২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

৬ কিমি রেললাইন তৈরিতে পরামর্শক ব্যয় ৮ কোটি টাকা

পিপিপি ও বিদেশী ঋণের সন্ধান মিলেনি, তাই জিওবিতে; জমি অধিগ্রহণে ৭ পরামর্শকের প্রস্তাবে আপত্তি
-

বিদেশী ঋণের প্রকল্পে অর্থায়নকারীদের শর্তেই পরামর্শক নিয়োগ করতে হয় বলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়ে থাকে। কিন্তু সরকারি অর্থায়নকৃত প্রকল্পেও এখন পরামর্শকের ছড়াছড়ি। এমনকি জমি অধিগ্রহণের জন্য ৭ জন এবং ৬ দশমিক ০৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের জন্য লাগবে ৮ জন পরামর্শক। এখানে প্রতি কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ১ জনেরও বেশি পরামর্শক লাগছে; যা অবাক করেছে পরিকল্পনা কমিশনকে। আর এইসব প্রশ্নবিদ্ধ প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয় দিয়েছে জমি অধিগ্রহণ ও পুবাইল টেক অব পয়েন্ট থেকে ধীরাশ্রম পর্যন্ত নতুন রেললিংক প্রকল্পে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, গাজীপুরের ধীরাশ্রমে নতুন করে একটি ইন্টার্নাল কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। কারণ বর্তমানে দেশের আইসিডিগুলোতে ধারণক্ষমতা কমে গেছে। রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন আইসিডির ধারণক্ষমতা ৯০ হাজার টিইইউএস। চট্টগ্রাম বন্দরের ৭০ শতাংশ কনটেইনার ঢাকা অভিমুখে পরিবহন করা হয়। এর মাত্র ১০ শতাংশ রেলপথে পরিবহন করা হয়। তবে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে রেলওয়ে কনটেইনার পরিবহন ৩০ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় অতি শিগগিরই কমলাপুর আইসিডির ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে। তদুপরি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাল্টি মোডাল ট্রানজিট হাবের আওতায় হাইস্পিড ট্রেনের ইয়ার্ড, প্লাটফর্ম ইত্যাদি নির্মাণের লক্ষ্যে বিদ্যমান কমলাপুর আইসিডির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কমলাপুর আইসিডির কার্যক্রম স্থানান্তরের প্রয়োজন হবে। এ জন্য গাজীপুরের ধীরাশ্রমে নতুন একটি আইসিডি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ধীরাশ্রমে আইসিডি নির্মিত হলে ঢাকা প্রবেশ না করেই কনটেইনার বহনকারী ট্রেন চলাচল করতে পারবে। পাশাপাশি ভারত, নেপাল ও ভুটানের সাথে ট্রানজিট চালু হলে এই আইসিডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পুবাইল টেক অব পয়েন্ট থেকে ধীরাশ্রম পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণে ৩ হাজার ৪৭৩ কোটি ৪৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা প্রাক্কলিত খরচে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এই রেললাইন নির্মাণে সময় প্রস্তাব করা হয়েছে ২ বছর ৯ মাস। প্রকল্পের মূল কাজগুলো হলোÑ ২২২ দশমিক ৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ, পুবাইল টেক অব পয়েন্ট থেকে ধীরাশ্রম পর্যন্ত ৬ দশমিক ০৯ কিলোমিটার সম্পূর্ণ নতুন রেললাইন নির্মাণ, ২টি বি শ্রেণীর এবং ৫টি সি শ্রেণীর লেভেল ক্রসিং গেট নির্মাণ, পূর্ত কাজ, সুপারভিশনের জন্য ৮ জন পরামর্শক এবং জমি অধিগ্রহণের জন্য ৭ জন পরামর্শক নিয়োগ এবং যানবাহনের জ্বালানি, ক্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ, আসবাবপত্র ও অফিস ইত্যাদি। প্রস্তাবনার খরচ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৬ দশমিক ০৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে খরচ হবে ২ হাজার ৯১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ফলে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে ৪৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের জন্য ২২২ দশমিক ৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এই জমি অধিগ্রহণে ৭ জন পরামর্শক লাগবে। তাদের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৪০ লাখ ৩ হাজার টাকা। প্রতি মাসে ভূমি অধিগ্রহণে পরামর্শক খরচ ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। আর প্রকল্পের সুপারভিশন কাজে লাগবে ৮ জন পরামর্শক। ২২ মাসের জন্য তাদের পেছনে খরচ ৭ কোটি ৮০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এখানে প্রতি মাসে খরচ হবে ৩৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা।
খরচের খাতে দেখা যায়, প্রস্তাবনায় যানবাহনের ফি বাবদ ৫ লাখ টাকা, জ্বালানি বাবদ ৩০ লাখ টাকা, নিবন্ধন ফি, ডিওই ক্লিয়ারেন্স বাবদ ২৫ লাখ টাকা এবং বীমা বাবদ ৫ লাখ টাকা সংস্থান রাখা হয়েছে। অথচ প্রকল্পে গাড়ি কেনার কোনো খাত নেই।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, জমি অধিগ্রহণে ৭ জন পরামর্শক বাবদ ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই পরামর্শক থাকবে। জমি অধিগ্রহণের জন্য পরামর্শকের প্রয়োজনীয়তা বোধগম্য নয় পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। কারণ এই কাজটি বাংলাদেশ রেলওয়ে করতে পারে। আর সুপারভিশন পরামর্শক খাতে ৭ কোটি ৮০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রস্তাবের যৌক্তিকতা খুঁজছে কমিশন। জমি অধিগ্রহণের জন্য ৭ জনসহ মোট ১৫ জন পরামর্শকের ব্যাপারে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো: মামুন আল রশীদের সাথে গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে কথা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে আমরা সামনে মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করব। তখন এসব বিষয়ে আমরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করব। ঈদের পরে হয়তো মিটিংয়ের দিন দেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement