শুরুতেই চলমান পরিস্থিতিতে রফতানিকারকদের জন্য সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আমদানিকারদের জন্যও কিছু নীতি সহায়তার সময়সীমা বৃদ্ধি করা হলো।


আরো সংবাদ



premium cement